কেষ্ট মণ্ডল জেলে ঠিকঠাক মতো হাগতে পারছেন না। কারণ হাগা-ঘরে কমোড নেই। আপনি নিশ্চয়ই তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন। কারণ কেষ্টর ফিসচুলার সমস্যা আছে। নানা রোগে ৩৭ রকম ওষুধ খেতে হয়।
টেনশনকে পেনশন দিয়ে দিন। আসানসোল জেলের সুপার কৃপাময় নন্দী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, কেষ্ট মোটেই তাঁদের কৃপা থেকে বঞ্চিত নন। সংশোধনাগারে (জেলের আধুনিক নাম) কমোড রয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছে, ওই কমোডওয়ালা শৌচাগারই ব্যবহার করছেন কেষ্ট।
শুনেছেন তো, কেষ্ট পাঁঠার মাংসভাত খেয়েছেন।
রিলিফ বোধ করছেন নিশ্চয়ই!
কোনও চিন্তা নেই। জেলে বেড পেয়েছেন কেষ্ট। ফ্যানও আছে। প্রথম দিন জেলে পৌঁছে বিকেলে অল্প মুড়ি আর চা খান। তিনটি রুটি আর কুমড়ো আলুর সবজি দিয়েই ডিনার সেরেছেন। শুনলে খুশি হবেন, কেষ্ট তরকারি চেয়ে খেয়েছেন।
প্রতি বছর কৌশিকী অমাবস্যায় তৃণমূলের জেলা দফতরে লাখ লাখ টাকার সোনার গয়না পরিয়ে কালী পুজো করতেন। এবার জেলেই পুজো করেছেন। কী দিয়ে? নকুলদানা।
কেষ্ট মণ্ডলের ওজন কমেছে। কতোটা? একদল বলছে, ১৫ দিনে ৩ কেজি ওজন কমে হয়েছে ১০৯ কেজি ৯০০ গ্রাম৷ তা শুনে কেষ্ট অবাক হয়ে বলেন, 'আমার তো ১২০ কেজি ছিল। তাহলে কমে গিয়েছে।' বিতর্কিত হলেই তো সেলিব্রিটি হয়, তাই না?
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ৩ কেজি ওজন ঝরে হয়েছে ১০৮ কেজি। জানেন নিশ্চয়ই, জেলে প্রথম রাতে মেঝেতে দুটো কম্বল পেতে শুয়েছিলেন পার্থ। এখন আর হুইল চেয়ারে না ঘুরে খানিকটা হাঁটাচলাও করছেন।
ইডি জেরা করতে গিয়ে দেখেছে, পার্থ সপ্রতিভ আছেন।
নেতারা সব ভালই আছেন। যাক বাবা, নিশ্চিন্ত! কী বলেন?
আদালতে যেতে আসতে নানা কথা বলছেন পার্থ। হয়তো তাই, এবার সশরীরে আদালতে হাজির না করে ভার্চুয়ালি শুনানিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানায় প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। কী ভাবছেন? কথা যাতে না শুনতে পায় সেজন্য পুলিশের সেই গাড়ি বাজানোর কথা? শঠে শাঠ্যং?
এসব নিয়েই আছে বাংলা মিডিয়া। রীতিমতো সিরিয়ালের উত্তেজনা। তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়াল দেখার লোক কমছে। খবর দেখার লোক বাড়ছে। রোজকার জীবনেই যা সিরিয়াল দেখা যাচ্ছে, তাতে বানানো সিরিয়াল দেখার দরকার কী?
মিডিয়া দেখাচ্ছে। পাবলিক গিলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মজাচ্ছে (মানে মজা করছে)।
ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, সত্যি কি এই দুর্নীতি মজার ব্যাপার? মন্ত্রী-নেতা তো বটেই উপাচার্য, কলেজের প্রিন্সাপালরাও জড়িয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যের মানসম্মান আরও গোল্লায় যাচ্ছে। সেই ঘৃণা তৈরি হচ্ছে নাকি শুধুই ভোটের অঙ্ক?
ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, মিডিয়া যা দেখাচ্ছে এর কোনওটার সঙ্গে আমাদের জীবনের কোনও যোগাযোগ আছে? আমাদের রোজকার জীবনের সমস্যার কোনও যোগাযোগ আছে? পাড়ায় পাড়ায় কত কেষ্ট মণ্ডল এবং তাদের শাখা প্রশাখা ছড়ানো সম্পত্তি। 'গরীব পার্টি' তৃণমূল সত্যিই কতটা গরীব, সেটা তো তাদের প্রচারের রংচং দেখলেই বোঝা যায়।
সেসবই ইনিয়ে বিনিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। তার সঙ্গে আছে বিভিন্ন পার্টির নেতাদের কথা। চুরিকে জাস্টিফাই করার কী চেষ্টা।
-আমি চুরি করেছি বলছ? তুমি কি করেছ ভাই?
কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক। দুর্নীতির এই চক্করের বাইরে কোনও দলই নেই। থাকা সম্ভব নয়। মুনাফা বাড়ানোই যে ব্যবস্থার উদ্দেশ্য, তাতে গোয়ালা দুধে জল মেশাবেনই, মাছওয়ালা কানকো রং করে লাল বানাবেন, ব্যবসার নামে লোক ঠকাবেন পাড়ার মুদির দোকানি থেকে গৌতম আদানি। জানি না, আমার কথাটা ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারলাম কিনা।
লালুপ্রসাদ, এ রাজা, কানিমোঝির জেলের পরও আরজেডি-ডিএমকে ক্ষমতায়। তাই দুর্নীতিকে রাজনীতির মূল ইস্যু করা হলে বুঝতে হবে অন্য কোনও মতলব আছে। সেজন্য মিডিয়া হাতে রাখাটা খুব জরুরি। কারণ মিডিয়া জনমানসে একটা ধারণা তৈরি করে, ইংরেজিতে যাকে বলে PERCEPTION। রাজনীতিতে খুব জরুরি জিনিস এই PERCEPTION।
হলদিয়া পেট্রোকেম উদ্বোধন |
জ্যোতি বসুকে আমি ভগবান মনে করি না। তিনি রক্তমাংসের মানুষ। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে মিডিয়া কী ধারণা তৈরি করেছে? তাঁর আমলে শিল্পায়ন হয়নি। তাঁর জন্যই রাজ্য ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। চেষ্টা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পারেননি। বাস্তবটা কি? বিস্তারিত এখানে লিখছি না। আগে লিখেছি।লিংকগুলো দিলাম। চাইলে পড়ে নিতে পারেন। ছোট করে বললে, বিধানচন্দ্র রায়ের জমানা থেকেই রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার পালা শুরু হয়েছিল।
ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে দেখেছি, হলদিয়া পেট্রোকেম গড়ার অনুমতি দেয়নি কেন্দ্র। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার টাকা দেয়নি। আন্দোলন হয়েছে। ওই প্রকল্পগুলো তো রাজ্যের জন্য দরকার ছিল। কিন্তু বরাবর মিডিয়া থেকেছে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে। তখন জ্যোতিবাবুরা বলতেন, মিডিয়া যদি আমাদের প্রশংসা করে তাহলে ভেবে দেখতে হবে আমাদের কোনও ভুল আছে কিনা। মিডিয়াকে কারা নিয়ন্ত্রণ করে? তারা বামশক্তির অগ্রগতি চাইতে পারে?
