রাস্তার পাশের দোকানে চা বানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী |
দোকানের হাল ধরে পর গঙ্গা দুটো কাজ করলেন। অন্যরা ২ পয়সা কেজি দরে ভুজিয়া বিক্রি করলেও তিনি দাম করেন কেজি প্রতি ৫ পয়সা। অন্যরা কাগজের ঠোঙায় সাধারণ ভাবে বিক্রি করলেও গঙ্গা বিকানেরের জনপ্রিয় রাজা ডুঙ্গার সিংয়ের নামে তাঁর ভুজিয়ার নাম দেন। এতে ধারণা হয়, তাঁর ভুজিয়া বিশেষ রকমের, অন্যদের থেকে আলাদা, আজকের ভাষায় বললে, প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট। সেটা উনিশশো তিরিশ দশকের কথা।
গঙ্গাবিষাণ আগরওয়াল |
গঙ্গাপ্রসাদের ডাকনামেই তাঁর খদ্দেররা চিনতেন বেশি। পরে সেই নামেই তাঁকে চিনেছে সারা দুনিয়া। হলদিরাম (Haldiram)।
এখন হলদিরামের উত্তরসূরিদের ব্যবসা তিন ভাগ। নাগপুর, কলকাতা আর দিল্লিতে তিন কেন্দ্র। ২০১৯ সালে তিন ভাগ মিলিয়ে মোট আয় হয়েছে ৭১৩০ কোটি টাকা। ভারতের বাজারে ডমিনোস, ম্যাকডোনাল্ডস ও ম্যাগির মোট বিক্রির চেয়েও বেশি বিক্রি হলদিরামের। হলদিরাম ব্র্যান্ডের ব্যবসা আরও অন্তত ৬০টি দেশেও ছড়িয়েছে।
একদিন এক্সাইড মোড়ে হলদিরামের ফুড কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে চার মাঝবয়সী মমতা ব্যানার্জির তেলেভাজা, ঘুগনি বিক্রি করে কোটি টাকা কামানোর পরামর্শ নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলেন। ওঁরা নিশ্চয়ই জানেন না তেলেভাজা, ঘুগনির মতো সাদামাটা ভুজিয়া বিক্রি করতে করতেই ঝকমকে হলদিরাম তৈরি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ। বিধানসভার গেটে ঝালমুড়ি-চা-ঘুগনি বেচছেন বিজেপি বিধায়করা |
পঞ্চানন চন্দ্র থাকতেন টালিগঞ্জের ভবানী সিনেমার পাশের গলিতে। ছিলেন সোনার দোকানের কারিগর। পরে নিজে সোনা-রূপার দোকান করলেও বন্ধু বিশ্বাসঘাাতকতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। কাজ নিলেন টালিগঞ্জে ছোট্ট কাপড়ের দোকানে। তখনই জ্যোতিষীর পরামর্শে ছেলের নামে চানাচুরের ব্যবসা শুরু করেন। পঞ্চাননের ছেলে নির্মলেন্দু স্কুল ছেড়ে ভাঙা সাইকেল নিয়ে টালা থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত পাইকারি বাজারে চানাচুর বিক্রি করতে ছুটতেন। এক পানের দোকানদার টালিগঞ্জ ট্রামডিপোর কাছে দোকানের ব্যবস্থা করে দিলেন। এককালীন আড়াইশো টাকা আর দিনে এক টাকা ভাড়া।
তখন চানাচুর বলতে বুলবুলভাজা আর ডালমুট। ফুলুরি ভাজার পর পড়ে থাকা বেসনের টুকরো, ডালমুট, বাদাম মিশিয়ে তৈরি হল ভিন্ন স্বাদের চানাচুর। গরম গরম চানাচুর খেতে ভিড় বাড়তে শুরু করল।
নির্মলেন্দুবাবু কাজের সূত্রে গিয়েছিলেন দিল্লি। সেখানে এক বৈষ্ণব হোটেলে নিরামিষ তরকারিতে মাংসের ঝোলের স্বাদ পান। হোটেলের মালিক কাছ থেকে রেসিপি জেনে কলকাতায় ফেরেন নির্মলেন্দু।জোয়ান, লবঙ্গ, জিরে, দারচিনি, পিপুল, বিশেষ ধরনের লঙ্কা, শুকনো আদা, হিং এবং আরও ডজন কয়েক উপাদান মিলিয়ে নতুন ফর্মুলায় চানাচুর তৈরি করলেন নির্মলেন্দু।
