link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

মোদীর মুক্তিযুদ্ধ, মমতার সম্পত্তি এবং সুদীপ্তদার বোমা #Modi-Bangladesh-Liberation-War-Mamata-and-politics-of-corruption

কার্টুন: সতীশ আচার্য
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহে অংশ নিয়ে জেল খেটেছিলেন এরকম কোনও তথ্য নেই।
প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যে বলেছেন? 
বাংলাদেশে মোদী, ২০২১

গত বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে ঢাকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'আমি এখানকার তরুণ প্রজন্মের ভাইবোনদের খুব গর্বের সঙ্গে একটি বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া আমার জীবনের প্রথম আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি। আমার বয়স তখন ২০-২২, আমি ও আমার অনেক সহকর্মী বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য সত্যাগ্রহ করেছিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন করায় আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম এবং কারাগারেও গিয়েছিলাম।’
তখনই একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। ভারত তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনেই ছিল। সেজন্য অটলবিহারী বাজপেয়ী ইন্দিরা গান্ধীকে দুর্গা নামেও সম্বোধন করেছিলেন। তাহলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহই বা করতে হল কেন? আর তার জন্য গ্রেফতারই বা হতে হল কেন?
এবার জানা গেল, সেরকম কোনও তথ্যই নেই। নিশ্চয়ই ভাবছেন মোদী বিরোধী কোনও পণ্ডিত বা মিডিয়া এটা বের করেছে। ভুল। তথ্যটা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর জানিয়েছে।
জয়েশ গুরনানি নামে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে (PMO) আরটিআই করে পাঁচটি বিষয়ে তথ্য চেয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট থানায় দায়ের করা এফআইআর, গ্রেফতারের মেমো বা প্রাসঙ্গিক নথি, জেল থেকে তাঁর মুক্তির নথি এবং যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল সেই জেলের নাম। কিন্তু মোদীর ওই বক্তব্যের সমর্থনে কোনও তথ্য নেই বলে জানিয়েছে তাঁরই দফতর। 
বাজপেয়ীর সম্মান নিতে বাংলাদেশে মোদী। ২০১৫
এবারই প্রথম নয়, আগেও অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতিনিধি হিসেবে পুরস্কার নিতে বাংলাদেশে গিয়ে একই দাবি করেছিলেন মোদী। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত ‘সংঘর্ষ মা গুজরাট’ বইয়ে একই দাবি করেছেন! 
তার মানে বারবার মিথ্যে বলছেন প্রধানমন্ত্রী? তিনি সত্যাগ্রহ করে জেলে যাননি?
হ্যাঁ, গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে সত্যাগ্রহ করেই জেলে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাহলে তাঁর দফতর কেন বলছে, তথ্য নেই?
শুনুন তাহলে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামি লিগ। সেই ফলকে বাতিল ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ ঠেকাতে জারি হয় সেনা শাসন। ২৪ মার্চ গভীর রাতে ঢাকায় গ্রেফতার হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল পশ্চিম পাকিস্তানে রাওয়ালপিন্ডির জেলে। 
পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা
বিরোধীদের নির্মূল করতে পূর্ব পাকিস্তানে তখন চলছে পাক সেনার নির্মম হত্যালীলা ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সেই গণহত্যায় প্রাণ যায় পূর্ব পাকিস্তানের অসংখ্য বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদের।
তখনই ২৭ মার্চ, ১৯৭১, চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেডিয়ো স্টেশন (‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’) থেকে তৎকালীন মেজর জিয়া উর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন।
ইন্দিরা ও হাকসার
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করে সংসদে প্রস্তাব পেশ করলেন। তাঁর প্রধান সচিব পি.এন.হাকসরের খসড়া করে দেওয়া সেই প্রস্তাবে পূর্ব পাকিস্তানকে সহযোগিতার বার্তাও দেওয়া হল। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণাকে পরোক্ষে সমর্থন। সরাসরি সমর্থন নয়। 
কেন সরাসরি সমর্থন নয়?
শেখ মুজিবুর রহমনের পরিবারের সঙ্গে ইন্দিরা
তার আগেই ২৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইন্দিরা।একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, ভারতকে এমন ভাবে এগোতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক মহলে কোনও বিতর্ক তৈরি না হয়। কারণ, পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘের সদস্য। আমেরিকা ও চিন যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েই রেখেছিল। 
সেনাপ্রধান মানেকশ ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা
ভারতের সেনাপ্রধান শ্যাম মানেকশ প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সেই মুহূর্তে ভারতীয় সেনা যুদ্ধের জন্য তৈরি নয়। বাবার ভুল মেয়ে করলেন না। সেনাপ্রধানের কথায় সায় দিয়ে সময় কেনার কৌশল নিলেন ইন্দিরা। 
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। স্বাধীন প্রাদেশিক বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা পূর্ব পাকিস্তানের বিরোধী নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের। 
তাজউদ্দিনের সঙ্গে ইন্দিরা

