link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

শ্যামনগরের ধোলাই, মোদীর ইডি এবং বৃজির অমিয়দা ও বাপি-বিচ্ছুর রাজনীতি #WB-politics-problems-prospects

ঘটনাটা সোমবারের। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সমাবেশ কলকাতায়। সকাল ১০.২০ মিনিটের কল্যাণী সীমান্ত লোকাল শ্যামনগর স্টেশনে পৌঁছতেই ঝামেলা। পরপর চারটে লোকালে উঠতে পারেননি যাত্রীরা। কারণ কামরার দরজা বন্ধ করে যাচ্ছিলেন তৃণমূলের ছাত্রনেতাকর্মীরা। কল্যাণী সীমান্ত লোকালের কামরার দরজা খোলার কথা বলতেই ভিতর থেকে নোংরা গালাগাল। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল যাত্রীদের। জোর করে দরজা খুলে উঠলেন। টিএমসিপি কর্মীরা মারমুখী। কয়েকজন যাত্রীকে ঠেলে ফেলেও দেয় তারা। পিছিয়ে যাননি যাত্রীরা। পাল্টা পিটিয়েছেন। 
ওখানকার তৃণমূল এমএলএ সোমনাথ শ্যাম বেশ দাপুটে। সেটা স্থানীয় যাত্রীরা জানেন। তবুও...। সোমনাথ শ্যাম এসেছিলেন। এসে বিজেপি-র দিকে আঙুল তুলেছেন। যাত্রীদের দিকে আঙুল তুলেছেন। যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। পাবলিকও যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন। এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন। 
জোকা ইএসআই হাসপাতালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে জুতো ছুড়ে মারা সেই ভদ্রমহিলার কথা মনে আছে? কোনও সাতে-পাঁচে থাকেন না। এসেছিলেন দাঁতের ডাক্তারের কাছে। পার্থ এসেছেন শুনে রাগ সামলাতে পারেননি। ঘটনার ভিডিওটা দেখতে পারেন। পিছনে আরও একজন অতি সাধারণ মহিলাও গলা মেলাচ্ছেন। তারপর এসএসকেএম, আসানসোল আদালত, আসানসোল হসপাতাল চত্বরে অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ। বাহুবলী নেতাকে জুতো দেখানো। 'গরু চোর' স্লোগান। বোলপুরে কেষ্টকে গ্রেফতার করে আসানসোলে আনা হচ্ছে। জানতে পেরেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ সেই স্লোগান তুলেছিলেন। কলকাতা থেকে কেষ্টকে আসানসোল নিয়ে যাওয়ার পথে শক্তিগড়ের ধাবায় গাড়ি দাঁড়াতেই পাবলিক ভিড় করেছেন। এবং স্লোগান তুলেছেন।
মানুষ স্লোগান দিচ্ছেন খুল্লামখুল্লা। মিডিয়ার ক্যামেরা দেখে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন না। বরং এগিয়ে এসে বাইট দিচ্ছেন। ভয় ভাঙছে। কোথাও সংগঠিত ভাবে এই বিক্ষোভ হচ্ছে না। হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত।
শ্যামনগরের ঘটনাটা এক ধাপ এগিয়ে। সেখানকার ঘটনাটাও স্বতঃস্ফূর্ত, না হলে আগের ট্রেনগুলোতেই হত। কিন্তু নিত্যযাত্রীরা তো সংগঠিত (তাঁদের ভাল-মন্দ চেহারা প্রায় সবারই জানা)। ট্রেনে ওঠা তাঁদের অধিকার। তাতে বাধা পেতেই পাল্টা। অন্য সব ক্ষেত্রে ক্ষোভের প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু কোথাও তাতে সংগঠিত শক্তি ছিল না। শ্যামনগরে ছিল। তাই পাল্টা হয়েছে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কার্যত হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। নৈতিক জায়গাতেই ধাক্কা লেগেছে। অনেকের সঙ্গে কথা হয়। একটাই কথা, মুখ দেখাতে পারছি না। বাড়ি থেকেও বাধা আসছে। তারপরও যারা সমাবেশে ট্রেনের কামরা বন্ধ করে আসছে, তারা কতটা নিবেদিত কর্মী বুঝুন! অভিষেকের নতুন তৃণমূল! তাদেরই পিটিয়ে দিলেন নিত্যযাত্রীরা, শ্যামনগরের মতো জায়গায়।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর এতটা হয়নি। কিন্তু কেষ্ট মণ্ডল গ্রেফতারের পর হয়েছে। কেষ্ট তৃণমূলের মাসল-মানি পাওয়ারের রাজনীতির প্রতীক। তাঁর বাড়ি গিয়ে গ্রেফতার করে আনল সিবিআই। ধাক্কাটা বড্ড বড়। 
তৃণমূলের মুখপাত্র চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি বলেছেন দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। 
পোড় খাওয়া মমতা মানুষের মন বোঝেন, দলের নেতাকর্মীদের মন বোঝেন। অভিষেকের ভদ্রলোকি-ন্যাকামোতে যে পার্টি রাখা যাবে না, সেটা বুঝতে সময় নেননি। একদিন পরেই তাই মমতা বললেন, কেষ্টকে কেন গ্রেফতার করলে? কী করেছে কেষ্ট?
