link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

ইস্স্স্স্স্স্, দিদির বড্ড লেগেছে! Kolkata Metro: truth & lie


ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ স্টেশনের উদ্বোধন করলেন, শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের সূচনা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তাতে খুব খচেছেন দিদিমণি। সে সব কথা মনে হলেই বাংলায় চালু একটা কথা মনে হচ্ছে, দ্যাখ ক্যামন লাগে!

সে তো গেল ঠাট্টার কথা। সঙ্গে খুব যন্ত্রনাও হচ্ছে। যন্ত্রণা  মিডিয়াকর্মী হিসেবে। দেশের এবং রাজ্যের মিডিয়া বহু বছর ধরেই নিয়ন্ত্রিত। এখন তা মারাত্মক চেহারায়। সেটা জানা। কিন্তু স্তাবকতারও সীমা থাকে! জানি, দুনিয়াজুড়েই মিডিয়াকে এই গভীর সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ দুনিয়া জুড়েই স্বাধীন স্বর আক্রান্ত। তবে দুনিয়ায় তো বটেই, আমাদের দেশেও মিডিয়ার একটা বিকল্প ধারা গড়ে উঠছে। জনগণের টাকায় জনগণের মিডিয়া। চলিত নাম ক্রাউড ফান্ডিং। বাংলাতেও এরকম মিডিয়া করা দরকার। খুব দরকার। কিন্তু করবে কে? টাকা জোটাবে কে? আমার কথা যদি বলি, একটা দিন চাকরি না করলে সংসার চলবে না। তাই ইচ্ছে ইচ্ছেই থেকে যায়। তবে চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছি। জানি না পারব কিনা।

সদ্য চালু হওয়া ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদা স্টেশন
যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই...
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একটু উল্টেপাল্টে দেখলেই চমকে যাওয়ার মতো খবর পাবেন।
যেমন ধরুন, পৃথিবীর জন্মের আগের মহাকাশের ছবি প্রকাশ করেছ নাসা। চরম বিস্ময়।
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ দিল্লি মেট্রোর ম্যাজেন্টা লাইন উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) মন্তব্যেও চমকে যেতে পারেন। 'অটলবিহারী বাজপেয়ী (AB Vajpayee) মেট্রো রেলে চড়া দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ২০০২ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মেট্রোয় চেপেছিলেন।' তার আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী মেট্রোয় চড়েছিলেন কিনা, সত্যি সেটা জানি না। অর্থাত্ তথ্যগত ভুল আছে কিনা, বলতে পারব না। তবে নিজের ঢাক কী করে পেটাতে হয়, তার বড় টিউটোরিয়াল বলাই যায়।
যেমনটা করতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে হচ্ছেন দিদিমণি।
নীচে সেই অনুষ্ঠানের ছবিটা দেখুন। দিল্লি মেট্রোর উদ্বোধনে অটলবাহিরী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানির সঙ্গে দিল্লির কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতকেও দেখা যাচ্ছে। মানে উন্নয়নে হাতে হাত...।  
২০০২। দিল্লি মেট্রোর যাত্রী বাজপেয়ী-আদবানি-শীলা
সেটা ১৯২১ সালের কথা সেটা। মাটির তলা দিয়ে যাওয়া ১০.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইন হুগলি নদীর নীচ দিয়ে গিয়ে বাঘমারিতে ইস্ট বেঙ্গল রেল এবং বেনারস রোডে ভারতীয় রেলকে যুক্ত করবে, এরকমই ছিল পরিকল্পনা। ছিল উত্তর-দক্ষিণ লাইনের ভাবনাও। টাকার জন্য কোনওটাই হয়নি। মানে ব্রিটিশ আমলেই মেট্রো রেলের ভাবনা ছিল। মানে হুগলি নদীর নীচ দিয়ে ট্রেন চালানোর ভাবনা ছিল। 
মানে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর ভাবনাও ছিল। টেমসের নীচে দিয়ে ট্রেন চালানোর খরচের ছয় গুণ খরচ ধরা হয়েছিল। টিকিটের দামও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকা না থাকায় সেই প্রকল্প এগোয়নি।
পুরনো কথাটা বলে রাখলাম এজন্য, দিদিমণি যে কোনও দিন বলে বসতে পারেন ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর ভাবনাটা তাঁর মাথা থেকেই বেরিয়েছে।
কলকাতার মেয়রদের নামের লিস্টটা দেখছিলাম। চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু, ফজলুল হক, যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, নলিনী রঞ্জন সরকার, বিধানচন্দ্র রায়, প্রশান্ত শূর, সুব্রত মুখার্জি...এক সে বার কর এক নাম। সব শেষ নাম ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। সাধারণ ভাবে, আমি ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলি না। কিন্তু বাধ্য হচ্ছি। কলকাতার এই মেয়র গ্যালন গ্যালন তেল নিয়ে ঘোরেন আর আবোল তাবোল বকে যান। শোভন চ্যাটার্জিকে মাথায় রেখেও বলছি, এতো তেলবাজ মেয়র কলকাতা আগে কখনও পায়নি। কী বললেন? 