চানাচুরের খদ্দের ছিলেন মান্না দে, হেমন্ত মুখার্জি (তিনি আবার বম্বে যাওয়ার সময় লতা মঙ্গেশকরের জন্য নিয়ে যেতেন), নচিকেতা ঘোষ, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। লোক পাঠিয়ে চানাচুর নিয়ে যেতেন উত্পল দত্ত। সত্যজিত রায়ের জন্য চানাচুর নিয়ে যেতেন তপেন চ্যাটার্জি। একদিন দোকানের সামনে এসে থামল WB MC 8787 নম্বরের সাদা অ্যাম্বাসাডার। ভিতরে বসে উত্তম কুমার। চানাচুর কিনে নিয়ে গেলেন তাঁর ড্রাইভার। অশান্ত সত্তরে নির্মলেন্দু চলে গেলেন লাঙলবেড়িয়ায়। সেখানেই বাড়ি, কারখানা।
১৯৫০ থেকে চলতে চলতে নির্মলেন্দুর ‘মুখরোচক’ (Mukhorochok) এখন অতি পরিচিত একটি নামী ব্র্যান্ড। এখন চানাচুর ছাড়াও আরও অনেক জিনিস বিক্রি করে তারা। তারমধ্যে আছে মশলা মুড়ি, চাল ভাজা, চিঁড়ে ভাজাও।
মমতা ব্যানার্জি বলার পরে যাঁরা তাঁকে ব্যঙ্গ করতে মশলা-মুড়ি, তেলেভাজা, ঘুগনির দোকান খুলে বসেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এসব গল্প জানেন না বা মনে রাখতে চান না।
২০১৯ লোকসভা ভোটের গণনার দিন হেস্টিংসের সামনে একটি ছেলে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছিলেন। বিহারের ছেলে। এমবিএ পড়ছেন। চা বিক্রি করে থাকা-খাওয়ার খরচ চালান। তাঁর ইচ্ছে চেন সিস্টেমে চা-এর অনলাইন ব্যবসা করা।
বোম্বে আইআইটি থেকে পাশ করার পর নীতিন সালুজা তৈরি করেছেন বিভিন্ন রকম চা-এর চেন ‘চায়োস’ ।
মধ্যপ্রদেশের একটি গ্রামের ছেলে প্রফুল বিল্লোরে। বিকম পাশ করার পর এমবিএ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোথাও সুযোগ পাননি। তাই খুলে বসলেন MBA Chaiwala। ২০১৬ সালে বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা ধার করে আমেদাবাদে রাস্তার ধারে খুললেন চায়ের দোকান MBA Chaiwala (MBA মানে Mr Billore Ahmedabad)। প্রথম দিন ১৫০ টাকার চা বিক্রি হয়েছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা হলেই সেখানে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন। তারপর চেন মার্কেট সিস্টেম গড়ে তোলেন। ২০১৯-২০ সালে তাঁর ব্যবসার বহর ৩ কোটি টাকা। হ্যাঁ, চা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয়। সঙ্গে আরও অনেকের কর্মসংস্থান।
প্রফুল্ল বিল্লোর |
কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে লেখার কাগজ বা ডিজাইনার রঙিন কাগজ। আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া সহ বহু দেশে এই কাগজের চাহিদা বাড়ছে। এই কাগজের উৎপাদন খরচ কম, যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় না, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গাছ কাটতে হবে না।
ভিয়েতনামে প্রচুর কচুরিপানা জন্মায়। নদী ও খালে জন্মানো অবহেলিত কচুরিপানা বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরিতে ব্যবহার করছে তারা। ব্যাগ, দড়ি, ঝুড়ি, ম্যাট-সহ দুশোরও বেশি ধরণের জিনিস তৈরি হচ্ছে কচুরিপানা থেকে। এই সমস্ত জিনিস ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। চিন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডও কচুরিপানা দিয়ে নানা রকম জিনিস তৈরি করছে। সে কাজে হাত দিয়েছে বাংলাদেশও।
কচুরিপানা থেকে |
কচুরিপানা থেকে আসবাব তৈরি হচ্ছে |
কচুরিপানা থেকে তৈরি সোফা, খাট |