পার্থকে পার্টি থেকে বের করে দিয়ে ইমেজ সাফসুতরো করতে চাওয়া অভিষেককেও ছাত্র সমাবেশে বলতে হল, ২১ জুলাই আমরা সমাবেশ করলাম, পরদিনই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ইডি। মানে রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহারের অভিষোগ। ওই সমাবেশে মমতা বলেন, আজ এত ভালো বলেছে, আবার না অভিষেককে নোটিশ দেয়। অভিষেকও বলেন, ৪-৫ দিনের মধ্যে কিছু একটা হবে। 
মঙ্গলবার জানা গেল, ইডি অভিষেককে ডেকেছে। শনিবার যেতে হবে। তার মানে, মমতা অভিষেক যে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন, সেটা তো মিলে গেল! মোটেও না। অভিষেক ইডি-র নোটিশ পেয়েছেন রোববার। সেটা চেপে গিয়ে চমক তৈরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেছেন। 
সত্যি কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে এজেন্সিকে ব্যবহার করছে কেন্দ্র? আমার কোনও সন্দেহ নেই তাতে। নাহলে শুধু বিজেপি-বিরোধীদের হাতে থাকা বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী দলের নেতাদের ঘরেই কেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির হানাদারি হবে? ১১ অগাস্ট ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেন, এবার বিহারে হানা দেবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। কারণ নীতীশ সঙ্গী বদলেছেন। ঠিক তাই হল। 
দক্ষিণ থেকে পশ্চিম হয়ে এগোলে দেখুন, কেরল-মহারাষ্ট্র-তেলঙ্গনা-রাজস্থান-পঞ্জাব-দিল্লি-ছত্তিসগড়-বিহার-ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপি-র হাতে থাকা রাজ্যগুলোতেও বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সনিয়া ও রাহুল গান্ধী-পি চিদম্বরম-টমাস আইজাক-মনীশ সিসোদিয়া-অভিষেক ব্যানার্জি...কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম-আরজেডি-এনসিপি-শিবসেনা-আপ-সপা...। 
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার আগে কি কেন্দ্রীয় এজেন্সির রাজনৈতিক ব্যবহার ছিল না? অবশ্যই ছিল। মনে নেই, সুপ্রিম কোর্টের সেই 'সিবিআই তোতাপাখি' মন্তব্য? কিন্তু মোদী জমানায় সেটা শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
লোকসভায় কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পংকজ চৌধরীর দেওয়া ইডির মামলার তথ্য দেখুন।  
FEMA মামলা
২০১৪-১৫      ৯১৫
২০১৮-১৯     ২৬৫৯
২০২১-২২     ৫,৩১৩
PMLA মামলা
২০১৪-১৫      ১৭৮
২০১৮-১৯      ১৯৫
২০২১-২২     ১,১৮০
দেখা যাচ্ছে, মোদী জমানায় ED-র মামলা তো বেড়েইছে, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর বেড়েছে ভয়ংকর গতিতে।
ED-র হাতে মোট মামলা
২০১৪-১৫  ১,০৯৩
২০২১-২২  ৫,৪৯৩
ED-র সাফল্যের হার? লোকসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৭ বছরে ৫৪০০-র বেশি অর্থ তছরূপের মামলা দায়ের হয়েছে। শাস্তি হয়েছে ২৩ জনের। সাফল্যের হার ০.৫%। 
রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার নিয়ে কোনও রকম সংশয় প্রকাশ করা আদতে মোদীর বুলডোজার রাজনীতিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা। আমাদের রাজ্যে এই চেষ্টা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, 'এখানে ব্যাপারটা আলাদা। আদালতের নজরদারিতে তদন্ত করছে সিবিআই-ইডি।' বাস্তবে কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সেই সূত্র ধরে ইডি-কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভুল রাজনীতি তো সাফল্য আনতে পারে না। 