দুই মুখ্যমন্ত্রী |
২০০১ সালের পর থেকে অবশ্য ছবিটা পাল্টে যেতে থাকে। ক্রমাগত রাজ্য সরকারের শিল্পায়নের উদ্যোগের পক্ষেই থেকেছে রজ্যের মূল ধারার মিডিয়া। বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, আগে বামফ্রন্ট সরকার কিছুই করেনি। শিল্পায়নের চেষ্টা শুরু করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাধা দিচ্ছে বিরোধীরা। বাধা দিচ্ছে সিপিএমের একাংশ। ব্র্যান্ড বুদ্ধ। নেতাদের ভাবনার গড়নও পাল্টে গেছে। মিডিয়ায় খবর হওয়ার ঝোঁক বেড়েছে। সবচেয়ে বড় বাংলা মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর নিয়ে রোজ সকালে মালিকের সঙ্গে শাসক দলের শীর্ষ নেতার দীর্ঘ কথা হত। পেছনের পা-কে অস্বীকার করে সামনে পা ফেলতে গেলে কী হয়? তাই তো হয়েছে।
মিডিয়া খবর দেয়। তার চেয়েও বড় কথা, মিডিয়া জনমানসে একটা ধারণা তৈরি করে। রাজীব গান্ধী দুর্নীতিগ্রস্ত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর পার্টির বাধায় কাজ করতে পারেননি, নরেন্দ্র মোদী দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সব কিছু বেসরকারি করে দিলেই আমাদের ভালো...এরকম নানা ধারণা। তার কোনওটা ঠিক, কোনওটা ভুল।
মিডিয়া আগে খবর দিত। কিন্তু আজকের জমানায় খবর একটি পণ্য। ফলে টাকায় সব হয়। আর শাসক মিডিয়াকে নিজের খপ্পড়ে রাখতে চায়। দুয়ে দুয়ে চার করলে সব পরিষ্কার। রাজ্যে বা দেশে, মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতি চলছে তো চলছেই। এখন তা ক্রমশ ভয়ংকর বিপজ্জনক চেহারা নিচ্ছে।
কুণাল ঘোষ ও অভিষেক ব্যানার্জি |
সুদীপ্ত সেন কলকাতা ছেড়ে পালানোর পরে মমতা ব্যানার্জির বাড়ির ঠিকানা থেকেই সারদার মিডিয়া চালানোর জন্য টাকা গিয়েছে। ওই টাকা মুখ্যমন্ত্রীর নয়। কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগে সুদীপ্ত সেনই বিপুল টাকা সেখানে রেখে গিয়েছিলেন।
মমতা সচেতনভাবে সারদা মিডিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন।
মমতা ব্যানার্জির কাছাকাছি থেকেও তাঁর অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই কতটা কঠিন এবং চাপের, বাইরে থেকে বোঝা যাবে না।
সারদা মিডিয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সুবিধা যদি কারও কাছে পৌঁছে গিয়ে থাকে, তবে তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
কুণালদা কোন পার্টি করবেন, তৃণমূল কাকে নেবে না নেবে, সেটা একদমই তাদের ব্যাপার। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, সেটা কুণালদাকে করাও উচিত, তিনি সেদিন মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে যা বলেছিলেন, সিবিআইকে লিখিত ভাবে যা যা জানিয়েছিলেন, সেগুলো সত্য না মিথ্যা? আজকের মিডিয়া সেই প্রশ্ন করে না। সেই সাহস নেই? নাহ্। সেই অধিকার নেই।
উদাহরণটা রাজ্যের দিলাম। কিন্তু ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেশজুড়ে। বরং দেশেই তার আক্রমণ বেশি তীক্ষ্ণ। দুঃখের হলেও সত্যি, মিডিয়া হাউসগুলোর মতো অসংখ্য সাংবাদিকও নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অর্থনীতির সংকট যত তীব্র হয়, জনজীবনে সঙ্কটও তত তীব্র হয়। ততই শাসকের সঙ্কটও বাড়ে। ততই মিডিয়াকে হাতের মুঠোয় নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ততই মিডিয়ারও মানুষের আসল সমস্যাগুলোর বাইরের বিষয় নিয়ে উন্মাদনা তৈরির প্রবণতা বাড়ে। তাই কেষ্টর কমোড এবং...।
মোদীর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন। সব প্রশ্নের জবাব দেন অমিত শাহ |