বিজ্ঞানীরা হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে কচুরিপানা আসলে সম্পদ। আমেরিকার নাসা-র জনাকয়েক বিজ্ঞানী সত্তরের দশকে দেখিয়েছিলেন, কচুরিপানার শিকড় এক দিনের মধ্যেই কলকারখানার দূষিত জল থেকে নিকেল এবং ক্যাডমিয়ামের শতকরা ৯৭ ভাগ শুষে নিয়েছে। দূষিত জল থেকে নানা ভারী ধাতু কিংবা ফেনলের মতো বহু জৈবিক অপদ্রব্য নিষ্কাশন করে, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সে জলকে অন্তত ৭৫-৮০ ভাগ দূষণমুক্ত করেছে কচুরিপানা।
বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য, নর্দমা বা খাটালের দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত জল সরাসরি গঙ্গা বা অন্যান্য নদীতে পড়ে জল বিষিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই দূষিত জল কচুরিপানা সমেত কোনও সংরক্ষিত জলাশয়ে কিছু দিন রেখে, দূষণমুক্ত করে নদীতে ফেললে তা থাকবে অনেকটা পরিষ্কার।
আফ্রিকার বেনিনে কচুরিপানার কোটি কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতি হত। ২০১৪ সাল থেকে ‘গ্রিন কিপার আফ্রিকা’ নামে একটি সংস্থা কচুরিপানা থেকে তন্তু বের করছে, যা তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকায় ও শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
লেক ভিক্টোরিয়া |
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হাইজিন অ্যান্ড হেলথও কচুরিপানা নিয়ে কাজ করেছিল। তামিলনাড়ুর উধাগামন্ডলমের হর্টিকালচার রিসার্চ স্টেশনের প্রধান প্রফেসর এন সেলভারাজ দেখেছেন, ভার্মি কম্পোস্টের জন্য অন্যান্য কৃষিবর্জ্য থেকে জৈবসার হতে যেখানে ৭০ দিন সময় লাগে, সেখানে কচুরিপানা থেকে কম্পোস্ট ৫৫ দিনের মধ্যে হয়ে যায়। তাঁর মতে, বিভিন্ন উদ্যান ফসলের জন্য যেখানে হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন জৈবসার লাগে, সেখানে কচুরিপানার কম্পোস্ট লাগে মাত্র আড়াই থেকে তিন টন।
সত্তরের দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে, কচুরিপানার মূল নির্যাস ধানের কাণ্ডকে বাড়তে সাহায্য করলেও ধানের মূলকে বাড়তে দেয় না। ১৯৭৫-৭৬ সালে গোবরডাঙ্গা রেনেসাঁ ইনস্টিটিউটের দীপক দাঁ-র নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী বোস ইনস্টিটিউট থেকে কচুরিপানার নির্যাস জিব্বেরেলিন অ্যাসিড (গ্রোথ হরমোন) নিয়ে এসে পাট, টমেটো, পালং ইত্যাদির উপর প্রয়োগ করে আশাতীত সাফল্য পেয়েছিলেন। দেখা যায়, পাটের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটিয়ে আঁশের পরিমাণ অনেক বেড়েছিল। পালংয়ের পাতা, ডালিয়া ফুলের আকৃতি হয়েছিল অনেক বড়। প্রয়োগের সাত দিনের মধ্যেই এই প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারা গিয়েছিল।
বাংলাদেশে কচুরিপানার ভাসমান বেডে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বছর বাণিজ্যিক ভাবে সবজি, ফল, শাক ও মসলা উৎপাদন হচ্ছে। কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বীজতলাও তৈরি হচ্ছে। জলের উপর কচুরিপানা-খড়-শ্যাওলার স্তূপ জড়ো করে, তা শক্ত করে বেঁধে বেঁধে তৈরি হয় এক একটি ভাসমান বাগানের অংশ। কাঠামো তৈরির পর আরও উঁচু স্তর যোগ করে, তা পিটিয়ে সমান করে ইচ্ছেমতো আকার দেওয়া হয়। তৈরি করা হয় ভেলার মতো কাঠামো। এরকম অনেকগুলো ভেলা যোগ করে করে গড়ে ওঠে ছোট ছোট দ্বীপের আকারের ভাসমান সবজি খেত। এরপর সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজির চারা রোপণ করা হয়। (পড়ুন: বাংলাদেশের ভাসমান সবজি বাগান।)