মহারাষ্ট্রের কথা ধরুন। এনসিপি আর শিবসেনার দুই মন্ত্রী গ্রেফতার হলেন। তাঁদের মধ্যে একজন নবাব মালিক শাহরুখের ছেলের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। পরে তো জানানজানি হল, টাকা নিয়ে আরিয়ানকে ফাঁসিয়েছেন এনসিবি জোনাল ডিরেক্টর। তিনি নাকি আবার জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন। যাই হোক, তারপর জোট সরকারের একাধিক বিধায়ককে আইটি-ইডি-সিবিআই নোটিশ ধরাতে শুরু করল। একদিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপ, অন্য দিকে কোটি কোটি টাকার টোপ। শিবসেনা ভাঙল। এনসিপি-কংগ্রেসের সমর্থনে চলা উদ্ধব ঠাকরের সরকারের বদলে এল বিজেপি আর দলছুট শিবসেনা বিধায়কদের নিয়ে একনাথ শিন্ডের সরকার। তারপর গ্রেফতার উদ্ধবের ডান হাত, শিবসেনার দাপুটে সাংসদ সঞ্জয় রাউথ।
টার্গেট গোয়া। টার্গেট ঝড়খণ্ড। টার্গেট দিল্লি। আপ-এর ৪০ বিধায়ককে ২০ কোটি টাকা করে দিতে চাওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রে সরকার বদলে প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর বিধায়কপদ খারিজ করতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যপাল সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ করে বসে আছেন। হয়তো তলায় তলায় চলছে বিধায়ক কেনার খেলা।
মোদীর আগ্রাসী রাজনীতি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কোনও তোয়াক্কাই নেই। সরকার দখল করতে এত হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে যারা, তাদের পিছনে ইডি-সিবিআই নেই। ওই টাকাগুলো সাদা না কালো?
২০১৪ লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার একশো দিনের মধ্যে বিদেশে সঞ্চিত সমস্ত কালো টাকা উদ্ধার করে দেশের সব নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তারপর কালো টাকা ধরতে নোটবন্দি। মোদী বলুন, কোটি কোটি কালো টাকা আসছে কেত্থেকে? (বিজেপি-র 'ভূতুড়ে' টাকা)
এরপরও বিজেপি নিজেদের সৎ বলে প্রচার করে যাবে, যেমন করছে। 
এরাজ্যেও সরকার দখলের টার্গেট নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। অভিষেকের 'নতুন তৃণমূল' গড়ার ডাককে বিচ্ছিন্ন করে দেখা ভুল হবে। অধীর চৌধুরীর বলা কথাটা আবার মনে করাতে চাইছি।
-সিবিআই শুধু তৃণমূলে দিদির লোকদের গ্রেফতার করছে। ভাইপোর লোকদের নয়। ইডি-র কাছে ৯ ঘণ্টায় সব বলে এসেছেন ভাইপো। সব মানে সব।
লক্ষ্য করার ব্যাপার, কথায় কথায় মানহানির মামলা করা অভিষেক মামলা করা তো দূরে থাক, একটি কথাও বলেননি।
গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে বলছি, তৃণমূল সরকার টিকবে না। অনেকেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন কথাটা। এখানে গোড়া থেকে মাথা, তৃণমূলের প্রায় সব নেতা দুর্নীতিতে যুক্ত। তাতে বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা হচ্ছে বিজেপি-র। হয়তো ডিসেম্বরেই রাজ্য রাজনীতিতে বড় কোনও বদল আসবে। যেভাবে চলছে তাতে লাভ হবে, বিজেপির। 
