link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

নতুন তৃণমূল, জাঙ্গিয়ার বুকপকেট, বিলকিস বানো এবং এক বোকাচোদার আত্মবিলাপ #Bilkis-Bano-case-NEW-TMC

খবরের চ্যানেলে চাকরি করি। এ নেতা-ও নেতা-সে নেতার বাইট শুনি। বিতর্কের অনুষ্ঠানের নামে গরমাগরম ঝগড়া শুনি। সে সব মাখিয়ে পাবলিকের জন্য লদলদে পাচন বানানোর চাকরি। দেখতে দেখতে বমি পায়। দেখি, বুঝি, জানি, নেতারা তাৎক্ষণিক ভাবে বানিয়ে বানিয়ে গরম গরম বাইট দেয়, কোনও বিষয় না জেনেও অনায়াসে বলে দেয়, যাতে খবর হয়। জানি। জানি বলেই গা গুলিয়ে বমি আসে। চুরি করে লাট করে দেওয়া লোক এসে ক্যামেরার সামনে সততার পক্ষে গলা ফাটিয়ে তুলকালাম করে ছাড়ে। বমির দমক বেড়ে যায়। দমকে দমকে বমি উগড়ে ছুঁড়ে মারতে ইচ্ছে হয় চারপাশে। পারি না। ভদ্দরলোক হয়ে গেছি কবে। মানে বোকাচোদা বনে গেছি। (রাগ করলে করুন, রাগ মাথায় চড়ে গেল ভদ্দরলোকের ভাষা বেরোয় না।) 
ঢাক ঢোল বাজছে চড়াম চড়াম। কী যুদ্ধ চলছে! দুর্নীতি পালানোর রাস্তা পাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এর চেয়ে পবিত্র কিছু হয় নাকি হতে পারে নাকি হওয়া উচিত? মামলাবাজ দেঁড়েটা বলেই দিয়েছে, বাংলাকে দুর্নীতিমুক্ত না করে থামবে না।
কী জানেন কত্তা, টাকা খাওয়াটা যেমন চুরি, জেনেশুনে লোককে মিথ্যে বোঝানোটাও চুরি।
রাজনীতির কাজ তো মানুষকে শিক্ষিত করা। মানুষের কাছ থেকে শেখা। কে শিখবে? কী শেখাবে?কোনও বাঞ্চোত বলে না, দুর্নীতি হল মুনাফাবাজ সিস্টেমের রোগ। সে সিস্টেমে নেতা মন্ত্রী পুলিশ সেনা ডাক্তার অফিসার বিচারপতি...সব সব সব ম্যানেজ হয়। গরম গরম ভাষণে ও রোগ যাবে না। ক্রমাগত অধিকারের লড়াই হল একমাত্র দাওয়াই।
অধিকার।
‘আমাকে আতঙ্ক ছাড়া বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন।’ 
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় সবরমতি এক্সপ্রেসে ৫৯ জন করসেবক জ্যান্ত পুড়ে মারা যাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে শুরু হয় মুসলিম নিধন যজ্ঞ, ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী খুনের পর দিল্লিতে যেমন শিখদের মারা হয়েছিল। কোলে সাড়ে তিন বছরের সন্তান নিয়ে পালাচ্ছিল পাঁচ মাসের গর্ভবতী মেয়েটি।
২১ বছরের মেয়েটা পরিবারের সঙ্গে পালাচ্ছিল একটু নিরাপদ কোনও আশ্রয়ের খোঁজে। 

৩ মার্চ। ওরা তখন একটা মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। ২০-৩০ জনের দলটাকে আসতে দেখে ওরা ঝোপের আড়ালে লুকিয়েছিল। ওদের অনেককে মেয়েটা চেনে। ওদের বাড়িতে দুধ নিতে আসে। লোকগুলোর হাতে ছিল তলোয়ার, শেকল, লাঠি। মেয়েটির মা ও অন্য তিন মহিলাকে গণধর্ষণ করে খুন করে লোকগুলো। খুন হয় মোট ৮ জন। তাদের মধ্যে ছিল মেয়েটির কোলের সন্তান। মায়ের কোল থেকে টেনে নিয়ে সাড়ে তিন বছরের বাচ্চাটার মাথা পাথরে আছাড় মেরে খুন করা হয়। মেয়েটিকেও গণধর্ষণ করে চেনা লোকগুলো। মারা গেছে ভেবে উলঙ্গ শরীরটা ফেলে রেখে চলে যায়।
কপালজোরে মেয়েটি বেঁচে যায়।
পুলিশ অভিযোগ ঠিকঠাক লেখেনি, খুন হওয়া লোকেদের মুন্ড পোস্টমর্টেমের সময় সরিয়ে ফেলা হয় যাতে তাঁদের চেনা না যায়, মামলা তুলতে ক্রমাগত হুমকি...। 
তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ধর্ষিতা, চোখের সামনে সন্তানকে আছড়ে খুন করতে দেখা, ৮ পরিজনকে খুন হতে দেখা মেয়েটির পাশে তাঁর সরকার এমন ভাবে ছিল যে মামলা গুজরাট থেকে মুম্বইতে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি সিবিআই কোর্ট ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। মুম্বই হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রাখে।
অসম লড়াইয়ে জিতে অপমানিত মানুষদের এক প্রতীক হয়ে গেল মেয়েটি। 
বিলকিস বানো।
এবারের ১৫ অগাস্ট। 'আজাদি কী অমৃত মহোৎসব'। স্বাধীনতা ৭৫। তেরঙা পাগড়িতে মাথা ঢেকে প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'আমাদের মধ্যে এমন একটা বিকৃতি এসেছে যে আমরা কথায় কথায় নারীদের অপমান করি। শব্দ প্রয়োগ, আচরণ, ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নারীদের অসম্মান করি। এর থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া দরকার। মহিলাদের প্রতি সম্মান দেশের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ৷ আমাদের নারীশক্তির পাশে থাকা প্রয়োজন৷' 
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে বন্দীদের খালাস পাওয়ার বিধি বদলে বলা হয়েছে, ধর্ষণ সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে দোষীদের মুক্তি দেওয়া যাবে না। 
১৫ অগাস্টই মোদীর রাজ্য গুজরাটে, মোদীর দলের সরকার সিদ্ধান্ত নিল, বিলকিস বানোর পৈশাচিক ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ১১ জনকে ছেড়ে দেওয়া হবে। 
ছেড়ে দেওয়া হল। জেল থেকে বেরোনোর পর খুনী আর ধর্ষকদের বরণ করলেন মহিলারাও। সংবর্ধনা দিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। গোধরার বিজেপি বিধায়ক সি কে রাজুল বললেন, 'ওরা কোনও অপরাধ করেছেন কিনা জানি না। তবে অপরাধ করার কোনও নির্দিষ্ট কারণ নিশ্চয়ই ছিল। ওরা ব্রাহ্মণ। আর আমরা জানি ব্রাহ্মণরা ভালো চরিত্রের হয়। তাদের কোণঠাসা করা ও সাজা দেওয়ার পেছনে কোনও কারণ থাকতে পারে।' 

আদালত নয়, ১১ জনকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুজরাট সরকারের কমিটি। পঞ্চমহলের জেলাশাসকের নেতৃত্বে তৈরি কমিটিতে ১০ জনের মধ্যে ৫ জনই ছিলেন বিজেপি নেতা। 
গোধরার বিধায়ক ছাড়াও ছিলেন কালোলের বিজেপি বিধায়ক সুমনবেন চৌহান (তাঁর শ্বশুর গোধরার প্রাক্তন সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী প্রভাতসিন চৌহান জনতা দিল, কংগ্রেসের ঘাটের জলও খেয়েছেন)। 

কমিটিতে ছিলেন বিজেপির গোধরা তালুকার প্রধান সরদারসিন প্যাটেল, গোধরা মহিলা মোর্চার সহ সভানেত্রী বিনীতাবেন লেলে, আরএসএস-ভিএইচপি-এবিভিপি-র নানা দায়িত্ব সামলানো বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য পবন সোনি। তাছাড়া ছিলেন এসপি, জেল সুপার, সমাজকল্যাণ আধিকারিক, সেশন বিচারক। মে মাস পর্যন্ত সদস্য ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি কাউন্সিলর মুরলী মুলচান্দনি, বিজেপির মহিলা নেত্রী স্নেহাবেন ভাটিয়া।
কেন তৈরি হয়েছিল ওই কমিটি?