'মমতাদি যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি এই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের স্বপ্ন দেখেন আর এখন তিনিই বাদ৷'
দেখেছেন, এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। তাই ব্রিটিশ আমলের কথা আগেভাগে গেয়ে রেখেছি।
১৯৭২। কলকাতা মেট্রোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৭৮ সালে কোচবিহার থেকে কলকাতায় চলে আসি। মনে আছে, টালিগঞ্জ থেকে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা খোড়া। তখন তো আর উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি সাহায্য করেছিল বিস্তর। এত গভীর গর্ত, অনেক সময়ই তারমধ্যে জল জমে, ইয়া উঁচু মাটির ঢিপি, বৃষ্টির সময় একটু অসতর্ক হলেই সর...সর...সরাত। দু'পাশে কাঠের লম্বা লম্বা তক্তা, যাতে মাটি ধসে না পরে। বিরাট বিরাট যন্ত্রপাতি। কলকাতার যা কিছু সব মাটির নীচে...বিদ্যুতের লাইন, ফোনের লাইন, খাবার জলের লাইন, নোংরা জল বেরনোর লাইন। তারপর ছিল ট্রাম লাইন। সে এক কেলেংকারিয়াস কারবার। শুনতাম পাতাল রেল হচ্ছে।
আস্তে আস্তে চেহারা নিতে শুরু করল। ছালাই করে করে টানেল তৈরি শুরু হল। সুড়ঙ্গে হাওয়া চলাচলের ঘর দেখতে ভিড় করতাম আমরা। আস্তে আস্তে টানেলেরে উপর মাটি পড়া শুরু হল। গর্ত ঢাকা পড়তে শুরু করল। নীচের টানেলে কী যেন কী কাণ্ড হতে যাচ্ছে! কোনও প্রান্তিক কার শেডের সঙ্গে যোগাযোগের লাইন নেই। তাই এসপ্ল্যানেড স্টেশনের কাছে  ক্রেন দিয়ে ঝুলিয়ে ট্রেনের কামরা নামানো হয়েছিল মাটির নীচে। আস্তে আস্তে লাইন বাড়তে থাকে। আমাদের খুব উৎসাহ ছিল, টালিগঞ্জ স্টেশনের ঠিক বাইরে টানেলে ট্রেনের ঢোকা বেরোনো দেখা। আর ছিল পার্ক স্ট্রিট স্টেশন দেখতে যাওয়া।
মেট্রোয় চড়াটা যখন একটা ব্যাপার ছিল, আমি সেই প্রজন্মের মানুষ। বাইরে থেকে কেউ কলকাতায় এলে তার ভয় ভাঙিয়ে মেট্রোয় চড়ানোটা ছিল 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে' (History of Kolakata Metro Rail)
গর্ত খুঁড়ে ক্রেনে চাপিয়ে কামরা নামানো হচ্ছে মেট্রোর লাইনে
কলকাতা শহরে রাস্তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দিল্লি বা অন্য শহরগুলিতে ২৫-৩০% হলেও কলকাতায় মাত্র ৪.২%। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় (Bidhan Chandra Roy) কলকাতার বাড়তে থাকা ট্রাফিক সমস্যা মেটাতে ভূগর্ভস্থ রেলের কথা বলেন। ১৯৬৯ সালে মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (রেলওয়ে) গৃহীত হয়। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানে কলকাতার জন্য মোট ৯৭.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি মেট্রো লাইনের প্রস্তাব করা হয়। তারমধ্যে তিনটি বেছে নেওয়া হয়৷ 
১) দমদম-টালিগঞ্জ, ২) বিধাননগর-রামরাজাতলা, ৩) দক্ষিণেশ্বর-ঠাকুরপুকুর। 
কাণ্ড বুঝুন, তখনও সেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ভাবনা। মমতা ব্যানার্জির বয়স তখন ১৬।
আটের দশকে কলকাতায় চলছে মেট্রো রেলের কাজ