এর বাইরেও বিজেপি ও সংঘ পরিবারের নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাই সব মিডিয়াকে তার কথায় উঠতে বসতে হবে। টাকার জোরে দখল নিতে হবে। কারা টাকা জোগাবে? NDTV নিয়ে যা হচ্ছে, তারপর আর সেটা আলাদা করে বলার দরকার নেই। তারপর নিয়ন্ত্রক হিসেবে আস্থাভাজন কাউকে বসানো হবে। নীতি নির্ধারণের জায়গায় ভিন্ন মতের যে সব সংবাদকর্মী থাকবেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে। মিডিয়ার সম্পূর্ণ দখল চাই।
আমাদের রাজ্যে প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নে আর প্রেস কর্নার নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রী মিডিয়ার সামনাসামনি হন, নিজের বা মিডিয়ার ইচ্ছেয়। প্রধানমন্ত্রী সেটাও হন না। কখনও কোনও মিডিয়াকে পছন্দমত ডেকে নেন। আগে থেকে তাঁদের প্রশ্ন দেখিয়ে নিতে হয়। অপছন্দের কোনও প্রশ্ন করা যায় না।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং ভাল বলেছেন। 'আমাকে সবাই নীরব প্রধানমন্ত্রী বলে। কিন্তু মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান এরকম প্রধানমন্ত্রী আমি ছিলাম না।'
নরেন্দ্র মোদীকে কে বলবে, তিনি যা করছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা করা যায় না? কার ঘাড়ে কটা মাথা!
তারপরও কোনও মিডিয়া বা সাংবাদিক বশ না হলে? ইডি, আয়কর তল্লাশি, মারধর, UAPA সহ বিভিন্ন করা আইনে জেলে পাঠানো। উদাহরণ দিয়ে লেখা বড় করতে চাইছি না। লেখার শেষে কয়েকটি লিংক দিচ্ছি। উৎসাহীরা পড়তে পারেন।
সাংবাদিক কাপ্পান গ্রেফতার, কাপ্পানের স্ত্রী কী বললেন, কাপ্পানের মেয়ের আর্তি |
আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টারস উইদআউট বর্ডার (Reporters Without Boarders) প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মিডিয়ার স্বাধীনতার নিরিখে দুনিয়ার ১৮০ দেশের মধ্যে ভারত ১৫০ নম্বরে। গত বছর ছিল ১৪২ নম্বরে।
শুধু মিডিয়াই নয়, গণতন্ত্রের চার স্তম্ভকেই (আইনসভা, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যম) কার্যত পুরোপুরি কব্জায় নিয়ে এসেছে সংঘ পরিবার। চলছে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার পালা। আসলে সমস্ত বিরোধিতাকে দুরমুশ করাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র।
যাক সেসব কথা। বাম জমানায় দুর্নীতি ছিল। ভাল মাত্রাতেই ছিল। সিপিএমের বিভিন্ন সম্মেলনের মিনিটস দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন। একসময় দলীয় সহকর্মীদের বিরুদ্ধে নথি সহ দুর্নীতির অভিযোগ যাঁরা করেছেন, তাঁরাই এখন বলছেন, বাম জমান ছিল দুর্নীতিমুক্ত। অবশ্যই তৃণমূল জমানার মতো এরকম সার্বিক ও খুল্লামখুল্লা চেহারায় তা ছিল না।
তার মানে কি এটা বলতে চাইছি যে বামেরা করেছে তো তৃণমূল করতেই পারে? একদমই তা নয়। অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারি ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে রাশ টেনে বাজেট বরাদ্দ তিন গুণ করে ফেলেছে। আমার একটাই কথা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই লড়তে হবে কিন্তু ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সেটা এখন ইস্যু হতে পারে না। ইস্যু দারিদ্র, বেকারি, অশিক্ষা, জাত ধর্মের নামে হিংসা বিদ্বেষ, মহিলা-দলিত-আদিবাসীদের নিরাপত্তা, নিজের মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা, গণতন্ত্রের সব স্তম্ভগুলোকে রক্ষা করা, সংবিধানকে রক্ষা করা।