এক বন্দি মুক্তির আবেদন করে। সুপ্রিম কোর্ট মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা দেয় গুজরাট সরকারের হাতে।
তদন্ত করেছিল সিবিআই। রায় দিয়েছিল সিবিআই কোর্ট। মামলার শুনানি হয়েছিল মুম্বইতে। সুপ্রিম কোর্টের পুরোনো বিভিন্ন মামলার রায় মানলে, বিলকিস মামলার দোষীদের ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা কোনও ভাবেই গুজরাট সরকারের হাতে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেটাই হয়েছে।
প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি নিয়ে কী দাপাদাপি হল! তিনি চুপ।
ডায়লগের বেলুন ওড়ানো মোদী চুপ।
‘কোনও নারীর জন্য এভাবে বিচার শেষ হয় কীভাবে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর আস্থা রেখেছি। আমি সিস্টেমের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম।’
বিলকিসের বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে। বিলকিস তো আমার আপনার মতো আমজনতা। এমন ঘটনা তো আমার আপনার পরিবারেও ঘটতে পারে।
বিলকিস বলছেন, 'সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাস নাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃখ এবং বিশ্বাস নড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার একার জন্য নয়, প্রতিটি মহিলার জন্য। যারা আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাঁদের সকলের বিষয় এটা।'
সিস্টেম বিলকিসকে বাঁচাতে পারত কিন্তু বাঁচায়নি। রাষ্ট্র বিলকিসকে বাঁচাতে চায়নি। রাষ্ট্র বিলকিসদের, মানে আমাদের মতো আমজনতাকে বাঁচাতে চায় না। আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে রাষ্ট্র। ভাবটা এমন, যা খুশি তাই করব। পাবলিক আমার বাল ছিঁড়বে।
'পুলিসের গুলিতে মৃত্যু হচ্ছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে, তবু শাসক বলছে 'জলসা ফলসা থামানো যাবে না, গান হোক, গান চলুক।'
এক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমে গলা ফাটিয়েছিলেন সেসময়ের মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সেলিম ভাই। কোথায় এখন? 
ইচ্ছে করে নবারুণ ভট্টাচার্যের ফ্যাতাড়ুর মতো এক দঙ্গল লাট্টু ছেড়ে দিই চারপাশে। ঘুররররররররর...। নেতার প্রেস কনফারেন্স চলছে। টেবিলের নিচে ঢুকে অপারেশন চালিয়ে ফালতু নট্ট চিৎকার করে ওঠে,
চটকে দিলাম বিচি/তোরা ফুটে গেলেই বাঁচি।
চ্যানেলের বুম টুম সব ছিটকে দিয়ে নকুল দানা ড্রেনের ময়লার বালতি উল্টে দিয়ে ধেইধেই করে নাচ জুড়ে দেয়। সবাই হেঁই হেঁই করে ছুটে ধরতে যেতেই 'লাগ চক্কর লাগ' বলে বনবনিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ধাঁ।কোমরে শাড়ি গুঁজে জর্দা পানের পিকটা টিপ করে নেতার পাঞ্জাবীতে ছিটকে দিয়ে কুচকুচে কালো কানি 'দ্যাখ কেমন লাগে' বলেই ছুট লাগায়।
ঝোড়ো বস্তি, বনবস্তি, আনিসের বাড়ি, বগটুই, ছোট আঙারিয়া, সিঙ্গুর, গান্ধী মূর্তি, প্রেসিডেন্সি... ধানখেতের আল ধরে গোল্লাছুট... লাট্টুগুলো ঘুরে ঘুরে নপুংসক রাজনীতির পোঁদে লাথি ঝেড়ে বদলা নিয়ে বেড়ায়। সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, সাউথ ব্লক, নর্থ ব্লক, রাইসিনা হিলসে চক্কর খেতে খেতে লাট্টুগুলো নাশকতার মাইন পেতে দেয়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমজনতার বিদ্রোহের মাইন। ধাক্কা না দিলে সমাজ তো কাউকে সম্মান দেয় না। 
আন্দোলন এখন ইভেন্ট। পার্টিগুলো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। পাঁজিপুঁথি দেখে আন্দোলনের দিনক্ষণ ঠিক হয়। তাতে দেখনদারি থাকে, অঙ্ক থাকে ভোটের ও ঘরের...কিন্তু অন্তরের টান থাকে? যে টান মানুষকে উদ্বেল করে, অসম্ভবকে সম্ভব করায়। যা কিছু অমঙ্গল, তাকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার জেদ থাকে?