প্রথমে হাত দেওয়া হয় দমদম-টালিগঞ্জ ১৬.৪৫ কিলোমিটার লম্বা লাইনের উপর। ১ জুন, ১৯৭২ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭২ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিলান্যাস করেন (Indira Gandhi laid foundation stone of Kolkata Metro)। কিন্তু কাজ তেমন এগোয়নি। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সমস্যা সামলে কাজ খানিকটা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। তার পেছনে খানিকটা ভূমিকা ছিল 'রাজ্যের সর্বনাশ করে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রী' জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu)। উদ্যোগী ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ বি এ গনি খান চৌধুরী (ABA Ghani Khan Choudhury)। ১৯৮২ সালে বরকত সাহেব রেলমন্ত্রী হওয়ায় কলকাতার কপাল খুলে গেল। ১৯৮৪ সালে ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসপ্ল্যানেড-ভবানীপুর (এখন নাম নেতাজি ভবন) ৩.৪০ কিলোমিটার রুটে ভারতের প্রথম তথা এশিয়ার পঞ্চম মেট্রো পরিষেবা কলকাতা মেট্রোর উদ্বোধন করেন।
আবু বরকত আতাউল গনি খান চৌধুরী
কলকাতা মেট্রোয় সওয়ার জ্যোতি বসু, প্রশান্ত শূর প্রমুখ 
পরবর্তীতে মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকার সময় নানা স্টেশনের নানা নামকরণ করেছেন। কিন্তু গনি খান চৌধুরী, বিধানচন্দ্র রায় এবং জ্যোতি বসুর নামে কোনও স্টেশন নেই। বাস্তব এটাই, ওই তিন জন না থাকলে কলকাতা মেট্রোই হত না।
একটা ঘটনার কথা বলি। কলকাতা মেট্রোয় প্রথম দুর্ঘটনা ১৩ নভেম্বর, ১৯৮৪। একটা অ্যালুমিনিয়ামের শিট লাইনে পরে গিয়ে ট্রেন চলাচল আটকে ছিল কিছুক্ষণ। কলকাতা মেট্রো সত্যি কতটা নিরাপদ হাতেকলমে তার প্রথম পরীক্ষা হল সেদিন। তখন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী প্রশান্ত শূর মেট্রোর বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন। সুর মেলান পরিবহনমন্ত্রী রবিন মুখার্জি। জ্যোতি বসু দুজনকে ডেকে বুঝিয়ে দেন, মেট্রো কলকাতার জন্য কতটা জরুরি। তারপর সব ঠাণ্ডা।
প্রায় ছয় বছর জমি জটে আটকে ছিল মেট্রোর বাকি অংশের কাজ। কাদের রাজনৈতিক মদত ছিল? আশা করি, মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee) সব মনে আছে। তিনি তো তখন ইন্দ্রপতন ঘটানো সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
শেষ পর্যন্ত দমদম-টালিগঞ্জ মেট্রো চালু হয় ১৯৯৪ সালে। 
১৯৮৪। উদ্বোধনের দিন কলকাতা মেট্রো
ভাঙর ঘটকপুকুর থেকে বারুইপুর যাওয়ার রাস্তায় তেমাথার কাছে বাড়ি সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty)। ১৯৮৭ সালের কথা। সুজনদা তখন জেলার এসএফআই নেতা। প্রস্তাব দিয়েছিল, মেট্রোকে টেনে সোনারপুর বা গড়িয়া বা বাঘাযতীন স্টেশন পর্যন্ত বাড়ালে রেলের উত্তর আর দক্ষিণ শাখার যোগাযোগ বাড়বে, দক্ষিণের মানুষদের কলকাতা যাওয়া সুবিধার হবে। সম্ভবত ভি পি সিং (VP Singh) সরকারের সময় সেই পরিকল্পনা নেওয়া হল।
সুজন চক্রবর্তী
 
জমি সমস্যার জন্য নিউ গড়িয়া পর্যন্ত কাজ শেষ করা যায়নি। ২২ অগাষ্ট, ২০০৯ গড়িয়া বাজার পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু হল।
তখন রেলমন্ত্রী? মমতা ব্যানার্জি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রণব মুখার্জি আর রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী (Gopal Krishna Gandhi)। সেই অনুষ্ঠানে তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে (Buddhadeb Bhattacharjee) ডাকা হয়েছিল?