শুকনোর সময় ত্রিপুরার কিছু চা বাগানে কিছু জায়গায় কচুরিপানা বিছিয়ে সেচ দিয়ে আর্দ্রতা ধরে রাখার চল আছে। তা ছাড়া কচুরিপানা পচিয়ে যে ৬০-৮০% মিথেন গ্যাস পাওয়া যাবে, তা থেকে মিলবে সস্তার জ্বালানি গ্যাস।
কচুরিপানা থেকে সার তৈরি হচ্ছে |
অসমের মাজুলি দ্বীপের মতো আমাদের রাজ্যে সুন্দরবনেও এরকম কিছু ভাসমান বাগান তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাতে বেড হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার হয়েছে। সেটা মোটেও পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি নয়। আজকের সময় পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি যেমন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তেমনই বিশ্ব উষ্ণায়নের ধাক্কায় যেভাবে জলস্তর বাড়ছে তাতে এই ভাসমান বাগান বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। (পড়ুন: ভাসমান বাগানে সবজি চাষ সুন্দরবনের চাষিদের।)
বাংলাদেশে ভাসমান বাগান |
গোরুর খাবার হিসেবে কচুরিপানার ব্যবহার তো অনেক পুরনো।
কচুরিপানা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে।
কচুরিপানা ও কলাগাছ দিয়ে কফিন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। তাতে গাছ কাটার দরকার হচ্ছে কম। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড-এ ‘ওয়েসিস কফিনস’ নামে কোম্পানি বানিয়েছেন ব্রিটেনের ডেভিড হাউ। সেই কফিন বিক্রি হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। ব্রিটেনের আরও দুটি কোম্পানি হাউ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এখন কোম্পানির বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি বাংলাদেশি টাকা। স্থানীয় কয়েকশো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। শ্রমিকরা কারখানার অংশীদারও (partner)। ঝোলাগুড়, পুরনো কাগজ, তুষ, ধানের খড়, গাছের বাকল, কচুরিপানা, জলজ ও বনজ নরম উদ্ভিদ দিয়ে জৈব জ্বালানি (বায়ো-ইথানল) তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র দুলাল হোসেন ও শিব্বির হোসেন কচুরিপানা ও কলাগাছের আঁশ ব্যবহার করে প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরি করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কারুশিল্পে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে রফতানি ক্ষেত্রে পাটকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে কচুরিপানা।