৩ এপ্রিল তিনি দেখা করলেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে কোনও রকমে দিল্লিতে পালিয়ে আসা দুই অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমানের সহযোগিতায় সেই বৈঠকের ভিত তৈরি করেছিলেন দুই বাঙালি। ইন্দিরা গান্ধীর তৎকালীন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী ডঃ অশোক মিত্র এবং দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্সের অধ্যাপক, পরবর্তীতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। বৈঠকে তাজউদ্দিনকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন ইন্দিরা। 
১০ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তানের বৈদ্যনাথটোলায় ‘প্রাদেশিক বাংলাদেশ সরকার’ ঘোষণা হয়ে গেল। সেই সরকারের মন্ত্রিসভা তৈরি হল ১৭ এপ্রিল। 
 
কলকাতায় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের দফতর
কিছুদিনের মধ্যেই তার সদর দফতর উঠে এল কলকাতায় ৮ থিয়েটার রোডের (এখন শেক্সপিয়ার সরণী) বাড়িতে। চোরাগোপ্তা পথে সেই সরকারকে সাহায্য করত ভারত। 
পূর্ব পাকিস্তানে পাক সেনার নির্মম গণহত্যা থামাতে ভারতের হস্তক্ষেপের সমর্থন জোগাড়ে বিদেশ সফরে বেরোলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সবার প্রথম সাড়া দিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। 
ইন্দিরা ও সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ
চুক্তি হল, পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করলে সমর্থন দেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ওদিকে  আমেরিকা চাইছে যুদ্ধটা জলদি শুরু হোক, তাতে ‘বন্ধু’ পাকিস্তানের জেতার সম্ভাবনা বেশি। কারণ ভারতীয় সেনা তখনও তৈরি নয়। আমেরিকাও নিল চোরাগোপ্তা পথ। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ কাজে লাগালো ভারতীয় এজেন্টদের। তাঁদের মধ্যে একজন আবার ছিলেন ইন্দিরার ক্যাবিনেটের সদস্য! বোঝাতে হবে, ভারত-সোভিয়েত চুক্তির ফলে ভারত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’-কে সমর্থন করতে চাইলেও পারবে না। বাধা দেবে সোভিয়েত।
তারপর? 
আরএসএস, তার রাজনৈতিক দল জনসংঘ (বিজেপি-র পূর্বসূরি) সেই কথা প্রচারে নামল। 
বাইরে তো বটেই অটলবিহারী বাজপেয়ী সংসদেও বললেন, সোভিয়েতের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিক ভারত। আমেরিকা ও আরএসএস দুজনেরই শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়ন। ওটা তো কমিউনিস্ট দেশ। 
ভারত-সোভিয়েত চুক্তির দু দিন পরই ১ অগস্ট থেকে শুরু হল বাজপেয়ীর নেতৃত্বে জনসংঘের ‘বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবিতে সত্যাগ্রহ’। 
দিল্লিতে জনসংঘের সভায় বাজপেয়ী
১২ অগাস্ট, দিল্লিতে বিরাট জনসভা করে বাজপেয়ী বললেন, ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি আসলে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র। ওই সত্যাগ্রহে যোগ দিয়েই জেলে গিয়েছিলেন মোদী। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবিতে সত্যাগ্রহ’ করে সত্যি জেলে গিয়েছিলেন মোদী। তাহলে সেকথা কেন স্বীকার করছে না তাঁর সচিবালয়? ইতিহাসের দিকে তাকান। 
১৯৭১। পাক সেনার আত্মসমর্পণ
সংঘের সত্যাগ্রহের দাবি মেনে সোভিয়েতের সঙ্গে হওয়া চুক্তি বাতিল করে  ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের বদলে অগাস্টেই মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে বাংলাদেশ আর স্বাধীনতা পেত না। আমেরিকা ও চিনের সাহায্য নিয়ে অ-প্রস্তুত ভারতীয় সেনাকে হারাতে বেগ পেত না পাকিস্তান। আমাদের দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে এবং প্রতিবেশী দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, সেটা কী করে বলেন প্রধানমন্ত্রী! তাই প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে অস্বীকার করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ই। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় মোদীর জেলে যাওয়ার তথ্য থাকার কথা মানলে সেই অস্বস্তিকর ইতিহাস প্রকাশ হয়ে যাবে। 
নরেন্দ্র মোদী মিথ্যে বলছেন কি না, সেটা মূল কথা নয়। সেটা তিনি হরহামেশাই বলেন।
কখনও বলেন অজ্ঞতার জন্য। যেমন, গোয়া মুঘল আমলে পর্তুগিজদের হাতে যায় কিংবা, মেঘ থাকলে রাডার কাজ করে না অথবা, পুরাকালে যে প্লাস্টিক সার্জারি ছিল তার প্রমাণ গণেশ (মানুষের দেহে প্লাস্টিক সার্জারি করে হাতির মুণ্ড বসানো)।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী আবার রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে ফলের রস খাইয়ে বেলেঘাটায় গান্ধীজির অনশন ভাঙান কিংবা সিধো কানহুর সঙ্গে ডহরবাবুকে খোঁজেন (এসপ্লানেড ইস্টের নাম তো সিধো কানহু ডহর) অথবা সাঁওতালদের পিঁপড়ে খাওয়াকে দারিদ্রের প্রমাণ বলেন।  

জেনেশুনে মিথ্যে বলা একটা রোগ। মোদী জানেন, স্বাধীনতার লড়াইয়ে আরএসএস, হিন্দু মহাসভা কী ভূমিকা নিয়েছিল। জানেন আরএসএস কী চায়। জানেন তেরঙা সম্পর্কে আরএসএসের মনোভাব কী। জানেন শ্যামাপ্রসাদ কেমন ছিলেন। জানেন ১৯৯২ বা ২০০২ সালে ঠিক কী হয়েছিল। তাই একের পর এক মিথ্যে। দিব্যি বলে দেন, নোটবন্দি হলে কালো টাকা, জাল টাকা সব ভ্যানিশ হয়ে যাবে। বিদেশ থেকে কালো টাকা নিয়ে এসে সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ করে ঢুকবে। অনেকে সেসব বিশ্বাস করেন। পরে বোঝা যায় সব বেবাক ধাপ্পা।
এই সব ধাপ্পা মানুষকে খাওয়ানোর জন্য আছে অত্যন্ত আধুনিক, পরিকল্পিত মিডিয়া সেল, আইটি সেল। তাদের কাজ মোদীর অতিমানব ভাবমূর্তি তৈরি করা। সে সব আগে একটি লেখায় বলেছি।
এই যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনেশুনে মিথ্যে বললেন, সেটা নিজের অতিমানব ভাবমূর্তি তৈরি করতে।
বাস্তবে এই সব মানুষ খুব ভীতু হন। তাই সমস্ত রকম শক্তি কাজে লাগিয়ে, রাষ্ট্রের সমস্ত সংস্থাকে কব্জা করে নির্মম ভাবে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চান। 
তপতী গুহঠাকুরতাকে স্বীকৃতি
আমার সংবাদকর্মী জীবনের অন্যতম শিক্ষক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত একটা তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন। ইউনেস্কো আমাদের দুর্গাপূজাকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে। তা নিয়ে খুব হইচই হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে কত হোর্ডিং! ওদিকে কেন্দ্রীয় সরকারও বলতে শুরু করল, তাদের জন্যই এই প্রাপ্তি।সুদীপ্তদা জানালেন তপতী গুহ ঠাকুরতার কথা। বেলুন ফেঁসে গেল। মুখ পুড়ছে দেখে মুখ্যমন্ত্রী তপতী গুহ ঠাকুরতাকে স্বীকৃতি দিলেন। বিজেপি বলল, তপতীর খানিকটা ভূমিকা আছে কিন্তু আসল কাজটা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য। 
সংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত
সুদীপ্তদা খবরটা বের করার আগে পর্যন্ত কিন্তু না রাজ্য না কেন্দ্র, কোনও সরকারই তাঁর কথা উচ্চারণও করেনি। যদিও সবাই সেটা জানত। তপতী গুহঠাকুরতার গবেষণা, কেন্দ্র ও রাজ্যের উদ্যোগ মিলেই এই স্বীকৃতি পেয়েছে আমাদের দুর্গাপুজো। কিন্তু তার বদলে...। আমরা পাবলিকও কেউ মমতাকে, কেউ মোদীকে খিস্তি করেই ঝাল মেটাচ্ছি। কিন্তু ক্ষতিটা কার হচ্ছে? ক্ষতিটা কী হচ্ছে? সবাই মিলে এই উৎসব রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (সরকারি প্রকল্প নয়) ভরে দিতে পারত। রিও ফেস্টিভ্যাল অত পর্যটক টানে। দুর্গোৎসব তো ব্যাপ্তিতে, বৈচিত্রে তারচেয়ে অনেক এগিয়ে।   
গোড়ায় সেই রোগ। সব আলো নিজের উপর পড়বে। বাকি সবাই অন্ধকারে। অতিমানব ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা। মাসুল গুণতে হচ্ছে আমাদের।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যেমন বই লেখেন, কবিতা লেখেন, বইগুলো বেস্ট সেলার হয়, গান লেখেন, গান করেন, বাজনা বাজান, ছবি আঁকেন, কোটি কোটি টাকায় সেই ছবি বিক্রি হয় (সুদীপ্ত সেন জেলে যাওয়ার পর অবশ্য সেই দিন গিয়াছে।) কয়েকদিন আগে জানালেন, মাথায় ইট চাপিয়ে গ্রামে রাস্তা বানানোর কাজেও নেমেছিলেন। সর্বোপরি তিনি সততার প্রতীক। এত এত কাণ্ডের পরেও অনেকে এখনও বিশ্বাস করেন, মমতা সত্যি সত্যি সততার প্রতীক। কিন্তু তিনি নিজে তো সব জানেন। ওই যে বললাম এই সব মানুষেরা খুব ভীতু হয়। 
মমতার বাড়ি
মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে হাইকোর্টে একটা মামলা হয়েছে সোমবার। সেদিন টিএমসিপি-র সমাবেশে একবার বলেছেন। তারপর আবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে। 