নাহ্। 
মেট্রো টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া বাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ অনুষ্ঠান 
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর সাম্প্রতিক উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীকে না ডাকায় কী গোঁসা! ইস্ট ওয়েস্ট উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীকে রেল চিঠি দিল আগের দিন। মমতার রেল সেদিন মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও চিঠি দেয়নি। উদ্বোধনের আগের দিন ঠিক এক কায়দায় আমন্ত্রণের চিঠি পান পরিবহনমন্ত্রী রঞ্জিত কুন্ডু।
এক আধবার নয়, মমতা কখনও কোনও উদ্বোধনে বিরোধীদের ডাকেননি। কেন্দ্রের মন্ত্রী মমতা ডাকেননি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ডাকেননি।
এখন ন্যাকা কান্না জুড়েছেন! 
দ্যাখ কেমন লাগে!
গড়িয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণ। ব্রাত্য রাজ্য। আনন্দবাজারের রিপোর্ট
ম্যাডাম, এই কালচারটা আপনিই চালু করেছেন। এটা আমাদের রাজ্যে ছিল না। একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাতে গুলি চালায় বিধান রায় সরকার। পাশে ছিলেন বিরোধী নেতা জ্যোতি বসু। মেট্রোর কথা আগেই বলেছি।
১৯৭৫ সালে বিশ্ব টেবল টেনিস হবে কলকাতায়। স্টেডিয়াম নেই। সেনার কাছ থেকে জমি পেতে সিদ্ধার্থ রায়ের ডান হাত কে ছিলেন? সিপিএমের সুভাষ চক্রবর্তী (Subhas Chakraborty)। তৈরি হয় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা সাংসদ হিসেবে রাজ্যের উন্নয়নে মমতার ভূমিকার কথা পরে সুযোগ পেলে বলা যেতে পারে।  

ছোটবেলার বিস্ময়! টালিগঞ্জ স্টেশনের বাইরেই শুরু মেট্রোর ভূগর্ভ পথ 
কলকাতা মেট্রো। আটের দশকে
আগেই বলেছি ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর ভাবনাটা ব্রিটিশ মগজে ছিল। বিধান রায়ের পরিকল্পনাতেও ছিল। সেটা জেগে ওঠে তিন জনের সৌজন্যে। ১) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ২) সুভাষ চক্রবর্তী, ৩) অশোক ভট্টাচার্য। আড়ালে জ্যোতি বসু এবং প্রণব মুখার্জি। রাজি করানো হল মনমোহন সিংকে। ২০০৮ সালে প্রকল্পের অনুমোদন হল। 
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সল্ট লেক স্টেডিয়ামের জমিতে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি, দুই সাংসদ সুধাংশু শীল ও মহম্মদ সেলিম, মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী প্রমুখ। প্রকল্পটি কিন্তু রেল মন্ত্রকের হাতে ছিল না। কেন্দ্র ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের টাকা আর জাপানি সংস্থার ঋণে প্রকল্প হওয়ার কথা ছিল। ঠিক ছিল রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতর দেবে ৩০%, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২৫%, বাকিটা জাপানি সংস্থা JBIC দেবে। 
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিলান্যাসে প্রণব মুখার্জি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ চক্রবর্তী,
অমিতাভ নন্দী, সুধাংশু শীল, মহম্মদ সেলিম
এখন হাকিম মেয়র বলছেন, 'মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকার সময় প্রকল্পের পরিকল্পনা হয়। তাঁর প্রকল্পে তাঁকেই বাদ দিয়ে উদ্বোধন? বাংলার মানুষ এটা মেনে নেবে না।’ তেলবাজির নজির দেখুন! 
তবে কি ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোয় মমতার কোনও ভূমিকা নেই? আলবৎ আছে। শিলান্যাসের দিন কয়েক আগে মমতা বলেছিলেন, ‘ঋণভারে জর্জরিত রাজ্যকে কেন্দ্র কেন এত টাকা দিচ্ছে? রাজ্য সরকারকে মদত দেওয়া বন্ধ করুন। লোকসভার ভোট চলে এসেছে, এখনও সিপিএম-কে তেল দিচ্ছেন কেন?’ 
