কালীসেবক রামকৃষ্ণের বাংলায় কিছু অর্বাচীন এখন কালীর অবমাননার অভিযোগে থানায় ছুটছে এফআইআর করতে। বলা ভাল, তাদের সংগঠিত ভাবে ছোটানো হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র তো বলেছেনই তো, পারলে তাঁর কথা ভুল প্রমাণ করে দেখাক বিজেপি। সে রাস্তায় তো হাঁটছেন না সুকান্ত মজুমদার-শুভেন্দু অধিকারীরা। তাঁরা আর তাঁদের চ্যালাচামুন্ডারা দেখছি কালীকে রামকৃষ্ণের চেয়েও বেশি উপলব্ধি করছেন!
‘কালীঘরে ধ্যান করতে করতে দেখলুম রমনী খানকি! বললুম, মা তুই এইরূপেও আছিস।
তাই বলছি, সব মানতে হয়। তিনি কখন কীরূপে দেখা দেন, সামনে আসেন বলা যায় না।’
এই কথাটা মহুয়া মৈত্র বলেছেন বলে বাজারে ছেড়ে দিলে কুরুক্ষেত্র বেধে যাবে। কিন্তু কথাটা রামকৃষ্ণের।
এই হল রামকৃষ্ণের কালী-উপলব্ধি। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এব্যাপারেই বলেছেন, 'এই চেতনাই বাংলার কালীপুজোয় দেখা যায়।'
এক অর্বাচীন নির্মল মাজি মমতা ব্যানার্জিকে মা সারদার সঙ্গে তুলনা করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী বললেন, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। পরের দিনই বেলুড় মঠ প্রতিক্রিয়া জানাল। তাতে নির্মলই জাতে উঠলেন। মমতাও নির্মলকে কিছু বললেন না। মিশন সেই নীরবতা সম্পর্কেও নীরব। আবার এই যে কালী নিয়ে যা হচ্ছে, সে তো আরও অনেক ব্যপ্ত বিষয়। ভাবছিলাম, রামকৃষ্ণ মিশনের (Ramakrishna Mission) কিছু বলার নেই? তাঁদের তো বানিয়ে কিছু বলতে হবে না। রামকৃষ্ণের উপলব্ধিটুকুই শুধু বলবেন। আজ মিশনের অনুষ্ঠানে মোদীর ভাষণের পর সব স্পষ্ট হয়ে গেল।প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অমিত মালব্যের টুইট। তারপর জবাব মহুয়া মৈত্রের। 'বিজেপির ট্রোল-ইন-চার্জকে বলব আপনার প্রভুকে বলে দিন, যে বিষয়ে জানা নেই, সে বিষয়ে বেশি কথা না বলাই ভাল। দিদি ও দিদি বলে ওরা জুতো খেয়েছিল। এবার বেশি মা-মা করলে বুকে লাথি খেতে হবে।'
রাজনীতির জবাব রাজনীতির ভাষায়। যদিও মহুয়ার ভাষাটাকে শালীন বলতে পারছি না। শালীন শব্দ বলা উচিত কী না তা নিয়েও অবশ্য আমার ধন্দ আছে। মনে আছে প্রধানমন্ত্রীর কথাটা? 'পোশাক দেখলেই বোঝা যায় করে হিংসা ছড়াচ্ছে।' যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও অনায়াসে একটি সম্প্রদায়কে অপমান করতে পারেন, তিনি কি সম্মান দাবি করতে পারেন?
 |
| সত্যজিৎ রায় ও রাজ চক্রবর্তীর ছবির দৃশ্য |
ছোটবেলা থেকে কত দেখেছি, শিব বা কালী বিড়ি টানতে টানতে যাচ্ছেন কিংবা বাইকে সওয়ার। সত্যজিৎ রায় (Kapurus Mahapurus by Satyajit Roy) বা রাজ চক্রবর্তীর (Bojhe na se Bojhe na by Raj Chakraborty) সিনেমাতেও তো আছে সেরকম দৃশ্য ভাবনা। তাতে আগে তো এরকম আবেগ আহত হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। এতো বাংলার সংস্কৃতিতে মিশে আছে। এখন হচ্ছে। কেন? কারণ রাজনৈতিক কারণে হওয়ানো হচ্ছে। এখন না আবার সত্যজিৎ, রবি ঘোষ, রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠুকে দেওয়া হয়! রাজ তো আবার তৃণমূলের বিধায়কও। |
| সিগারেটের বিজ্ঞাপন |
স্বদেশী আন্দোলনের সময় কলকাতার ইস্ট ইন্ডিয়া সিগারেট কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে হিন্দুদের ‘বিশুদ্ধ স্বদেশী’ কালী সিগারেট টানতে বলেছিল। তখন তো অবমাননার কথা শোনা যায়নি। তখন কি কালীর প্রতি ভক্তি কম ছিল? নাকি ভক্তদের জাগরণ হয়নি? ডাকাত বা বিপ্লববাদী স্বাধীনতা যোদ্ধাদের অনেকেই তো তখন কালী পুজো করে ‘অপারেশনে’ যেতেন। মানে তখন কালীভক্তদের ‘দম’ মোটেই কম ছিল না। আসলে তাঁদের মানসিক উদারতা ও জ্ঞানবুদ্ধি এখনকার স্বঘোষিত রাজনৈতিক কালী ভক্তদের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি ছিল।মহুয়ার পাশে নেই তাঁর দল তৃণমূল (Trinamul Congress)। সিপিআইএমের (CPI-M) রাজ্য সম্পাদক সেই কালী সিগারেটের বিজ্ঞাপনের কথা টুইট করেও তুলে নিয়েছেন। ভয়, ভয়, ভয়...। ওদিকে আবার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের (Dakshineswar kali tempel) নামে ফেক টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে বলা হয়েছে, সেখানে কালীকে ওয়াইন দেওয়া হয়। সেটা আবার রিটুইট করে বসেছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। পরে সেই ফেক অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে টুইটার।
আসলে পুরো ব্যাপারটায় ধর্ম এক আনাও নেই। ষোল আনাই রাজনীতি।
মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee) আবার সুভাষচন্দ্রের ভুল করার অধিকার ইত্যাদি বলে মহুয়াকে চুপ থাকার বার্তা দিতে চেয়েছেন। সবক শেখাতে চেয়েছেন। কেন? এভাবে বিতর্ক এড়াতে এড়াতে আপোষ করতে করতে কোথায় গিয়ে থামব আমরা?
