link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

মিথ্যার মুখোশে ভয়ঙ্কর মুখ ঢাকার চেষ্টা #Har-Ghar-Tiranga #Modi-Must_reply

শুরুতেই অনুরোধ, লেখা ভাল লাগলে পরিচিতদের শেয়ার করুন

যাঁরা আমাকে ব্যক্তিগত ভাব চেনেন বা লেখা পড়ে চিনছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মানবেন যে আমি খানিকটা পুরনোপন্থী। বুঝতে পারি, আমার ভাবনাচিন্তাগুলোও খানিকটা বেয়াড়া, খানিকটা গোঁয়ারের মতো।
এই যেমন ধরুন, সবাই ব্যস্ত পার্থ-অর্পিতা-'চোর ধরো, জেল ভরো'-খিল্লি- মিম ইত্যাদি নিয়ে, আমি তখন বলে যাচ্ছি অধিকারের আন্দোলন ছাড়া কোনও বদল আনা সম্ভব নয়। বলে যাচ্ছি, কীভাবে দেশপ্রেম বেচতে নেমেছে কেন্দ্র। হয়তো অনেক কিছু সহজেই মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু কেন জানি না, মানতে পারি না। তারমধ্যে একটা হল, দ্বিচারিতা। নিজের বোধগুলোকে বেঁধে রাখা যায়?
আগের লেখাটা পড়ে এক বন্ধু বলেছেন, সরকার প্রতিটা বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে চাইলে ক্ষতি কী? সত্যিই তো কোনও ক্ষতি নেই। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর উদযাপনে হইচই তো হতেই পারে। 'হর ঘর তেরঙ্গা' নিয়ে আমার কোনও প্রশ্ন নেই। আমার খটকা অন্য জায়গায়। আরএসএস মনে করত (এবং এখনও করে) তেরঙা জাতীয় পতাকা হতে পারে না। তিন অপয়া। তেরঙা হিন্দুদের শ্রদ্ধা পেতে পারে না। তাঁদের মত, জাতীয় পতাকা হওয়া উচিত সংঘের গেরুয়া ঝাণ্ডা। প্রধানমন্ত্রী আরএসএস-এর বহু বছরের স্বয়ংসেবক। তাঁর মত ভিন্ন হতে পারে না। 
মোহন ভাগবত ও নরেন্দ্র মোদী
তারপরেও কেন এই হইচই? সেখানেই আসছে প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি দেশপ্রেম বিক্রি করতে চাইছেন? বাড়িতে জাতীয় পতাকা তুললে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট? দেশপ্রেম তো অনুভবের বিষয়। জাতীয় পতাকা তুলে সার্টিফিকেট না নিলে দেশপ্রেমী হওয়া যাবে না? জাতীয় পতাকা তুলে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হবে? ব্যক্তিগত ভাবে বেশ কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে জানি (চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের নেতা গণেশ ঘোষ, কল্পনা দত্ত, অনন্ত সিং, সুবোধ রায়, সেলুলার জেলে বন্দি থাকা নিরঞ্জন সেনগুপ্ত, সুধাংশু দাশগুপ্ত, আমার কুট্টিদাদু নরেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ) যাঁরা স্বাধীন ভারতে কখনও জাতীয় পতাকা তোলেননি। তাঁরা দেশপ্রেমী নন? আমার মতে, অনুভবে দেশপ্রেম না থাকলেই শুধু এরকম কর্পোরেট ধাঁচের দেখনদারি দেশপ্রেমের পরিকল্পনা করা যায়। প্রকৃত অর্থে কোনও দেশপ্রেমীর মাথায় এরকম ভাবনা আসতেই পারে না। (অমিতাভ-বিরাট-অনুষ্কা-অক্ষয়-অনুপমরা...)