কী বলেছেন? তিনি এমপি বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন বা ভাতা নেননি/নেন না। এক কাপ চা খেলেও নিজের টাকায় খান। বই বিক্রির রয়্যালটি থেকে পাওয়া টাকায় তাঁর চলে। 
পরিবারের সঙ্গে মমতা। পিছনে অভিষেক
মা তাঁর কাছে থাকতেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তিনি একা থাকেন। তাঁর ভাইদের আলাদা সংসার। দেখা হয় শুধু উৎসবের সময়।
কেউ জানতে চায়নি। কিন্তু তিনি বলছেন। তাঁর আগে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর বিরুদ্ধে এরকম কোনও অভিযোগই ওঠেনি। উঠেছিল জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে। ছেলে চন্দনকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। তাঁকে তো এরকম কিছু বলতে শুনিনি কখনও। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বলছেন। বলেই যাচ্ছেন। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়? সেটা জানেন বলেই...?  
আজকের সময়কে বলে পোস্ট-ট্রুথ। বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে উত্তর-সত্য বা সত্যোত্তর। সহজে বলতে গেলে মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সময় বা মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে থাকা রাজনীতি। পরিভাষাটি ১৯৯০ দশকের শুরুতে প্রথম ব্যবহৃত হয়। ২০০৪ সালে এরিক অল্টারম্যান 'হোয়েন প্রেসিডেন্টস লাই' বইয়ে "সত্যোত্তর রাষ্ট্রপতিত্ব" (post-truth presidency) পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। তবে শব্দটির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ২০০৮ সালে বিশ্বজোড়া আর্থিক সংকটের সময়। মিথ্যেকে সত্য বলে চালাতেই তো মিথ্যের রাজনীতির আশ্রয় নিতে হয়। অ্যাডলফ হিটলারের সময়ও সেই প্রবণতা ছিল। কিন্তু তখন তো ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। তাই এত ব্যাপ্ত চেহারা নিতে পারেনি। আজকের সময়ের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা ধরুন। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি কত মিথ্যে কথা বলেছিলেন? ৩০ হাজার!
সংকট থেকে বেরনোর কোনও রাস্তা মুনাফার অর্থনীতির পাণ্ডারা বের করতে পারছেন না। তাই বাস্তবতা থেকে পাবলিকের চোখ ও মন সরাতে হবে। সেই প্রয়োজন থেকেই সত্যোত্তর রাজনীতি। এখন দেখবেন বিভিন্ন মিডিয়া।
ভুয়ো খবর বা ‘‌ফেক নিউজ’‌ ধরতে আলাদা বিভাগ তৈরি করেছে। অল্ট নিউজের মতো বেশ কিছু সংস্থা শুধু এই কাজটাই করে। গুগল নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়। গুগল লেন্স-সহ আরও কিছু পদ্ধতি তারা যুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (‌এনসিআরবি )‌-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, গত বছর সবথেকে বেশি ফেক নিউজ ছড়িয়েছে আমাদের রাজ্যেই। গত বছর রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪৩টি ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে। তার মধ্যে ২৮টি নথিভুক্ত করেছে রাজ্য। তেলঙ্গনায় ৩৪টি, উত্তর প্রদেশে ২৪টি ফেক নিউজ নথিভুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতে গত বছর ১৭৯টি ফেক নিউজ নথিভুক্ত হয়েছে। কলকাতায় ফেক নিউজ ছড়িয়েছে ২৮টি, যা দেশের ১৯টি মেট্রো শহরের মোট ফেক নিউজের ৬০%। 
নেতাদের মিথ্যে বলার কার্যকারণ সম্পর্ক কিছুটা বোঝা যাচ্ছে? মিথ্যে বলছে, মিথ্যে বলছে বলে চেঁচালেই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
Keya Ghosh বলেছেন…
চমৎকার তথ্য ও ঝাঁঝ আছে লেখায় ।বেশ
নামহীন বলেছেন…
খুব ভালো একটা লেখা।

Top Post Ad