মাননীয়া, ওই যে ভদ্রলোকের কথা বললেন, সেই সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন পরম কালীভক্ত। তিনি মানুষকে চিনতেন, বাংলাকে চিনতেন, ভারতকে চিনতেন। তাই কারণে-অকারণে তাঁর ধর্ম অবমাননা হত না। অনায়াসে সব ধর্মের মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারতেন। আবার ধর্মকে রাজনীতিতে জুড়তে চাওয়ায় শ্যামাপ্রসাদের মিটিং ইট মেরে ভেস্তে দিতেন সুভাষের দলের লোকেরা। একবার শ্যামাপ্রসাদের টাকও নাকি ফেটে গিয়েছিল।
অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বলেছেন, ‘কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে এমন কিছু করা উচিত নয়’। সায়নী নিজেই তো সে কাজ করেছেন শিবলিঙ্গের মাথায় কন্ডোম পরিয়ে। সে কাজ করেছেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিশূলে কন্ডোম পরিয়ে (Controversy over Sayani Ghosh and Srijato Banerjee)। সেগুলো ছিল অপরাধ। কারণ সেগুলো কোনও না কোনও ধর্মের মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করেছে। মমতা নূপুর শর্মার গ্রেফতারি দাবি করেছেন। ঠিক করেছেন। একই কারণে সায়নী, শ্রীজাতদেরও তো জায়গা হওয়া উচিত ছিল জেল। কিন্তু তাঁদের আড়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। সায়নী তো এখন আবার তাঁর দলের যুব সভানেত্রী। তাতে লাভ হয়েছে মৌলবাদী শক্তিরই।
লীনা বা মহুয়া তেমন কিছুই করেননি। দক্ষিণ বা পূর্ব ভারতের ঐতিহ্যের বাইরে কিছু করেননি, কিছু বলেননি। মিথ্যেও কিছু বলেননি। কালীকে অপমানও করেননি।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনার বাড়িতেও তো কালী পুজো হয়। বলুন না, লীনা বা মহুয়া ভুলটা কী বলেছেন বা করেছেন? ভোট হারানোর ভয়ে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে পারছেন না?
 |
| মহুয়ার টুইট |
পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির কথা প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।
‘মহুয়া মিত্র একজন অত্যন্ত ডিগনিফায়েড মহিলা। বড়মাপের সাংসদ। তিনি ভগবানকে ওয়াইন দেওয়া হয় সে কথা বলেছেন। একদিক থেকে সে কথা বলতে পারেন। তবে পাবলিকলি এটা বলা যায় না। কারণ, তান্ত্রিক সাধনমার্গে অনেক গূঢ় রহস্য আছে। যেগুলি আমরা কেন অনেকেই জানেন না। ওনারা মদ্য, মাংস নিবেদন করেন দেবীকে। কিন্তু কালীপুজোর নানা ধরণ আছে। শুধু তান্ত্রিকি কালী তো নয়, দক্ষিণা কালী আছে, রামকৃষ্ণদেব পুজো করতেন। কালী যেহেতু শক্তির দেবতা তাঁর কাছে এসব উপাচার চলতেই পারে। তান্ত্রিক উপাচারে যে পুজো হয় সেখানে মদ্য-মাংস নানা কিছু আছে। বৈরভী চক্র আছে। স্ত্রী লোকের ব্যাপার আছে। এগুলো তো গূঢ় রহস্যের ব্যাপার। এগুলো কী আমরা বিচার করব? সাধনমার্গকে বিচার করব?
রামচন্দ্র বৈষ্ণব দেবতা হিসাবে গণ্য হয়েছেন। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন রামচন্দ্র কি মাছ মাংস খেতেন? কী বলব? খোদ রামায়ণের মধ্যে যে বর্ণনা আছে তিনি পাঁঠা, ভেড়া, কুকুর, ময়ূরের মাংস খেতেন। যেদিন সীতা হরণ হচ্ছেন সে’দিনও দু’খানা হরিণ মেরে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তো ক্ষত্রীয়। আমি কি বলব রামচন্দ্র (Ramchandra) একজন মদ্য-মাংস প্রিয় লোক ছিল? পাবলিকলি সাধনমার্গের কথা বলা ঠিক না। এমনকী যেখান থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। বহুরূপী বাইরে সিগারেট খাচ্ছে। কালী সিগারেট খাচ্ছে, এই ছবিটা কেন দেবে?
