link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

অভিষেকের 'বাজপাখি', মোদীর 'রাষ্ট্রীয় শোক', মমতার 'চাকরি', অর্ধেক কেরোসিন এবং ১২২ আত্মহত্যা Farmers-suicide-in-West_bengal

আমার লেখাগুলো অনেককে পাঠাই। মতামত চাই।
আমার এক পুরোনো রাজনৈতিক সহকর্মী বলল, রাজনীতি নিয়ে আমি সত্যি হাঁফিয়ে গেছি। না, কোনও পলিটিক্যাল পোস্ট পড়ব না। জানি, সব মানুষ রাজনৈতিক। কিন্তু আর না।
আমাদের কলেজের এক ছাত্রী এখন অধ্যাপনা করে। বলল, এখনকার রাজনীতি আর ভালো লাগে না। হতাশ লাগে। আরও মন খারাপ হয়ে যায়। আমি এই সব থেকে দূরে থাকি আজকাল।
এক সময়ের ডাকাবুকো এক ছাত্রনেত্রী লিখল, আমি নির্ভেজাল, ১০০% সঠিক। বাকি সব অক্ষম। নেতা যা বোঝে, যা জানে তাকে প্রশ্ন করলেই তুমি ভারসাম্য হারাবে। এরাই সমাজের সব থেকে বড়ো রোগের ডিপো। ভাঁড়গুলোকে দেখলেই রাগ হয়। দলীয় রাজনীতির ধোঁয়ায় হাