link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

আরএসএস স্বয়ংসেবক দেবেন দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট! Independenc-75

অনুরোধ, লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন


দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট! মজা না, সত্যি সত্যি। পৃথিবীতে কখনও কোনও দিন কোথাও এমন ভাবনা কেউ ভেবেছেন কিনা, জানি না, এ দেশে সেটাই এবার হচ্ছে। দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট!
harghartiranga.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর? ক্রমশ প্রকাশ্য।
এ বছর আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। সে জন্য বিরাট পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব।' 
১৩-১৫ অগাস্ট বাড়িতে বাড়িতে তেরঙা পতাকা। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের টুইট, ‘নাগরিকের মনে দেশভক্তির ভাবনা প্রবল করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ কর্মসূচির আওতায় বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করেছেন।' সরকারি ভবন-সহ ২০ কোটি বাড়ির মাথায় জাতীয় পতাকা ওড়ানোর পরিকল্পনা। 
বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন অমিত শাহ নিজে।
১৬ জুলাই বৈঠক করেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। ১১-১৫ অগাস্ট দেশজুড়ে স্বচ্ছতা অভিযান চালাতে বিশেষ কমিটি গড়েছে বিজেপি। 
যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার সাড়ে ৪ কোটি পতাকা তোলার পরিকল্পনা করেছে। তার মধ্যে দেড় কোটি পতাকা কিনছে পঞ্চায়েত দফতর, ৫০ লক্ষ কিনবে  নগরোন্নয়ন দফতর। এরজন্য সরকারের খরচ হবে ৪০ কোটি টাকা। বাকি আড়াই কোটি পতাকা  কিনবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বেসরকারি সংস্থাগুলো।
গুজরাট সরকার ১ কোটি তেরঙা কিনছে। দেশজুড়ে পোস্ট অফিস থেকে জাতীয় পতাকা বিক্রির পরিকল্পনা হয়েছে।
২ অগাস্ট, ২০২২ থেকে তেরঙা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি নেতা এবং অনেক মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের ডিপি। ২-১৫ অগাস্ট সবাইকে তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল তেরঙা করার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। 
তেরঙা।
২২ জুলাই, ১৯৪৭ গণপরিষদের অধিবেশনে তেরঙা আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়।
১৪ অগাস্ট, ১৯৪৭ আরএসএস-এর মুখপত্র 'অর্গানাইজার' লিখল, 'ভাগ্যের জোরে যাঁরা ক্ষমতায় চলে এসেছেন, তাঁরা আমাদের হাতে তেরঙা ধরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু তা কখনও হিন্দুদের শ্রদ্ধা পাবে না এবং তাঁরা নিজের বলে মানবেও না। তিন সংখ্যাটাও অশুভ। তিন রঙের পতাকা খারাপ মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলবে এবং তা দেশের পক্ষেও ক্ষতিকারক হবে।' 
(পড়ুন: The RSS and the tricolour)
আরএসএস-এর দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক, এম এস গোলওয়ালকারের বই ‘বাঞ্চ অব থটস’, সংঘের আদর্শগত বোঝাপড়ার অন্যতম দলিল। সেখানে লেখা, ‘আমাদের নেতারা দেশের জন্য একটি নতুন পতাকা ঠিক করেছেন। কেন করতে গেলেন?...আমরা প্রাচীন, মহৎ এক জাতি। গৌরবময় অতীত আমাদের। তখন কি আমাদের নিজেদের কোনও পতাকা ছিল না? এই হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের কি কোনও জাতীয় প্রতীক ছিল না? নিশ্চয়ই ছিল। তা হলে এই শূন্যতা, এই চরম মানসিক শূন্যতার অর্থ কী?’ প্রাচীন কোন পতাকা বা জাতীয় প্রতীক, গোলওয়ালকর অবশ্য সে কথা স্পষ্ট করে বলেননি।
১৯৪৬ সালের ১৪ জুলাই নাগপুরে গুরুপূর্নিমার জমায়েতের সামনে গোলওয়ালকার বলেছিলেন, 'আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস একদিন গোটা জাতি এই গেরুয়া পতাকার সামনে নতজানু হবে।'
দুইয়ে দুইয়ে চার করলেই বোঝা যায় গোলওয়ালকার তেরঙার বদলে কোন পতাকার কথা বলেছেন।
নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা আরএসএস-এর গর্বিত স্বয়ংসেবক। তাঁদের এখনকার তেরঙা প্রীতি ভণ্ডামির বড়সড় উদাহরণ। 
কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন। ১৯২৯
১৯২৯ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে সভাপতি হন জওহরলাল নেহরু। প্রথম বার পূর্ণ স্বরাজের প্রস্তাব পাশ হল কংগ্রেসের অধিবেশনে। পরের বছর থেকেই ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়। সেদিন তেরঙাকে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
হেগরেওয়ারের নির্দেশ
সেসময় সংঘের প্রধান ডঃ কেশব বলিরাম হেগরেওয়ার সংঘের সমস্ত শাখাকে পাঠানো সার্কুলারে
নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২৬ জানুয়ারি, ১৯৩০, রবিবার সন্ধ্যা ছটায় স্বয়ংসেবকরা এক জায়গায় মিলিত হয়ে জাতীয় পতাকা অর্থাৎ গেরুয়া পতাকাকে সম্মান জানাবেন। স্বাধীনতার আসল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখতে হবে। 