এই যে একটা বিরাট ভাবের জগৎ, সেই ভাবকে, সেই আবেগকে এই রকম নোংরামি দিয়ে প্রকাশ করা মারাত্মক অপরাধ।’
কে নোংরামো করল নৃসিংহবাবু? আপনার কথাতেই তো স্পষ্ট, কালীর নানা রূপ। লোকসংস্কৃতির বাইরে কিছু করেছেন লীনা? মহুয়া তান্ত্রিক কালীকে ভালোবাসলে সেটা বলতে পারবেন না? আপনার কথাতেই তো স্পষ্ট মহুয়ারা ভুল বলেননি।
আপনি কী বললেন,
‘যাঁরা এটা করছেন তাঁরা সস্তা প্রচারের জন্য করছেন। শুধু হিন্দু ধর্ম বলেই এই রকম কাজ করে এখনও বেঁচে আছেন। অন্য কোনও ধর্ম নিয়ে এমন করে দেখুন না একবার।’
পণ্ডিতের ঝোলা থেকে বেড়ালটা বেরিয়ে পড়ল। ভিনধর্মীদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ, যেটা ছড়ান ধর্মব্যবসায়ীরা, ধর্ম নিয়ে রাজনীতির কারবারিরা, সেটা দেখছি তাঁরও স্টকে আছে।
মুসলিম মৌলবাদীদের তাণ্ডবেই তসলিমা নাসরিনকে (Taslima Nasreen) কলকাতা ছাড়তে হয়েছে। এখনও তিনি অজ্ঞাতবাসে। ফেসবুকে তিনি লিখলেন,
‘দুঃখ এই, হিন্দুরা দিন দিন মুসলমান হয়ে উঠছে। হিন্দুদের যে জিনিসটা আমার ভাল লাগে তা হল, তাঁদের ভগবানকে যে যেই রূপেই দেখুক, যে যেভাবেই কল্পনা করুক, এমনকী ভগবানকে যা খুশি তাই বলুক, তাতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। কারণ তাঁদের গল্পে ভগবানদের নানা রকম কীর্তি-কাহিনির কথা লেখা। তারা, মানুষের মতোই কখনও ভাল কাজ করে, কখনও মন্দ কাজ করে। আদিকাল থেকে মানুষ এক ভগবানকে মেনেছেন, আরেক ভগবানকে মানেননি। অথবা সব ভগবানেরই সমালোচনা করেছেন।
এখন অনেকে বলছে এই ভগবানের গায়ে কাপড় নেই কেন, ওই ভগবানের মুখে সিগারেট কেন, সেই ভগবান সম্পর্কে সে কেন অমন কথা বলল, এতে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। সুতরাং আঘাতকারীর মুণ্ড চাই। এটা হিন্দুরা শিখেছে উগ্র-মুসলিমদের কাছ থেকে। অথচ অনুভূতিতে আঘাত লাগার অজুহাতে উগ্র-মুসলিমদের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরর, ফাঁসি চাই, মুণ্ড চাইকে ওঁরা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। যা ঘৃণা করো, তা গ্রহণ করো কেন, শুনি!’
তসলিমার প্রশ্নটা অস্বীকার করা যায়? হিন্দুরা নামে তো হিন্দু পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা চলছে। তাই উদারতা-সহিষ্ণুতা বাদ। ঘৃণা বিদ্বেষের একচেটিয়া কারবার।
রবীন্দ্রনাথ অনেকেই পড়েন।নানা জনের কাছে তিনি নানা রকম। কারও কাছে প্রেমিক। কারও কাছে বিদ্রোহী। কারও কাছে দার্শনিক, কারও কাছে শান্তির আশ্রয়।যে কোনও দেবদেবীর মতো হজরত মহম্মদ বা গৌতম বুদ্ধ বা মহাবীরও তাই। ধর্ম মানতে হলে সহিষ্ণু হতে হবে। মহানবীর সম্মান এতই ঠুনকো?
ঠিকই তো, ধর্মের নামে উগ্রতা মুসলিমদের একাংশের মধ্যে দেখা যায়। ধর্মীয় কারণকে সামনে রাখা হলেও সেটা হয় মূলত রাজনৈতিক মদতেই। নূপুর বিতর্কে আরবের দেশগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে (সাধারণত ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না)। কিন্তু কোথাও কোনও হামলা হয়নি। প্রতিবেশী বাংলাদেশেও না। পাকিস্তানে একটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। আবারও বলছি, সমস্যাটা সম্পূর্ণই রাজনৈতিক। ধর্মের সঙ্গে কোনও সম্পর্কে নেই।রাজনীতির ফয়দা লোটার খেলা না চললে এ দেশের মুসলিমদের গায়ে এই কলঙ্কদাগ লাগত না। পুজোর আগে বাংলাদেশে কী হয়েছে আমরা জানি। এখানে আব্বাস সিদ্দিকি (Abbas Siddiqi) কী বললেন? কোরআনের অপমান হলে মুণ্ড কেটে ফেলবেন। ধর্মের কথা না রাজনীতির জমি পেতে হুংকার? এবার ত্বহা সিদ্দিকি শিবের লিঙ্গের মাপ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। ক্ষমতা দখলের খেলায় নিজের অশিক্ষা আর জঘন্য মনের পরিচয় দিলেন। শিবের লিঙ্গ মানে কি জানেন?
নূপুর শর্মার মন্তব্যে হজরত মহম্মদের অসম্মানের প্রতিবাদের নামে ১১ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ হল। অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙল। পুলিশের গাড়ি পুড়ল। দোকান ভাঙল। এটা নবীর নির্দেশ নাকি? এটা তো ধর্ম নয়, অ-ধর্ম। এতো অসভ্যতা। সরকার সভ্য হলে তখনই প্রশাসন সক্রিয় হবে। হয়নি। আগে বসিরহাটেও এরকম নবীর অসম্মান ঘিরে দাঙ্গার সময় পুলিশকে হাত গুটিয়ে থাকতে বলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সেই অমৃত বাণী, ‘যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া উচিত’, তাতেই সব স্পষ্ট। ওই মন্তব্যে মুসলিমদের কেউ অসম্মানিত বোধ করলেন না তো।
ভোটের ধান্দা অসভ্যতাকে বাড়তে দিয়েছে। আসলে কোটি কোটি মানুষের কাছে ধর্ম একটা বিশ্বাস। আর এদের মতো রাজনীতির লোকেদের কাছে ধর্ম স্রেফ ভোট কোড়ানোর যন্ত্র।  |
| মণ্ডপের পথে |
অনেকে বলেন, নূপুরই বা অন্যায় কথা কী বলেছেন? হজরত মহম্মদ তো ছয় বছরের আয়েশাকে বিয়ে করেছেন আর নয় বছরের আয়েশার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়েছেন। এটা তো মুসলিম ধর্মগ্রন্থেই আছে। আছে তো। সেটুকু বললে কোনও অপরাধ হত না। কিন্তু ওই উদাহরণ টেনে নূপুর হজরত মহম্মদকে ‘শিশুকামী’ বলেছেন। এটা অবশ্যই অপমানজনক। তার প্রতিবাদ হতে পারে। সে জন্য অবরোধ, আগুন, খুন?
মুণ্ডু কেটে খুন করা হয়েছে রাজস্থানের উদয়পুরে Udaipur killing)। খুন হয়েছেন এক দর্জি (তাই হয়। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক, যে কোনও হিংসারই শিকার হন গরীব, নিম্নবিত্ত মানুষই)। তাঁকে আগে থেকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ কোনও ভূমিকা নেয়নি। ভয়ে দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। যেদিন দোকান খোলেন সেদিনই খুন।


 |
| উদয়পুর খুনে অভিযুক্তের সঙ্গে বিজেপি যোগ |
তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেড়িয়ে এল। খুনে মূল অভিযুক্ত রিয়াজ আনসারির কিছু ছবি প্রকাশ্যে আসে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আরএসএস-এর মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ ও রাজস্থান বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইরশাদ চেইনওয়ালা ও মহম্মদ তাহির রিয়াজকে মালা পড়াচ্ছেন। রাজস্থানের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতা গুলাবচাঁদ কাটারিয়া এবং উদয়পুরের বিজেপি প্রধান রবীন্দ্র শ্রীমালির সঙ্গেও রিয়াজের ছবি আছে। তাহিরের পোস্টে রিয়াজকে বিজেপি কর্মী বলা হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, রিয়াজকে কাটারিয়ার অনুষ্ঠানে, রাজস্থানে বিজেপি-র সংখ্যালঘু মোর্চার দফতরে বৈঠকেও দেখা গিয়েছে। আবার রিয়াজদের সঙ্গে পাক জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও রাজস্থান পুলিশ জানিয়েছে। বিজেপি যদিও রিয়াজের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
 |
| ফেসবুক প্রচার ইরফানের |
 |
| রানা দম্পতি |
নূপুরের পক্ষে পোস্ট করায় মহারাষ্ট্রের অমরাবতীর ওষুধের দোকানের মালিক উমেশ প্রহ্লাদ রাও কোলহে খুন হন বলে অভিযোগ উঠেছে (Amarabati killing)। উদ্ধব ঠাকরের সরকারের পুলিশ সব জেনেও চুপ ছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ নির্দল সাংসদ-বিধায়ক দম্পতি রবি ও নবনীত রানা। উদয়পুরের মতো এখানেও এনআইএ-কে তদন্তে নামিয়েছেন অমিত শাহ। এনআইএ তদন্তে জেনেছে, খুনের মাস্টারমাইন্ড একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান চালানো ৩২ বছরের ইরফান খান ২০১৯ সালে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে রানা দম্পতির যুবা স্বাভিমান পার্টির পক্ষে ভোট চেয়ে ফেসবুকে প্রচার চালিয়েছিল। বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোট চেয়েছিল। রানা দম্পতি অবশ্য বলেছে, তাঁরা ইরফানকে চিনতেনই না।
 |
| তালিব ও বিজেপি |
এরমধ্যেই আরেক কাণ্ড। ৩ জুলাই আইইডি বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড তালিব হুসেন শাহ ও ফয়জল আহমেদ দারকে অস্ত্রসহ ধরে ফেলেন জম্মুর রিয়াসি জেলার তুসকান গ্রামের সাধারণ মানুষ। অমরনাথ যাত্রায় হামলার ছকও ছিল তাদের। দেখা যাচ্ছে, ধৃত তালিব জম্মু বিজেপি সংখ্যালঘু সেলের মিডিয়া ইনচার্জ ছিলেন। ৯ মে রাজৌরি জেলার বুধানের দ্রাজ কোতরঙ্কার তালিবকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি
রবীন্দ্র রায়না যদিও বলেছেন, ‘বিজেপির অফিসিয়াল রেকর্ডে তালিবের সদস্যপদের কোনও তথ্য নেই।’ তাহলে তালিবকে মিডিয়া সেলের প্রধান করা হল কী করে? জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র রায়নার সঙ্গে তো বটেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরে সঙ্গে ছবিতেও তালিবকে দেখা যাচ্ছে। যে কেউ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশেপাশে যেতে পারে নাকি? তালিবকে মিডিয়া ইনচার্জ করায় এখন আবার বিজেপির জম্মুর সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতিকে শো কজ করা হয়েছে। তালিব দলের কেউ না হলে এই শো কজ কেন? যা-ই হোক, বাংলা প্রবাদই তো আছে, অতি চালাকের গলায় দড়ি। চালাকি করতে গিয়ে সত্যিটাই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
 |
| অমিত শাহের পাশে তালিব |
২০১৭ সালে বিজেপির ভোপালের আইটি সেলের জেলা কোঅর্ডিনেটর ধ্রুব সাকসেনা, বজরং দলের নেতা বলরাম সিং-সহ ১১ জন গ্রেফতার হয়েছিল আইএসআই-কে তথ্য দেওয়ায়। ২০১৯ সালের অগাস্টে ফের আইএসআই-কে তথ্য দেওয়ায় বজরং দল ও বিজেপির ৫ জনকে সাতনা থেকে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশ এটিএস। তাদের মধ্যে বলরাম সিং-ও ছিল।
‘মাকু-সেকু’-দের খিস্তি না করলে পেটের ভাত হজম হয় না ‘দেশপ্রেমী ভক্তকূলের’। তাঁদের কথা শুনতে বড় ইচ্ছে হয়।
 |
| নূপুরের পক্ষে |
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও জেবি পাদরিওয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ, দেশজুড়ে অশান্তি, এমনকি উদয়পুরের খুনের জন্য নূপুর শর্মাই দায়ি বলে মন্তব্য করে (Supreme Court about Nupur Sharma comment)।তারপর?