সারা জীবনজুড়ে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমেরিকার কেন্টাকির বাসিন্দা ‘কর্নেল’ হারল্যান্ড স্যান্ডারস যখন ৬৫ বছর বয়সে পৌঁছলেন তখন তাঁর হাতে মাত্র ১০৫ ডলারের সিকিউরিটি চেক। স্যান্ডারস আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু উইল লিখতে গিয়ে লিখে ফেললেন আশ্চর্য এক জীবনের কাহিনী। স্যান্ডারস চিকেনের বিশেষ এক রকম পদ বানাতে পারতেন। ৮৭ ডলার ধার করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে সেই মাংসের পদ বানিয়ে আশপাশে বিক্রি শুরু করলেন। প্রথম দিকে তেমন একটা সাড়া পাননি। তারপর ঘুরতে শুরু করলেন আমেরিকার বিভিন্ন শহরে। রেস্তোরাঁর মালিকদের সেই মাংস খাইয়ে চুক্তি করতে চাইলেন। ১০০৯ বার ‘না’ শোনার পর এক রেস্তোরাঁ মালিক রাজি হলেন। বছর দশেকের মধ্যে সারা দুনিয়ায় প্রায় ৬০০ রেস্তোরাঁর সঙ্গে চুক্তি করলেন স্যান্ডারস। হ্যাঁ, ৬৫ বছর বয়সে ১০৫ ডলারের ভরসায় ব্যবসা শুরু করেন ১০০৯ বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর শুরু। তারপর তো ইতিহাস। এভাবেই জন্ম নেয় দুনিয়াখ্যাত ব্র্যান্ড KFC।
অন্নপূর্ণা দাস জন্মেছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। দেশভাগের পর তিন মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘি সরকারি ক্যাম্পে আসেন। স্বামী সুরেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয় পূর্ব পাকিস্তানে থাকার সময়ই। সবজি বিক্রি করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন অন্নপূর্ণা। সেখান থেকে যান গঙ্গারামপুরে। সেখানে সনাতন দাসের কাছ থেকে বিড়ি বাঁধা শিখলেন। এক সময় নিজের বিড়ি কারখানও বানালেন। এক মেয়ের বিয়ে দেন বরানগরে। তারপরই বেলুড়ের প্যারিমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে ৯০০ টাকায় দোকান-সহ বাড়ি কেনেন। বিড়ি-আলতা-সিঁদুরের দোকান দিলেন। তার সঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজায় ঘুড়ি, দোলে রং এনে বিক্রি করতেন। হরকুসুম গাঙ্গুলির কাছ থেকে আলতা-সিঁদুর বানানো শিখে তার ব্র্যান্ডও তৈরি করেন। একবার সরস্বতী প্রতিমা বিক্রি করে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে। তার সঙ্গে ধার করা হাজার টাকা দিয়ে কালীপুজোয় বিক্রির জন্য বাজি কেনেন। কিন্তু লাইসেন্স না থাকায় পুলিশ দোকান ভেঙে দেয়। সেই জেদে অন্নপূর্ণা বাজি বিক্রির লাইসেন্সের সঙ্গে বাজি তৈরির অনুমতিও জোগাড় করে ফেলেন। বাঁকড়ার আকবর আলির কাছ থেকে বাজি বানানো শেখেন। ডানকুনিতে জমি কিনে কারখানা বানান। খুঁজে খুঁজে কারিগর জোটান। তারপর তো ইতিহাস। জিনিস কিনতে আসা ছেলেমেয়েরা প্রৌঢ় অন্নপূর্ণাকে ডাকত বুড়িমা। তাঁর বাজির ব্র্যান্ডের নামও দিলেন ‘বুড়িমা’ (Burima)। বাজির বাজার জিতে নিল সেই ব্র্যান্ড। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয় রে ‘বুড়িমার চকলেট বোম’। পরে তামিলনাড়ুর শিবকাশিতে দেশলাই কারখানাও তৈরি করেন। ১৯৯৫ সালে মারা যান ‘বুড়িমা’। চকলেট বোমা ফাটিয়েই প্রয়াত বুড়িমাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল এলাকার ছেলেরা।
পরের বছর শব্দবাজি নিষিদ্ধ হল। তবে এখনও বাজি বাজারে জনপ্রিয় ‘বুড়িমা’ ব্র্যান্ড। এখন তারা বানায় শব্দহীন-দূষণহীন বাজি।
পড়ুন আর্থিক উন্নয়ন সম্পর্কে লেখা আগের পর্বগুলো:
ব্লগটির সমালোচনায় না করে, ছড়িয়ে পড়বার শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। কারন, তথ্যগুলো আমার ও অজানা ছিল।