সিস্টেম পোড়াতে চাওয়া চুল্লির বারুদ কবে থেকেই তো নিভু নিভু। চারপাশে শপিং মল, স্পা, নাইটক্লাব, হুক্কাবার। অন্তর থেকে আন্দোলন চাওয়া মানুষগুলো কি মিসফিট? স্পর্ধার মুখে কি আঁটসাঁটো কনডোম পরানো?
রাজনীতির অ আ শেখার বেলাতেই শিখেছি, আসল হল সিস্টেম। সিস্টেমের কোথায় কে দাঁড়িয়ে, কোথায় ধাক্কা মারতে হবে, সেটাই আসল অঙ্ক। ভোটের লড়াই আর ভোটসর্বস্ব লড়াই এক জিনিস নয়। সিস্টেম বদলের কাজে লাগানো যায় ভোটের লড়াইকে। কিন্তু ভোটসর্বস্ব রাজনীতির মধ্যে কোনও লড়াই থাকে না, শুধু অঙ্ক থাকে। ধর্মের অঙ্ক, জাতের অঙ্ক, মাসল পাওয়ার, মানি পাওয়ার...আরও কত কত রকমের অঙ্ক।
সেই কবে শেখা ব্যাকরণ, সরকার বদলেই শুধু কাজ হবে না, সরকার বদলের লড়াইকে জুড়তে হবে সিস্টেম বদলের লড়াইয়ের সঙ্গে।
দূর্বাল! তত্বকথার গাঁড়ে লাথি।
'চোর ধরো জেল ভরো।'
বাংলার পাবলিক বিলকুল গান্ডু। ওরা বামরাজ্য রাখতে পারে না, রামরাজ্যও আনতে পারে না। ওসব রাজ্যে দুর্নীতি বিলকুল নিষিদ্ধ শব্দ! দেখেননি? দেখছেন না?
২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটে পাড়ুইয়ে তৃণমূলের একদল নির্দল হয়ে লড়তে নামে। তখনই কেষ্ট পুলিশকে বোম মারার হুমকি দেয়। তারপর নির্দল প্রার্থী সাগর ঘোষ খুন। তাঁর ছেলে হৃদয় খুনের বিচার চেয়ে লড়তে চেয়েছিলেন। সিপিএমের 'আমরা আক্রান্ত'-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সেই যে বিনপুরে মমতার মিটিংয়ে সারের দাম বাড়ল কেন জিজ্ঞেস করায় মাওবাদী বলে জেলে পুড়ে দেওয়া শিলাদিত্য চৌধুরীও ছিলেন ওই সংগঠনে। মামলাবাজ নেতার সু-নেতৃত্বে সব ভোঁভাঁ। হৃদয় তারপরে যান বিজেপিতে। তাঁকে হাওয়া দেওয়া দুধকুমার মণ্ডলই দলের ভেতরের টকে ছানা হয়ে যান। হৃদয়কে ফিরে যেতে হয় অনুব্রতর পায়ের তলায়।
বিরোধীরা কী করছিলেন?
ফালতু নট্ট ছড়া বেঁধেছে,
বিরোধীরা সব/ছিঁড়িয়া বাল,/বাঁধিল আঁটি।/বারবার তাই/নবান্নে ফেরে/হাওয়াই চটি।
এই যে চুরির স্বর্গরাজ্য তৈরি হয়েছে, সে তো পাড়ার পান দোকানের মালিক, অটোর ড্রাইভার, বাড়ি বাড়ি কাজ করা মহিলা, মেয়েদের সিটি দিয়ে বেড়ানো চ্যাংড়াগুলোও জানত। আপনারা জানতেন না? মমতা জানতেন না। দিলীপ-সুকান্ত- সেলিম-শুভেন্দু-অধীর-সুজনরাও কেউ কিচ্ছুটি জানতেন না। বিশুদ্ধ ন্যাকাগুলো সব রাজনীতির পান্ডা। পাছায় বিচুটি পাতা ঘষে দিতে পারলে একটু শান্তি হত।
-আরে ভাই/চোরে চোরে/মাসতুতো ভাই/ছোটলোকের/লড়াই চাই।
ছড়াটা বলেই লাট্টুপাক খেতে শুরু করল ফালতু।
লাট্টুরা সংখ্যায় কিন্তু বাড়ছে। চুপচাপ নাশকতার ষড়যন্ত্র চলছে।
শালার মিডিয়া বলছে, সিট বেল্ট বেঁধে ফেলুন। সেপ্টেম্বরে বড় ঝাঁকুনি আসছে। ঝাঁকুনিতে তৃণমূলের আগা থেকে গোড়া বদলে যাবে। নতুন তৃণমূল।
করলার ক্যাশমেমো, জাঙ্গিয়ার বুকপকেট...সেই ডিকশনারিতে যুক্ত হল নতুন শব্দ, নতুন তৃণমূল। 
সেই উন্নততর বামফ্রন্টের মতো। সেই ব্র্যান্ড বুদ্ধর মতো। সেই ভিত্তি আর ভবিষ্যত। সেই ভোকাট্টা।পাবলিককে মুরগি বানানোর নতুন প্লট। পুরোনো বোতলগুলো পাবলিক চিনে ফেলেছে, নতুন বোতল চাই। 

সেসব কে মাথায় নেবে? বিলকিসের জন্য গলা ফাটানোর কথা বললে, লাল পার্টির কিছু লোক বলে ওঠে, লোকটা দিদির দালাল। দুর্নীতিকে কেমন কৌশলে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ওদের দোষ দেখি না। যা শেখাচ্ছে, তাই শিখছে।