বিজেপি-ঘনিষ্ঠ ১৫ জন প্রাক্তন বিচারপতি, ৭৭ জন প্রাক্তন আমলা এবং ২৫ জন প্রাক্তন সেনা আধিকারিক প্রধান বিচারপতিকে (CJI) চিঠি দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের ওই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে লেখেন, ‘দুই বিচারপতির মন্তব্য লক্ষ্মণরেখা পার করে গিয়েছে। একমাত্র স্বশাসিত সংস্থাগুলি স্বাধীনভাবে কাজ করলেই গণতন্ত্র রক্ষিত হয়। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আমরা এই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে বাধ্য হলাম। বিচারব্যবস্থার (Judiciary) ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, অতীতেও বহু দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করা হয়েছে। যা ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে দাগ হয়ে থেকে গিয়েছে। দেশের সুরক্ষা এবং গণতন্ত্রের জন্য এর পরিণতি ভয়াবহ। সুপ্রিম কোর্ট কোনও বিচার ছাড়াই নূপুরকে একক ভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছে। শীর্ষ আদালতের এই ধরনের পর্যবেক্ষণের ফলে উদয়পুরের ভয়াবহ খুন অনেক লঘু হয়ে গেছে।’
সোশ্যাল মিডিয়াতেও টার্গেট করা হয় ওই দুই বিচারপতিকে। ডিভিশন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি (Justice) জেবি পারদিওয়ালা এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আদালতের রায়ের জন্য বিচারপতিদের উপর ব্যক্তিগত আক্রমণ কাঙ্ক্ষিত নয়। এটি বড় ক্ষতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন আদালতের রায় নিয়ে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে কোনও বিরোধ নিয়ে বিচারপতি রায় দিতে গিয়ে কিছুটা নড়ে যেতে পারেন। যা আইনের শাসনের পরিপন্থী।’
 |
| নূপুরের গ্রেফতারির দাবিতে |
প্রায় সমস্ত মুসলিম সংগঠনই উদয়পুর খুনের নিন্দা করেছে। নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে? দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের চাপের মুখেও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারও রা কাড়েনি। বিজেপি নূপুরকে সাসপেন্ড করে বিবৃতি দিয়েছে। সেটাকেই সরকারি বিবৃতি বলে চালানো হচ্ছে। এমনকী ওমানের ভারতীয় দূতাবাস সেই বিবৃতিই সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছে। নূপুর শর্মা এখনও গ্রেফতার হয়নি। উল্টে অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় অভিযোগ হলেও নূপুর কোথাও যায়নি। নূপুর সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য শুনে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কী বলেছিলেন? ‘মতামত প্রকাশ করা নূপুরের বাক স্বাধীনতা।’ বিজেপি যে আদতে নূপুরকে আড়াল করছে, সেটা স্পষ্ট।
 |
| এই টুইটের জেরেই জুবের গ্রেফতার |
নূপুর সত্যি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। আইন অনুযায়ী সেটা অপরাধ। কিন্তু নূপুরের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে দ্রুত গ্রেফতার করা হয় অল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেরকে। টক শো-য় নূপুরের সেই বক্তব্যের ভিডিও টুইট করেছিলেন জুবের। করেছিলেন ২৭ মে, ২০২২। ২০১৮ সালে জুবের হৃষিকেশ মুখার্জির সিনেমার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘২০১৪ সালের আগে ছিল হনিমুন। ২০১৪ সালের পর হনুমান।’ সেই পোস্টের জন্য চার বছর পর ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত’ পান জনৈক ‘হনুমান ভক্ত’। ১৯ জুন তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল @balajikijaiin থেকে দিল্লি পুলিশকে ট্যাগ করে জুবেরের পুরনো পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেন। ব্যস, গ্রেফতার।
 |
| সেই অ্যাকাউন্ট |
ওই টুইটার হ্যান্ডেল তৈরি ২০২১ সালের অক্টোবরে। তাতে প্রথম পোস্ট ওই ১৯ জুন। তারপর সেই অ্যাকাউন্ট ভ্যানিশ হয়ে যায় এবং ফিরে আসে। ২৮ জুন অল্ট নিউজের আরেক প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহার ২০১৫ সালের একটি টুইট পোস্ট করে ধর্মীয় ভাবাবেগের অভিযোগ তোলেন। তবে প্রতীক এখনও গ্রেফতার হননি। ‘হনুমান ভক্ত’ থানায় গিয়ে অভিযোগও করেননি। তাতেই জুবের গ্রেফতার।
 |
| Opindia-য় নূপুরের লেখা |
আর নূপুরের মন্তব্যের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ায় প্রতিবাদ হচ্ছে। একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সে দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তায় বসে বিজেপি-পন্থী ডিজিটাল মিডিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করে লিখে যাচ্ছে।
 |
| আদালতে জুবের |
৩ জুলাই জুবেরকে আদালতে তোলার পর আরেক কাণ্ড! দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টের প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সন্ধে ৭টা নাগাদ জুবেরকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন৷ তার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আগে, দুপুর আড়াইটে নাগাদই কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার কেপিএস মালহোত্রাকে উদ্ধৃত করে জানায়, জুবেরকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখা হবে। বিচারক রায় দেওয়ার অনেক আগেই এক পুলিশ অফিসার জানিয়ে দেন কী রায় হবে। কী চমৎকার ব্যাপার-স্যাপার! ‘দেশভক্ত’-দের দিল খুশ!