(পড়ুন: Which Hedgewar?)
(স্বাধীনতা আন্দোলনে আর এস এস, হিন্দু মহাসভার মতো সংগঠনগুলোর ভূমিকা এখানে আলোচনা করছি না।)
স্বাধীনতার পর আর এস এস প্রথম বড়সড় সভা করে ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ দিল্লির রামলীলা ময়দানে। সেখানে তেরঙা জাতীয় পতাকার বদলে তোলা হয়েছিল গেরুয়া ঝান্ডা। 
২০১৮ সালে গুজরাটে সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার উঁচু (৬০ তলা বাড়ির সমান) বসিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিন হাজার কোটি টাকার বেশি খরচে তৈরি হয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু মূর্তি এই 'স্ট্যাচু অব ইউনিটি'। প্যাটেল ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী খুনের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় আরএসএস। তুমুল ক্ষিপ্ত সর্দার প্যাটেল আরএসএস প্রধান গোলওয়ালকরের কোনও অনুরোধে কান দেননি। শেষ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে, গোপন কাজকর্মে যুক্ত হবে না, হিংসা ছাড়বে-এই তিন আশ্বাসের সঙ্গেই  'ভারতের সংবিধান ও জাতীয় পতাকার প্রতি বিশ্বস্ততা'-র কথা স্বীকার করতে হয় আরএসএস-কে। তারপর ১১ জুলাই, ১৯৪৯ নিষেধাজ্ঞা তোলে কেন্দ্র।
সংঘের প্রথম লিখিত সংবিধানের ৫ নম্বর ধারায় লেখা হয়, রাষ্ট্রের পতাকার প্রতি বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাশীল থাকা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য মেনে নিয়েও সংঘের নিজস্ব পতাকা থাকবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হিন্দু সংস্কৃতির প্রতীক 'ভাগওয়া ধ্বজ' (গেরুয়া পতাকা)।
খেয়াল করে দেখুন, কোথাও জাতীয় পতাকা শব্দটা লেখা হল না। লেখা হল, রাষ্ট্রের পতাকার।
২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি 'রাষ্ট্রপ্রেমী যুব দলের' তিন সদস্য বাবা মেন্ধে, দিলীপ ছাট্টানি এবং রমেশ কালাম্বে নামে তিন যুবক নাগপুরে আরএসএস-এর সদর দফতরে ঢুকে পড়েন।  স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা পকেট থেকে তেরঙা বের করেন। বেশ কয়েকজন স্বয়ংসেবক তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারমধ্যেই তাঁরা জাতীয় পতাকা তোলেন।
তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী এক স্বয়ংসেবক অটলবিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু আরএসএস সদর দফতরে প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা তোলা হয় না। তিন যুবকের কাণ্ডে সে কথা জানাজানি হয়ে যেতেই পরের বছর থেকে দফতরে জাতীয় পতাকা তোলা শুরু করে আরএসএস।
(কী ভাবে আরএসএস দফতরে স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন: ২০১৭ সালের অভিজ্ঞতা জানতে পড়ুন:
RSS and patriotism: Saffron over tricolour)
সে সব যে লোক দেখানো সেটা স্পষ্ট ২০১৫ সালে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের কথায়। তিনি বলেন, 'বিআর আম্বেদকারও মনে করতেন গেরুয়া পতাকাই জাতীয় পতাকা হওয়া উচিত। সংস্কৃত হওয়া উচিত জাতীয় ভাষা। দুর্ভাগ্য আমরা সেটা বোঝাতে পারিনি।' 
২০ মে, ২০১৯ তত্কালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার হেগড়ে বলেছিলেন, 'কাউকে হারানো, এমনকী শাসন করাও আমাদের (বিজেপি) লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। আমাদের সামনে গেরুয়া পতাকা ওড়াতে হবে। সারা দুনিয়া গেরুয়া ঝাণ্ডাকে সম্মান করবে।'
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ কর্নাটকের মন্ত্রী কে এস ইশ্বরাপ্পা বললেন,'একসময় রামমন্দির তৈরির কথা বললে লোক হাসত। এখন রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে তো। একদিন না একদিন আমরা লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা হিসেবে তেরঙা পতাকা তুলব।'
৩০ মে, ২০২২। ততদিনে খুনে অভিযুক্ত ইশ্বরাপ্পা মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। আবার বললেন, 'গেরুয়া পতাকাই একদিন জাতীয় পতাকা হবে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে আমরা সেই ঐক্যের প্রার্থনা করি। মুখ আর মুখোশের ফারাকটা স্পষ্ট।
এবছরের ৩১ মার্চ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুষ্ঠানে আরএসএস নেতা কাল্লাদকা প্রভাকর ভাট বলেন, 'কোনও একদিন গেরুয়া পতাকা আমাদের জাতীয়  পতাকা হতেও পারে। হিন্দু সমাজ একজোট হলে এটা সম্ভব। কংগ্রেস নিজের স্বার্থেই তেরঙাকে দেশের পতাকা বেছেছে। ব্রিটিশ জমানায় ইউনিয়ন জ্যাক ছিল ভারতের পতাকা। তার আগে আমাদের পতাকায় ছিল সবুজ তারা ও চাঁদ। ভবিষ্যতে ফের পতাকার রং বদলাতেই পারে। লোকসভা ও রাজ্যসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ভোট দিলে জাতীয় পতাকা বদলে দেওয়া যায়।' 