শিলান্যাস অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে প্রণববাবু আর বুদ্ধবাবুকে তেড়ে কালো পতাকা দেখায় মমতার তৃণমূল।
শিলান্যাসের কয়েক দিন আগেই ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল প্রকাশ কারাটের সিপিএম। তারপরও শিলান্যাসে ছিলেন  প্রণব মুখার্জি, জয়পাল রেড্ডিরা।  প্রণববাবু বলেন, 'আমাদের মত গরিব দেশে উন্নয়নে অনেক বাধা । টাকার অভাব, প্রযুক্তিও সব সময় থাকে না । কিন্তু তার সঙ্গে যদি আত্মকৃত বাধা এসে জোটে তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু থাকে না। উন্নয়নকে সংকীর্ণ রাজনীতির বাইরে রাখতে না পারলে এগোনোর পথে অনাবশ্যক কাঁটা ছড়ানো হয়। তাতে নিজেদেরই পা ক্ষতবিক্ষত হয়।'
শিলন্যাস অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ পরেই মমতার তাঁর তখনকার কমান্ডার পার্থ চ্যাটার্জিকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলালেন, 'সিপিএমের পা চাটা হলেন এই বাংলার নায়ক প্রণব মুখার্জি । সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সময় এঁকে দেখা যায়নি, বাংলার মানুষের পাশে যিনি দাঁড়াননি তাঁকে এখন ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো শিলন্যাসে এসে অনেক কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।'
ইস্ট ওয়েস্টে মমতার আপত্তি। আনন্দবাজারের রিপোর্ট
ইউপিএ-২ সরকারে রেলমন্ত্রী হয়েই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোকে তাঁর হাতে নিতে উঠেপড়ে লাগলেন।  রেলমন্ত্রককে কাজে লাগিয়ে হাওড়া ও শিয়ালদহে মেট্রো স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা পণ্ড করার ছক কষা শুরু করলেন। ওই দুই স্টেশন না হলে প্রকল্পের গুরুত্বই থাকবে না। রাজ্য সরকার বিনা আপত্তিতে প্রকল্প রেলের হাতে তুলে দিল। তাতে প্রকল্পে টাকা যোগানের সুবিধা কমে গেল। প্রকল্পের দফতর বদলে কিছুটা সময় গেল। 
মমতা কিছু করেননি বলাটা ঠিক হবে না!
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হলেন। ২০১২ সালে ইউ পি এ সরকার থেকে বেরিয়ে এলেন। বলে দিলেন, পুরোনো কোনও পরিকল্পনার দায় নেবে না তার সরকার। প্রকল্পে রেলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে ফের যুক্ত করা হল। এই কাজ করতে চলে গেল দুটো বছর।
তারপর মমতা দাবি তুললেন রুট বদলের। কারণ? বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের আপত্তি। রুট বদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনার বিস্তর বদল হল। নর্থ সাউথ এবং ইস্ট ওয়েস্টের জংশন স্টেশন সেন্ট্রাল থেকে পাল্টে হল এসপ্ল্যানেড। 
নর্থ সাউথ লাইনের লোহার বিমের জন্য কাজ আটকে থাকল বেশ কিছুদিন। হেরিটেজ বিল্ডিং সংক্রান্ত অনুমোদনের জন্য সময় লাগল। নতুন রুটে বৌবাজারের যে এলাকা পড়ল সেখানে মাটি ধসে কেলেঙ্কারি। ওই অংশের কাজ এখনও বাকি। 
প্রকল্প চালুর কথা ছিল ২০১২ সালে। ২০২২ সালেও পুরো প্রকল্প চালু হয়নি। খরচ বেড়ে দ্বিগুণ। এর পুরো কৃতিত্ব একজনের। মমতা ব্যানার্জির। 
কী দাঁড়াল? ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো (East West Metro) মমতার ব্রেন চাইল্ড নয়। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিকল্পনা ও শিলান্যাস হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের সময়। বরাদ্দও মমতা রেলমন্ত্রী হওয়ার আগেই। মমতা বরং সে সময় তীব্র বিরোধিতা করেন। রেলমন্ত্রী হয়ে ইস্ট-ওয়েস্টে বাধা তৈরি শুরু করেন। কেন্দ্র-রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরের হাত থেকে প্রকল্পটি রেল মন্ত্রকের হাতে নেন। তাতে টাকা পেতে অসুবিধা তৈরি হয়। তারপর রাজনৈতিক কারণে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে প্রকল্পকে বিশ বাঁও জলে ফেলে দেন। প্রকল্প শেষ হতে দেরি, তার খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া মমতার কৃতিত্বেই।  
যাঁরা মমতার ভূমিকা অস্বীকার করছেন, তাদের মুখে পোকা পড়ুক! 