জরুরি অবস্থার সময় ছদ্মবেশে মোদী
যাঁরা আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁরাই হঠাৎ ২০১৪ সালের পর থেকে নিজেদের সাচ্চা দেশপ্রেমী বলে জাহির করছেন। তাঁরাই সবাইকে বাধ্য করতে চাইছেন তাঁদের মেকি দেশভক্তিতে শামিল হতে। নাহলে '...গোলি মারো সালে কো'। কখনও সিনেমা হলে জাতীয় পতাকা ওড়ানো, কখনও সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি তেরঙা করা, কখনও বাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সার্টিফিকেট জোগাড় করা। এই অতিভক্তির পিছনে লুকিয়ে আছে আরএসএসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। মহাত্মা গান্ধী খুনের পর আরএসএস সম্পর্কে কঠোর মনোভাব নিয়েছিলেন প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল। সরকারি খরচে সর্দার প্যাটেলের বিশাল মূর্তি বানিয়ে সেই সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। ওই আরএসএস-এর গর্বিত স্বয়ংসেবক আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক মোদী
শুরু হয়েছে নির্বিচারে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া, ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়ার পরিকল্পিত খেলা। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বছর দুয়েক ধরে ‘নিউ ইন্ডিয়া সমাচার’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করছে। অনেকগুলো ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাটি বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। পত্রিকার ১-১৫ জানুয়ারি, ২০২২ সংখ্যায় ‘নতুন ভারতের অমৃত যাত্রা’ নামে নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘ভক্তি আন্দোলনই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা করেছিল। ভক্তি যুগে স্বামী বিবেকানন্দ, চৈতন্য মহাপ্রভু, রমণ মহর্ষি আধ্যাত্মিক জাগরণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এটাই ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করেছিল।’ আমরা তো ইতিহাস জানি না। জানলেও সব সময় মনে রাখা সম্ভব হয় না। মহাবিদ্রোহ হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। বিবেকানন্দের জন্ম ১৮৬৩ সালে। রমণ মহর্ষির জন্ম ১৮৭৯ সালে। 
সেই সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন
এটা কোনও ভুল নয়, ইচ্ছা করে লেখা। অমৃত মহোৎসব উদযাপনের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের শিখা জ্বালিয়ে রাখার কাজটি করেছিলেন দেশের সন্ত, মহন্ত, আচার্যরা। একদিক থেকে ভক্তি আন্দোলনই গোটা দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত তৈরি করেছিল।’ 
ভক্তি আন্দোলন কোন সময়ের? পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী। তখনও পলাশীর যুদ্ধই হয়নি। স্বাধীনতা আন্দোলন তো অনেক দূরের কথা। আসলে  মুঘলদের বিরুদ্ধে হিন্দু শাসকের লড়াইকেও স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে দেখাতেই এই কাণ্ড। সরকারি পত্রিকার ওই নিবন্ধে স্পষ্টই লেখা হয়েছে, ‘স্বাধীনতা আন্দোলন শুধু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ ছিল না। তার আগেও ভারত দাসত্বের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।’ উত্তরপ্রদেশের রাজা সুহেলদেব, যিনি ব্রিটিশ জমানার অন্তত ৮০০ বছর আগে এক মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তাঁকেও ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ওই নিবন্ধে। সরকারের বক্তব্য, ‘এই সব অনামী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা প্রচার করতেই অমৃত মহোৎসব উদযাপন।’ ওই নিবন্ধে লেখা হয়েছে, 'এখন অমৃত কালে দেশে আবার আধ্যাত্মিক জাগরণ হচ্ছে। এই আধ্যাত্মিক জাগরণই ভারতের পুনর্নির্মাণের ভিত হিসেবে কাজ করবে।’ 