এই হল আরএসএস-এর মনের ইচ্ছে। সেই সংগঠনের স্বয়ংসেবক নরেন্দ্র মোদী এখন তেরঙা নিয়ে তুলকালাম করছেন। ভণ্ডামি ছাড়া আর কী! তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, নরেন্দ্র মোদীরা তেরঙাকে গভীর শ্রদ্ধা করেন। তাহলে তো তাঁদের বলা উচিত আরএসএস-এর আগের বক্তব্যগুলো ভুল ছিল? 
আসলে একদম কর্পোরেট ধাঁচে চলছে তেরঙার আবেগকে কাজে লাগিয়ে দেশপ্রেম তৈরির প্রকল্প।  ১৩-১৫ অগাস্ট বাড়িতে তেরঙা তুললে পাওয়া যাবে সার্টিফিকেট। আরএসএস-এর স্বয়ংসেবকরা দেবেন দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট! দেশপ্রেমকে পণ্য করে চলছে রাজনৈতিক ফয়দা লোটার পরিকল্পনা।



 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
Suman Chakraborty বলেছেন…
সরকারে থাকতে হলে সংবিধান এবং জাতীয় পতাকা কে মেনে নিতেই হবে। সরকার যদি প্রতিটি বাড়িতে পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচি নেয়, তাতে কোনো ক্ষতি দেখি না।

Top Post Ad