সুপ্রিম কোর্ট জুবেরের ৫ দিনের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেটা অন্য মামলায়। তিন হিন্দু ধর্মগুরু মহন্ত বজরং মুনি, যতি নরসিংহানন্দ গিরি সরস্বতী এবং স্বামী আনন্দ স্বরূপ (Mahant Bajrang Muni, Yati Narsinghanand Saraswati and Swami Anand Swaroop) ‘ঘৃণা ছড়াচ্ছেন’ বলে অভিযোগ জুবের টুইট করেছিলেন ২০১৮ সালে। তাতে ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে বলে ২০২২ সালের ১ জুন পুলিশে অভিযোগ জানান হিন্দু শের সেনার জেলা সভাপতি। তার ভিত্তিতে জুবেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলাতেই ৫ দিনের অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন জুবের। তবে দিল্লির মামলায় জামিন না পাওয়ায় জেলেই থাকতে হবে।
মজার ব্যাপার না? ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও জেল।
 |
| জুবেরের টুইট |
মহম্মদ জুবেইরের গ্রেফতারি জার্মান বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘বাধাহীন সাংবাদিকতা যে কোনও সমাজের জন্য উপকারী। উল্টো দিকে, তাতে কোনও বাধা উদ্বেগের কারণ। সাংবাদিকরা যা বলছেন এবং করছেন তার জন্য তাঁদের নির্যাতন বা গ্রেফতার করা উচিত নয়। আমরা ওই বিশেষ ঘটনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। নয়াদিল্লিতে আমাদের দূতাবাস পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রেখেছে।’ খেপে লাল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাংবাদিক সম্মেলনে করে বলে দিয়েছেন, ‘এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বিষয়টি কোর্টে রয়েছে। আমাদের বিচারবিভাগ স্বাধীন। এই ধরনের মন্তব্যে কোনও কাজের কাজ হবে না। এটা ঠিক নয়।’
উত্তরপ্রদেশের সন্তুল শহরের ঘটনাটা জানেন? হিন্দু দেবদেবীর ছবি দেওয়া কাগজে পেঁচিয়ে মাংস দিয়ে তৈরি খাবার বিক্রি করায় মহম্মদ তালিব নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 |
| কেদারনাথ গুহায় প্রধানমন্ত্রী |
কথায় কথায় অনেক কথা হয়ে গেল। অনেক ভাবতে পারেন, ধান ভানতে শিবের গীত গাইলাম। আসলে পরিস্থিতি দেখে কেন ভয় হচ্ছে, কীভাবে কেন্দ্র ও কেন্দ্রের শাসক দল মুখোশ খুলে খুল্লামখুল্লা নেমেছে, সে ব্যাপারে নিজের কথা বোঝাতেই এত কথা বলে ফেললাম।
অনেক বলছেন, লীনা প্রচার পেতে এসব করছেন। অনেকে বলছেন, মহুয়া এতটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতেন। এতে বিজেপিরই লাভ হচ্ছে।কীসের লাভের কথা হচ্ছে বলুন তো? ভোটের লাভ? অনেক তো চুপ করে থাকলেন। কী লাভ হল? কোথাও
 |
| দাভোলকার-পানসারে-লঙ্কেশ-কালবুর্গি |
২০১৩ সালে মহারাষ্ট্রে নরেন্দ্র দাভোলকর, ২০১১৫ সালে গোবিন্দ পানসারে এবং এম এম কালবুর্গি আর ২০১৭ সালে গৌরী লঙ্কেশ (Davolkar-Pansare-Kaluburgi-Lankesh) খুন হন একই বন্দুকের গুলিতে। সনাতন সংস্থা, হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি, হিন্দু যুব সেনার মতো একাধিক হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন অভিযুক্ত।
ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার ভারভারা রাও (Varvara Rao)-সহ একাধিক সমাজকর্মী। জেলে মশার হাত থেকে বাঁচতে মশারি খাটানোর আবেদন করেছিলেন সমাজকর্মী গৌতম নওলখা। রাজি হয়নি আদালত। ঝাড়খণ্ডের ফাদার স্ট্যান স্বামীর (Stan Swami) কথা মনে আছে? গুরুতর অসুস্থ ফাদার ভিডিয়ো কনফারেন্সে জেল থেকে বিচারপতিকে হাতজোড় করে কাঁপতে কাঁপতে জামিনের আর্জি জনিয়েছিলেন। জামিন হয়নি। জামিনের আবেদনের পরবর্তী শুনানির ঠিক আগে ফাদারের আইনজীবী আদালতে বলেন, আর শুনানির দরকার নেই। তাঁর মক্কেল সেদিন দুপুরেই মারা গেছেন।
 |
| স্ট্যান স্বামীর স্মরণে |
মনে আছে হাথরসের (Hathras) কথা? কিংবা রোহিত ভেমুলার (Rohit Vemula) কথা? গোরক্ষদের (Gorakshak) তাণ্ডবে খুনের কথা? দলিত-মুসলিমদের উপর তাণ্ডব তো রোজকার ঘটনা হয়ে গেছে।
২ জুন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের বিদিশায় খুন হন আরটিআই কর্মী রঞ্জিত সোনি। কেন? দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য জানতে ১৩০টির মতো আরটিআই করেছিলেন তিনি। আবেদন তুলতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কাজ হয়নি। তাই...
২ মে মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলায় গো হত্যার অভিযোগে দুই আদিবাসী যুবক সম্পত বাট্টি এবং সিমারিয়াকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুন করে বজরং দলের ১৫-২০ জন।মধ্যপ্রদেশের মানসার নিমাচের ঘটনাটা মনে করুন।
ময়লা একটি জামা পরে রাস্তার ধারে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ। আচমকা এসে তাঁকে চড় মারতে শুরু করে বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী দীনেশ কুশওয়াহা। বলতে থাকে, ‘তোর নাম মহম্মদ? আধার কার্ড দেখা।’ মারতে মারতে মেরেই ফেলে। কেমন দিলাম ভঙ্গিতে নিজেই পোস্ট করে সেই ভিডিও। পরে জানা যায়, নিহত ৬৫ বছরের ভানওয়ারলাল জৈন রতলাম জেলার সার্সির বাসিন্দা। রাজস্থানের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরে ১৫ মে নিখোঁজ হয়ে যান মানসিক ভাবে অসুস্থ ওই বৃদ্ধ (Old Man killed by BJP leader in MP)। মুসলিম হলেই পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়?