সুভাষ চক্রবর্তীর কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম। দিল্লির বঙ্গভবনে জ্যোতি বসুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। জয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর সুভাষদা জিজ্ঞেস করলেন, কী বুঝলেন? জ্যোতিবাবুর এক লাইনের জবাব, দেখে তো চোর টোর মনে হল না। জয়ললিতা বিরোধী জোটে যুক্ত হলেন।
এখন বিহারে লালুপ্রসাদের পার্টির সঙ্গী সিপিএম, সিপিআই, লিবারেশন, কংগ্রেস। সেখানেও এখন ইডি, সিবিআই। দুর্নীতির অভিযোগ। তার বেলা? 
ভারতীয় রাজনীতিতে দুর্নীতি কোনও ইস্যু নয়। এই যে মহারাষ্ট্রে আস্ত একটা সরকার কিনে নেওয়া হল। এ তো মহাচুরি। এর আগে আরও কত রাজ্য। শয়ে শয়ে নয়, হাজার হাজার কোটি। সে কি সাদা টাকা? সেই তারাই দুর্নীতির বাজনা বাজাচ্ছে, বাকিরা নাচছে। 
একটা রাজনৈতিক প্লটে হাতিয়ার ইডি সিবিআই। তার মানে কেষ্ট বিষ্টুরা দুর্নীতি করেনি? বিলক্ষণ করেছে। সেটা বুঝতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লাগে না। বিজেপি একসময় শুভেন্দু অধিকারী, নিশীথ প্রমানিককেও দুর্নীতিগ্রস্ত বলত। তাঁদেরকেও ধরবে সিবিআই ইডি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে থাকা সিবিআই ধরবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে? 
তাহলে? 
ইডির কাছে অভিষেক সারেন্ডার করে সব বলে দিয়ে এসেছেন। বলেছেন অধীর চৌধুরী। তাই নাকি? অধীরের কথা মিথ্যা হলে তো অভিষেক মানহানির মামলা করতেন।
আচ্ছা ধরুন, ডিসেম্বরে যদি মমতা ব্যানার্জির বদলে মুখ্যমন্ত্রী হন অভিষেক ব্যানার্জি। পাবলিকের কী যাবে আসবে কিছু? দেশের রাজনীতির ভারসাম্যের কিন্তু যাবে আসবে। তৃণমূলও জানে, আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। 
সব চলছে হিসেব করে। রাম বাম পিসি ভাইপো....সব। কোর্ট আর কেন্দ্রীয় এজেন্সি বিশল্যকরণী। দুর্নীতির স্বচ্ছ তদন্ত হবে? চিটফান্ডের সময় কী হয়েছিল? কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তো তদন্ত করেছিল। পাবলিকের হাতে সেই হ্যারিকেন। যে নেতারা হইচই জুড়েছিলেন ২০১৬ বিধানসভা ভোটে মমতা জেতার পর সব চুপ। প্রতারিত পাবলিকের ঘাড়ে চেপে ভোট বৈতরণী পেরোতে চেয়েছিলেন ওঁরা। নির্লজ্জ নেতাদের বুকনি তবু থামে না।
পেট্রোল ডিজেল রান্নার গ্যাস কেরোসিনের দাম বাড়ছে। চাল ডাল নুন আলু আটা সবজির দাম বাড়ছে। আম্বানি আদানীর সম্পত্তি বাড়ছে। গরিবী বাড়ছে। বেকার বাড়ছে। ধর্ষণ বাড়ছে। আদিবাসী ও দলিতদের ওপর আক্রমণ বাড়ছে। ব্যক্তির মত প্রকাশের অধিকারের ওপর আক্রমণ বাড়ছে। মিথ্যা ইতিহাস আর কুসংস্কারের দাপট বাড়ছে।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আমরা যুদ্ধ বা কূটনীতি বিশারদ। পরক্ষণেই পরেই কেকের মৃত্যুর জন্য রূপঙ্করের মুণ্ড চিবিয়ে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি। তারপর ললিত মোদী-বিপাশা বসু। বুদ্ধিজীবী নামক অদ্ভুত প্রজাতির নিন্দা করতে করতে নিজেরাই বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠি। পার্থ অর্পিতা কেষ্ট সুকন্যা। এরপর?