নরেন্দ্র মোদীদের মনের কথাটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
'হর ঘর তেরঙা' পালনে দেশের জাতীয় পতাকা বিধি বদলে দিয়েছে মোদী সরকার। আমাদের জাতীয় পতাকা দিবস ২২ জুলাই। ঠিক তার পরের দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ​​ভাল্লা নির্দেশিকায় জানিয়েছেন, ‘২০ জুলাই, ২০২২ আদেশ জারি করে ভারতের পতাকা বিধি সংশোধন করা হয়েছে।' এতদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তই শুধু জাতীয় পতাকা ওড়ানো যেত। এখন ওড়ানো যাবে ২৪ ঘণ্টা। এখন ‘জাতীয় পতাকা চরকা এবং হাতে বোনা বা যন্ত্রে তৈরি, সুতি-পলিয়েস্টার-উল-সিল্ক-খাদি-বান্টিং কাপড় দিয়ে তৈরি করা যাবে।’ এতদিন যন্ত্রে তৈরি এবং পলিয়েস্টারের জাতীয় পতাকা  ব্যবহার করা যেত না। 
কর্নাটকে তৈরি হচ্ছে খাদির পতাকা
২০০৬ সালে আইএসআই শংসাপত্র পাওয়া কর্নাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘই এতদিন জাতীয় পতাকা তৈরির একমাত্র সংস্থা ছিল। তাঁরা বলছে, বছরে প্রায় ৪ কোটি পতাকার অর্ডার পায়। শেষ মুহূর্তে পতাকা বিধি বদল হওয়ায় তাদের তুমুল ক্ষতি হবে। ভবিষ্যতেও তাদের চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। কম দামী পলিয়েস্টারের পতাকা ছেড়ে কে কিনবে খাদির পতাকা? যন্ত্রে তৈরি বা পলিয়েস্টারের জাতীয় পতাকাকেও জিএসটি আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
কেন্দ্র ব্যস্ত জাতীয় পতাকার ব্যবসায়। অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। অন্তত ৩০টি অনলাইন পোর্টালে পাওয়া যাচ্ছে তেরঙা।
এ প্রসঙ্গে দুটো তথ্য জানাই। দেশে সবচেয়ে বড় পলিয়েস্টার উৎপাদক কে? মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স (বিস্তারিত জানতে পড়ুন)। কংগ্রেস, ওয়াইএসআর কংগ্রেস সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের আশঙ্কা, কম দামে পলিয়েস্টারে তৈরি তেরঙা আসতে পারে চিন থেকে। চিনের বিরুদ্ধে গরম গরম ভাষণ শোনা যায়। ২০২২ আর্থিক বছরে চিন থেকে আমদানি ২০২১ অর্থবরষের তুলনায় বেড়েছে ৪৫.৫১%। গত ৫ বছরে বেড়েছে ২৯%। নরেন্দ্র মোদীর 'আত্মনির্ভর ভারত'-এ 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' তো একেই বলে।
বরাবর দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করা আরএসএস এখন ভাবমূর্তি বদলাতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য কিন্তু বদলায়নি। সেজন্য নির্বিচারে দেশের ইতিহাস বদলে দিচ্ছে, বিকৃত করছে। 
পার্থ অর্পিতার চুরি নিয়ে মেতে আছি আমরা। দেশের ইতিহাস চুরি কিন্তু তার চেয়েও অনেক বড় কেলেঙ্কারি। তাতে ক্ষতি কয়েকশো গুণ বেশি। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
SUJOY বলেছেন…
সব রাজনৈতিক দলের কিছু Hidden agenda থাকে । কংগ্রেসের যেমন আছে, বিজেপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ও আছে । প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী যেমন দেশ ভাগের পর Secularism কে সামনে রেখে একটি বিশেষ সম্প্রদায় কে ভোটের জন্য সংবিধান সংশোধন করে দিয়েছেন , ইয়াসিন মালিক দের ইন্ধন দিয়ে গেছেন , বিজেপি ও তার পাল্টা দেবে সেটাই স্বাভাবিক । বাংলাদেশ আর আমাদের দেশের শেষ ৫০ বছরের Minority দের পরিসংখ্যান দেখলেই সেটা বোঝা যায় । দুটো দেশ ই কিন্তু Specular বলে নিজেদের দাবি করে । অমিতাভ বচ্চন রা যেমন একটা দিক, স্বরা ভাস্যর, নাসিরউদ্দিন শাহ তাঁরা আবার আরেকটা দিক । আর জাতিও পতাকা আমি যেটা মনে করবো সেটাই কিনবো । কারা তৈরি করছে তাদের লাভ ক্ষতি আমি কি কারণে দেখতে যাবো । Pay Commission অনুযায়ী সরকারতাদের কর্মীদের DA বা Salary আকাশ ছোঁয়া করে দিয়েছে । বাজারে ইলিশ মাছ খাবার ক্ষমতা সরকার যদি একটা শ্রেণী কে দিয়ে থাকে তাহলে Corporate দের ছাড় দিলে সেখানে ক্ষতি কোথায় ?

Top Post Ad