ইস্ট ওয়েস্টের সম্প্রসারণ উদ্বোধনে ডাক পাননি মমতা। প্রতিবাদী হোর্ডিংয়ে মিথ্যা তথ্য
'রাজ্যের উন্নয়নে মমতার ভূমিকা' বলে শেষ করা যাবে না। ১৯৮৪ সালে রাজ্যের উন্নয়নের একাধিক দাবি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে যাওয়ার জন্য এমএলএ, এমপিদের মিটিং ডাকলেন জ্যোতি বসু। কংগ্রেসের কেউই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাননি, তবে পুরো মিটিংয়ে ছিলেন। মিটিং থেকে বেরিয়ে যান দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও অজিত পাঁজা (Ajit Panja)। 
এই দুই সাংসদই ছিলেন ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্নে। অনেক উদাহরণ আছে। 
সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প তাড়ালেন। বড় বড় ভাষণ শেষে সেখানে এখন মাছ চাষের প্রস্তুতি চলছে। তিনিই নেতৃত্ব দিলেন বিধানসভা ভাঙচুরে। তাঁর হাতে তখন ছিল দেশের সংবিধান।
উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে
যেমন কুকুর, তেমন মুগুর। মমতার অস্ত্রেই মমতা বধ।
তৃণমূলের অনেকে ইস্ট ওয়েস্টের শিলান্যাস বলে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া বাজার সম্প্রসারণের ছবিটা দিচ্ছেন। না বুঝেই মমতাকে আয়নায় নিজের মুখটা দেখতে বাধ্য করে ফেলছেন। ওখানে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ডাক পাননি, অথচ খরচের একটা অংশ রাজ্য সরকার দিয়েছিল।
মমতা যে গাছ পুঁতেছিলেন সেটাই এখন তাঁর ঘাড়েই ভেঙে পড়েছে। কিস্যুটি না করে বগল বাজাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এটা নাকি তাদের উপহার! শেষ পর্বে তাদের কিছুটা ভূমিকা আছে বৈকি। কিন্তু সেটা খিরের খুব ছোট্ট একটা অংশ।
মেয়র হাকিম সাহেবের আরও কিছু বচন শোনা যাক। ‘এটাই বিজেপি৷ যার কোনও সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও বুদ্ধি নেই।রেলের অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে নয়, বাংলার দশ কোটি মানুষকে অপমান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, তিনি রাজ্যের দশ কোটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী।’
কোনও মন্তব্য করছি না। কলকাতার মেয়র বলে কথা!
ইস্ট ওয়েস্ট সম্প্রসারণ উদ্বোধনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি
শুরুতে মিডিয়াকর্মী হিসেবে যন্ত্রণার কথাটা বলছিলাম। লেখাটা মমতার নিন্দা-মন্দ করার জন্য লিখছি না। আমি মনে করি, সমাজ-রাজনীতিতে সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাই সত্যিকারের জনমুখী প্রশাসন দিতে পারে। কিন্তু এখন চলছে উলটপুরাণ। সংগঠিত ভাবে মিথ্যাকে সত্যি বলে চালানোর কৌশলটা চলছে দুনিয়াজুড়ে। তার ব্যাপক দাপট বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ইস্ট-ওয়েস্ট নিয়ে একটা মিডিয়াও সত্যটা সামনে আনার সাহস দেখাল না। অনেকে তো আবার মিথ্যাটাকেই সত্য বলে চালাতে চাইল। তোষামোদীর সীমা থাকা দরকার! মিডিয়াও মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে জনবিরোধী, অগণতান্ত্রিক প্রশাসনই তৈরি হবে। যে নজির রাজ্যে-দেশে-দুনিয়ায় দেখা যাচ্ছে।
দরকার বিকল্প মিডিয়া। সমস্যাটা তো গোড়াতেই বলেছি। 
_______________________
আমার ই-মেল আইডি- 
uttalghosh@gmail.com 
iamuttal@gmail.com
আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর
9830870606

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
sudipta বলেছেন…
Thank you dada, tomar aai lekhatai dorkar chilo.

Top Post Ad