খারাপ লাগে। তৃণমূলের নীচু তলা দ্বিধাগ্রস্ত, ঘরে ঢুকে আছে। এই সময় অধিকারের লড়াইকে সামনে রেখে তৃণমূলের খপ্পর থেকে গরীব লোককে বের করে আনা যায়। কিন্তু সরকারি বামেরা সে কথা ভাবতেই ভুলে গেছে। বিজেপির স্লোগানই তাঁদের মুখে। নিজেদের ভুল স্বীকারের কোনও ইচ্ছেই নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি যা পর্যালোচনা করে তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে এগোয় রাজ্য শাখা। তারচেয়েও বড় কথা বোধহয়, মানুষ তাদের ভরসাই করেন না। অতীত এখনও ভুলতে পারেননি দ্রুত ভুলে যেতে পারা পাবলিকও।
নিজেদের বেশ দূর্নীতিমুক্ত সাধুপুরুষ হিসেবে দেখাতে চায় বিজেপি। তারাই এখানে দুর্নীতি নিয়ে হইচই পাকিয়ে কেল্লা ফতে করতে চাইছে।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক দলগুলির চাঁদার হিসেবনিকেশে স্বচ্ছতা আনার কথা বলছেন।
ADR (Association for Democratic Reforms)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০০৪-০৫ থেকে ২০২০-২১, এই ১৬ বছরে জাতীয় স্তরে স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির (বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপি, সিপিএম, সিপিআই, বিএসপি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় এনপিপি (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) তহবিলে অজানা উৎস থেকে ১৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকা চাঁদা জমা পড়েছে (মোট চাঁদার প্রায় ৭০%)! এ ব্যাপারে এক নম্বরে মোদীর দল বিজেপি। বাকিরা অনেক অনেক দূরে।২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলির ‘ভুতুড়ে’ চাঁদা ছিল প্রায় ৩,৩৭৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধু বিজেপির তহবিলেই এসেছে প্রায় ২,৬৪০ কোটি (মোট অজানা চাঁদার ৭৮ শতাংশেরও বেশি)! কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা ৫২৬ কোটি (১৫ শতাংশের কিছু বেশি)। রিপোর্ট বলছে, গত দেড় দশকে অন্য দলগুলি সম্মিলিত ভাবে অজানা উৎস থেকে যে চাঁদা পেয়েছে, বিজেপি একাই পেয়েছে তার তিন গুণেরও বেশি!
কারা দিয়েছে ওই টাকা? কিসের বিনিময়ে?
কেউ জানে না, কেউ জানে না, মন জানে। সেই 'মন কী বাত' শোনা যাবে কখনও?
তারাই চেঁচাচ্ছে চোর চোর বলে। মিডিয়াও তাই কেষ্টর কমোড নিয়েই ব্যস্ত।
কিভাবে তৈরি হবে প্রতিরোধ? কিভাবে তৈরি হবে সংঘ পরিবারের বিকল্প ভাষ্য?
কংগ্রেসের সেই কাজ করার শক্তিই নেই। একের পর এক নেতা পার্টি ছাড়ছেন। হাল ধরার মতো কোনও নেতা নেই। কোনও আঞ্চলিক দলের পক্ষেও কাজটা করা সম্ভব নয়। তাদের পরিকল্পনা নেই কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের অনেক দাবিদার জুটে গেছেন!
আদর্শগত ভাবে এই কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বামপন্থীদের। কিন্তু বামবাদীরা আছে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায়। এবং এখনও একদা তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটিতে উন্নাসিকতা ছাড়তে পারছে না।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ), যোগেন্দ্র যাদবের স্বরাজ পার্টি, দিল্লির কৃষক আন্দোলনের মতো সমাজের বিভিন্ন অংশের নাছোড় আন্দোলন কিছুটা ভরসা যোগাচ্ছে। আপাতত আর তেমন কিছু চোখে পরছে না।
তবু সব সময় গুনগুনিয়ে গেয়ে যাই, হাল ছেড়ো না, বন্ধু...।
আমার মতামত পড়ে অনেকে গালি দেন। তবু গুনগুনিয়ে গেয়ে যাই, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে....।