 |
| দুই নাবালক সন্তান সহ জ্বালিয়ে খুন গ্রাহাম স্টেইনকে |
 |
| প্রতাপ ষড়ঙ্গী |
ওড়িশার কেওনঝার জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম মনোহরপুরে ১৯৯৯ সালের ২২ শে জানুয়ারি মধ্যরাতে একটি গাড়ির মধ্যে ৫৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান খ্রিস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস ও তার দুই ছেলে, ১০ বছর বয়সী ফিলিপস এবং ৭ বছর বয়সী টিমোথিকে ঘুমন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে খুন করা হয়। তাতে নাম জড়ায় বজরং দলের। তখন বজরং দলের রাজ্য সভাপতি প্রতাপ ষড়ঙ্গীও ছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত। ২০০২ সালে ওড়িশার বিধানসভা ভবনের সামনে ভাঙচুরের অভিযোগেও গ্রেফতার হন আরএসএসের এই একনিষ্ঠ কর্মী। দাঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। কোনও সাজা হয়নি। ২০১৯ সালে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। Ki
সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুর এখন লোকসভার সদস্য।
 |
| প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর |
মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসকে শহিদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ।
গান্ধীজির মৃত্যুদিনে তাঁর ছবিতে নকল গুলি করে উৎসব করেন হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক পূজা শকুন পাণ্ডে।
গডসের ফাঁসির দিন পালিত হচ্ছে। পালিত হচ্ছে 'নাথুরাম গডসে সাহসিকতা দিবস'। সবের পেছনেই রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদীরা।
 |
| গান্ধীজিকে 'গুলি' হিন্দু মহাসভার |
নবকুমার সরকার ওরফে স্বামী অসীমানন্দ। সমঝোতা এক্সপ্রেস, মালেগাঁও ও মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ছিলেন। 'ক্যারাভান' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত অসীমানন্দ বলেছিল, ওই তিন বিস্ফোরণের পরিকল্পনার সবই জানতেন মোহন ভাগবত, ইন্দ্রেশ কুমার সহ আরএসএস-এর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এবং তাঁদের সমর্থনও ছিল৷ পরে অবশ্য সে কথা অস্বীকার করেন অসীমানন্দ। 'ক্যারাভান' সম্পাদক বলেছেন, পুরো সাক্ষাৎকার তাঁদের কাছে আছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রমাণের অভাবে সব অভিযোগ থেকেই বেকসুর হয়ে যান অসীমানন্দ। মক্কা মামলার বিচারক কে রবীন্দ্র রেড্ডি তারপরেই পদত্যাগ করেন।
১৯৯৮ সালে গুজরাটের ডাং জেলায় খ্রিস্টানদের উপর ব্যাপক হামলাতেও অভিযুক্ত অসীমানন্দ। তিনি এবার পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সংহতির মূল উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছে। সংগঠনের প্রধান দেবতনু ভট্টাচার্য বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন।
 |
| অসীমানন্দ ও দেবতনু |
আদালতের কথা বলুন। রামলালার নামে জমি দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে রাম মন্দির হবে। অবসর নেওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজ্যসভার সদস্য হয়ে গেলেন। ওই রায়ে তো বলা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা অন্যায় কাজ। তার জন্য কারা শাস্তি পেল?
গুজরাট দাঙ্গা মামলায় নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিন চিট দিল সুপ্রিম কোর্ট। সঙ্গে বলল, মোদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। পরদিন ওই রায় নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিস্তা শেতলবাদের নাম তুলে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই গুজরাট পুলিশের দল মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করল সমাজকর্মী তিস্তাকে। আগে থেকে পরিকল্পনা করা না থাকলে হতে পারে? গ্রেফতার হলেন গুজরাট পুলিশের প্রাক্তন ডিজি আর বি শ্রীকুমার। অনেক মামলাই তো আদালত খারিজ করে। সেজন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগ! নতুন জিনিস। অবশ্যই পরিকল্পনার বাইরে নয়।
কী হয়েছে দিল্লির দাঙ্গায়? কী হয়েছে জাহাঙ্গীরপুরীতে?
 |
| জাহাঙ্গীরপুরীতে বুলডোজার অভিযান |
এই তো চলছে ক্রমাগত ।
হিজাব ইত্যাদি বিতর্ক শুরুর অনেক আগে কর্নাটকের উপকূল এলাকায় চার মাসের সমীক্ষায় জানা গেল, ৯৬% মানুষই ধর্মীয় মেরুকরণে আচ্ছন্ন। মৌলবাদী ভাবনাচিন্তায় আচ্ছন্ন ৯০%। সেই মনোভাব তৈরির পিছনে আছে সোশ্যআল মিডিয়া। আর সেখানে পরিকল্পিত প্রচারে আইটি সেলের ভূমিকার কথা কে না জানে?
নন্দীগ্রামে ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মুসলিমদের ভোট তাঁর দরকার নেই। এখন তিনি হিন্দু ভোট-মুসলিম ভোটের অঙ্ক শেখাচ্ছেন রোজ। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ভোটের মুখে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, রাজ্যের ২০% মুসলিম ভোট নিয়ে তিনি মোটেই চিন্তিত নন। বিজেপি কোনও মুসলিমকে প্রার্থী করেনি। অমিত শাহ বলেছিলেন, আমরা যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করি, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের পাঁচ কোটি মুসলিমের একজনকেও বিজেপি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য মনে করেনি। ৩৫ বছর পর উত্তরপ্রদেশে কোনও সরকার পরপর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এল।
 |
| নরেন্দ্র মোদী |
লীনার কথাটা শুনুন, ‘মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, মুহূর্তের মধ্যে ঘৃণার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এদের সঙ্গে বিশ্বাস বা ভক্তির কোনও সম্পর্ক নেই। এদের চালিকাশক্তি হল ঘৃণা। বর্তমান ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদীরা এদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ঘৃণা উস্কে দিয়ে ভোট আদায় করা। এরাই দেশের আন্দোলনকারী, শিল্পী এবং সাংবাদিকদের পিছনে পড়ছে এবং সংখ্যালঘুদের গণহত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। যদি এই দক্ষিণপন্থী বুদ্ধিহীন মাফিয়াদের ভয়ে পিছিয়ে যাই, তাহলে আমার মতো সবার স্বাধীনতাতেই হস্তক্ষেপ হবে। সুতরাং, যা-ই হোক না কেন, আমি সেটা ছাড়ব না।’