'চোর ধরো, জেল ভরো', বিজেপি-র তোলা স্লোগান তুলছে সিপিএম-ও। খড়কুটো যা পায় তাই ধরে বাঁচার চেষ্টা। তাতে যার স্লোগান তারই লাভ হচ্ছে। 
কেষ্ট ও তার মেয়ে, পার্থ ও তার প্রদীপ-প্রসন্ন, কে জেলে কী করছে, কী খাচ্ছে, কেমন হাগছে, কত তাদের টাকা, কত তাদের জমি, কত তাদের সম্পত্তি, প্রসন্নর দুই বউ...এরকম নানা 'জরুরি' খবরের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে কয়েকটা 'গুরুত্বহীন' খবর।
দুনিয়ার সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে কলকাতা দুই (এক নম্বরে দিল্লি)।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রে জলস্তর বাড়ছে। ক্রমশ জলের নিচে হারিয়ে যাবে কলকাতা।
কলকাতার মাটির নিচের জলস্তর প্রতি বছর প্রায় ১ ফুট করে কমছে। ভূগর্ভস্থ জলে বাড়ছে লোনা জলের পরিমাণ। ৫০ বছরের মধ্যে কলকাতা তীব্র জলসঙ্কটের মুখে পড়বে।
কোনও রাজনৈতিক দলের হুঁশ নেই। অথচ এর সঙ্গে জড়িয়ে আমাদের টিকে থাকা।
এগুলোই তো আজকের সময়ের রাজনীতির ইস্যু। তাতে রাজনীতিতে ভিন্নধর্মী মানুষ যুক্ত হবেন। রাজনীতির ভাবনার ধরণ পাল্টে যাবে। রাজনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। 
রাজনীতি ব্যাপারটা মোটেই খারাপ, ষড়যন্ত্র মূলক নয়। সবার না বোঝার মতোও নয়। রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপ হয়, রাজনীতির লোকেদের জন্যই। এক ধরণের রাজনীতি চায়, মানুষ রাজনীতির ব্যাপার স্যাপার না বুঝুক, রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা খারাপ হোক। তাতে সক্রিয় রাজনীতিতে কম মানুষ যুক্ত হবেন। তাতে লুটে খাওয়ার রাজের সুবিধা। খেটে খাওয়ার ক্ষতি।
কলেজে রাজনীতি করতে গিয়ে শিখেছি, কলেজের উন্নতি প্রধান বিষয়। দেখেছি, এই কাজে গভর্নিং বডি, অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্র, প্রাক্তনী সবাই মিলে কাজ হতো। রাজনৈতিক বিভেদ কোনও সমস্যাই তৈরি করেনি। কংগ্রেসের ঘোর সমর্থক অধ্যাপককে মর্নিং কলেজ চালানোর ভার দিতে এতটুকু ইতস্তত করেননি সিপিএমের লোকেদের হাতে থাকা গভর্নিং বডির সদস্যরা। 
প্রয়াত অরবিন্দ ধর (বাপি) কিংবা সঞ্জীব গুহকে (বিচ্ছু) সন্ধ্যা হলে কোনও কাজে পাওয়া যেত না। ওরা ব্যস্ত থাকত ফ্রি কোচিং ক্যাম্প নিয়ে। ছাত্রছাত্রী ধরে এসএফআই-তে যুক্ত করা বা তার ফলাও বিজ্ঞাপন করে ভোটবাক্স ভরানোর কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। গরীব ঘরের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় সাহায্য করাই এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তাতে রাজনৈতিক ফারাক সরিয়ে রেখেই অনেক মানুষ যুক্ত থেকেছেন। 
গড়িয়াতে বৃজি স্কুলের শিক্ষার মান ভাল ছিল না। নতুন হেডস্যার এলেন, নৃপেনবাবু (পদবী ভুলে গেছি)। একটা নতুন অধ্যায় শুরু হল। ৫-৬ বছরের মধ্যে স্কুলের হাল বদলে গেল। স্টার মার্কস পাচ্ছে বৃজি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। নৃপেনবাবু আমাকে বলেছিলেন, অমিয়বাবু না থাকলে সম্ভব হত না। অমিয়বাবু মানে এলাকার সিপিএম নেতা অমিয় হালদার ছিলেন স্কুলের গভর্নিং কমিটির সম্পাদক। এইট পাশ। পুরসভার জঞ্জাল বিভাগের কর্মী। ডিগ্রি তেমন না থাকলে নাকি...। নিজের এলাকাকে ভালোবাসলে, মানুষকে ভালোবাসলে অনেক ম্যাজিক হয়।
টুকরো উদাহরণগুলো দিলাম, রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে আমার ধারণা বোঝাতে।
আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগেও এরকম ধারণা নিয়ে চলা বহু মানুষ ছিলেন রাজনীতিতে। এখন এ ওর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে, ও তার ঘাড়ে। কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে তো চলছেই। রাজনীতির ক্যানভাসে আমজনতার রোজকার যন্ত্রণাগুলোর ছাপ কোথায়? লোককে টুপি পরিয়ে, এটা ওটা সেটা বলে গদি দখলের চেষ্টা। কোর্ট, ইডি, সিবিআই, পুলিশ নির্ভর রাজনীতি।

শুধু বিরোধিতার নাম তো রাজনীতি হতে পারে না। তুমি ওর কাজের সমালোচনা করছ, ভালো কথা। কিন্তু তুমি ওর জায়গায় থাকলে কী করতে সেটা বলো। 
কোনও রাজনৈতিক দলের পঞ্চায়েত স্তরের নেতা কর্মীদের কাজ কী হওয়া উচিত। সব পরিবারের কাছে খাদ্য বাসস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্যের সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা। কাজের সুযোগ তৈরি করা। তাহলে উদার অর্থনীতি ধনী গরীবের ফারাক কীভাবে বাড়াচ্ছে, বেকার বাড়াচ্ছে, গরীব বাড়াচ্ছে, সে সব সহজেই মানুষের বোঝাপড়ায় নিয়ে আসা যাবে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। একই সঙ্গে খোঁজ চলবে, গ্রামে কাজ তৈরির সুযোগ তৈরির।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, গ্রামে একটা পুকুর আছে। সেটা ভালো করে কাটিয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা। পুকুরের ওপর মাচা বানিয়ে মুরগি পালন। মুরগির বর্জ্য মাছেদের খাবার। পুকুরের চারপাশে সবজি চাষ। টাকা আসবে কোত্থেকে? ১০০ দিনের কাজ, সমবায় ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক। মাছ, মুরগি, সবজি সংগ্রহ করে কাছের শহরে নিয়ে যাবে গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে তৈরি সমবায়। শহরেও থাকবে ওরকম সমবায়। তারা বিক্রির ব্যবস্থা করবে। কতজনের আয়ের সুযোগ তৈরি করা গেল? 
আগে কোন রাস্তা তৈরি করা দরকার, কোথায় নালা তৈরি করা দরকার, তা চিহ্নিত করে পঞ্চায়েতকে সেই কাজ করতে বাধ্য করা। এভাবে বেশি বেশি করে মানুষকে যুক্ত করা, প্রান্তিক মানুষকে যুক্ত করতে পারাটাই দুর্নীতি ঠেকানোর রাস্তা। লম্বা মিছিল, প্রেস কনফারেন্স, লম্বা ভাষণে সে কাজ হওয়ার নয়। ওগুলো লোক ঠকানোর রাস্তা।
ইতিবাচক মনোভাবের সেই রাজনীতি গড়ে তোলা খুব কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন সেই ইচ্ছে। একমাত্র তাহলেই রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদল সম্ভব।হয়তো অনেকে আমাকে পাগল ভাবছেন। কিংবা ভাবছেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি। হাতেকলমে কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই কিন্তু কথাগুলো বলছি। সেরকম টুকরো কিছু ঘটনার কথা আগেই উল্লেখ করেছি। 
একটি বার ভেবে দেখুন, এরকম রাজনীতি গড়ে তোলা খুব কঠিন? 
সময় অপেক্ষা করছে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
নামহীন বলেছেন…
খুবই ও ভালো পোস্ট। কারণ ওখানে আমিও গঠনে মৎস্য সমবায়, দীনেশ মজুমদার হল তৈরি, মুরগি, হাঁস এবং সবজি চাষ সবই সংগঠিত করতে হয়েছিল। এখন আছে , কিন্তু বেআইনিভাবে সমবায় দখল করে নিয়েছে তৃণমূলীরা । সদস্যদের এখন কোন অধিকার নেই।

Top Post Ad