'বুঝছেন কিছু? এবার পুজো শুরু পয়লা সেপ্টেম্বর।'
নেতারা আমাদের খুব ভাল চেনেন। নেতারা জানেন, তাঁদের ছাড়া আমাদের চলবে না। চাকরি পাওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা তো আমরাই দিয়েছি। কেষ্ট মন্ডলদের সাম্রাজ্য আমরাই বানিয়ে দিয়েছি। ওদের ফেলে দেওয়া এঁটো কাঁটা খেয়েই তো আমাদের চলতে হয়, আমাদের ছেলেমেয়েদের চলতে হয়। পার্টি ছাড়া, কেষ্ট মন্ডলরা ছাড়া আয় কোথায়, কাজ কোথায়? লক্ষ্মণ শেঠ যায়। কেষ্ট মণ্ডলরা গজায়। কেষ্ট গেলে হয়তো সিংহ বেরোবে।
আমাদের সর্বংসহা আড়ষ্টতার সুযোগে সব গিলে নিয়ে রাক্ষুসে রাষ্ট্র এখন ফ্যাসিবাদী। আমরা সবাই একেকটা বিলকিস।
শিখেছিলাম, লাঙলের ফলায়, কম্পিউটার কি বোর্ডে আঙুলের চাপে, ক্যামেরার ফোকাসে, কলমের আঁচড়ে, কুলির শরীর থেকে ঝড়ে পড়া ঘামে মাইন জন্ম নেয়।
রাষ্ট্র একেকটা ব্যক্তি মানুষকে জাপটে বেঁধে ফেলছে অজগরের মতো। বাপ ঠাকুরদার শেখানো সাপ তাড়ানোর মন্ত্র কি ভুলে গেছি?
লাট্টুগুলো এখানে ওখানে সেখানে ছড়িয়ে গিয়ে সব পাবলিকের গাঁড়ে দেওয়ার সব প্লট গুলচোট করার খেলা খেলছে না? আমার ইচ্ছেগুলো লাট্টু হয়ে ছড়িয়ে যেতে চায়।
রক্তকণিকারা রাগ-যন্ত্রণাকে মাথা থেকে টেনে নিয়ে উন্মাদ তরঙ্গ ছড়িয়ে দেয় কোষে কোষে। রোজ। রোজ। রোজ। তারপর রাতে ওষুধ খেয়ে স্নায়ুগুলোকে শান্ত করা। বেশি বাড়াবাড়ি হলে ডাক্তার। চাকরি না করলে সংসার চলবে? অতএব ঘুম থেকে উঠে আবার...। অসহায় এক বোকাচোদার আত্মবিলাপ। ভদ্দরলোকেরা আপনাদের ভাষায় কথা বলতে পারলাম না বলে রাগ করবেন না, প্লিজ।
...স্পর্ধা গেছে, বিনয়ও গেছে/নপুংসকে ভরেছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ
নামহীন বলেছেন…
আপনার লেখাগুলো মাথার মধ্যে ঝাঁকুনি দিয়ে যায়
নামহীন বলেছেন…
দারুন লাগলো দাদা প্রতিবেদন টা।
নামহীন বলেছেন…
Fatiye

Top Post Ad