এই বেপরোয়া প্রত্যাঘাতের মানসিকতা ভোটের অঙ্কে মাপা সম্ভব নয়। তার চেহারা তো রাষ্ট্রপতি ভোটে, মহারাষ্ট্র সরকার বদলে, বাংলায় টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের কারবারে।
লীনা বলেন, ‘এ থেকেই ভারতের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যায়।’
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার সময় রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ছিল ৪১০ টাকা। এখন ১০৭৯ টাকা। মোদী ক্ষমতায় আসার সময় সরকার সিলিন্ডারে ভর্তুকি দিত ৮২৭ টাকা। এখন শূন্য (০)। উজ্জ্বলা প্রকল্পে সিলিন্ডার প্রতি ২০০ টাকা। ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে উজ্জ্বলা প্রকল্পের ঢাক পেটাতে একটি মার্কিন বিজ্ঞাপন সংস্থাকে ২৯৩ কোটি টাকা বরাত দিয়েছিল ইন্ডিয়ান অয়েল।
পেট্রোল-ডিজেলের দাম, জিনিসপত্রের দাম, ওষুধের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে টাকার দাম। আর কমছে মানুষের দাম। শুধু জুন মাসেই কাজ হারিয়েছেন ১ কোটি ৩০ লক্ষ।
 |
| প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানি |
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গৌতম আদানির (Goutam Adani) ব্যক্তিগত বিমানে দিল্লি এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পর রাজ্যের শিল্পপতিদের মধ্যে শুধু গৌতম আদানিই ছিলেন মোদীর পাশে।
বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে দেওয়ার সময় মোদী সরকার নিয়ম বদলে বলেছিল, অভিজ্ঞতা নেই এমন সংস্থাও আবেদন করতে পারে। অভিজ্ঞতাহীন আদানির সংস্থা ৬ বিমানবন্দরের বরাত পেয়েছে।
২০১৪ সালে আদানির সম্পত্তি ছিল ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন। ২০১৯ সালে আদানি ১৫.৭ বিলিয়ন ডলার, মুকেশ আম্বানি ৫১.৭ বিলিয়ন ডলার। এখন আদানি দুনিয়ার ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। ১১ নম্বরে আম্বানি। এ বছর দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে আদানির, গেটস-বাফেট-বেজোস-আর্নল্ট-মাস্কের চেয়েও বেশি, প্রতি সপ্তাহে ৬,০০০ কোটি টাকা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আদানির ঋণের পরিমাণও। এবছরের মার্চ পর্যন্ত আদানি ঋণ ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার, যায় বেশির ভাগটাই সরকারি ব্যাংক থেকে। আমাদের টাকায় ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে।
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, কোভিড-পর্বে ভারতের আরও ২৩ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নেমে গেছেন। অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, এই সময়ে দেশের ৮৪% পরিবারের আয় কমে গেছে।
 |
| হরিদ্বারে প্রধানমন্ত্রী |
ব্যথা-দুঃখ-যন্ত্রণা কমাতে আফিম অব্যর্থ। তেমনই বেকারি-দারিদ্র-জিনিসের দাম বাড়ার মতো জাগতিক জীবনের যন্ত্রণা নিয়ে ভাবার কী আছে? আপনার আয় কমছে বা কাজ যাচ্ছে কিংবা গৌতম আদানির সম্পদ উল্কা গতিতে বাড়ছে, বিশ্বাস করে নিন সবই ঈশ্বরের ইচ্ছে। আপনার হাতে তো কিছুই নেই। লড়াই করে কী হবে? বরং মহানবী-কালীর অবমাননা হল কি না, তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা যাক। ঘৃণা-বিদ্বেষ-ধর্মীয় হিংসায় ব্যস্ত রাখা যাক। তাতে আদানিরও ভাল, মোদীরও ভাল। দুনিয়ায় দেশের সম্মান যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে হইচই করার কী আছে? ১৫০ ফুট জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, সিনেমা শুরুর আগে উঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইলেই হল।
 |
| যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী |
আক্রমণ সর্বাত্মক, প্রতিরোধটাও সর্বাত্মকই হওয়া চাই। না হলে তো প্রতি পদে ভয়ের বলি হতে হয়।
কালী-বিতর্কে মহুয়া মৈত্রের টুইট, ‘জয় মা কালী! বাঙালিদের পূজিতা দেবী নির্ভীক এবং অপ্রসন্না। আমি একজন কালী উপাসক। আমি কিছুতেই ভয় পাই না। অজ্ঞতাকে নয়। গুন্ডাদের নয়। পুলিশকেও নয়। আর, নিশ্চিতভাবে ট্রোলকেও নয়। সত্যের পিছনে কোনও শক্তির দরকার পড়ে না।’
মহুয়া মৈত্রের রাজনৈতিক অবস্থান বা তাঁর অনেক মন্তব্যের আমি ঘোরতর ভিন্নমত। লীনা সম্পর্কে জানলাম এই বিতর্কের হাত ধরেই। ব্যক্তি নয়, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর বলা কথা। আমার কাছে রাজনীতিটা স্রেফ ভোটের পাটিগণিত নয়। রাজনীতি সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই।
১৯৪৬ সালে ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং।’ দেশভাগ। তারপর কলকাতা বা বাংলায় দীর্ঘ সময় কেন দাঙ্গার আগুন জ্বলেনি? কেন সম্প্রীতির বাতারবরণ ছিল? কোনও মহাত্মার কৃপায় নয়। কৃষক-উদ্বাস্তু-শিক্ষক-ছাত্রদের বেঁচে থাকার লড়াই যতদিন গুরুত্বপূর্ণ থেকেছে ততদিন বিষ ছড়াতে পারেনি।
রোগ জানা। ওষুধও জানা। এবারের লড়াইটা অনেক বেশি দীর্ঘ হবে। অনেক বেশি রক্ত ঝড়বে। তবু ভারতকে তো আর ‘হিন্দু পাকিস্তান’ বানাতে দেওয়া যায় না। সভ্যতার রথের চাকা পিছন দিকে ঘুরতে দেওয়া যায় না উচিত? কোনও ভোটের অঙ্ক বুঝি না। দেখুন না, বিজেপি বিরোধী জোটের ছবিটা। এ ওকে গাল পাড়ছে, ও তাকে। কথায় বলে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষাক্ত সাপের কার্বলিক অ্যাসিড হল বামপন্থার ভাবনা। সিপিআইএম লিবারেশনকে বলুন গিয়ে সিপিআই-এম ভাল করছে কিংবা উল্টোটা। দেখুন কী হয়। তাই বলছি, কোনও ইজম-টিজম বুঝি না। দেশটা আমাদের। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে কোনও ভূমিকা নেয়নি, ব্রিটিশের পা চেটে গেছে, তাদের হাতে দেশটাকে তুলে দেওয়া যায় না। দেশটা বাঁচানোর কাজটাও আমাদের। দেখুন না, কত তামিল মেরে সিংহলী ভাবাবেগ উস্কে দিয়েও বাঁচতে পারলেন রাজাপক্ষে? (Sri Lankan President & Prime Minister to Resign as Protesters Storm Residences)
এদেশেও আলবৎ সম্ভব।
 |
| শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাড়ি জনতার দখলে |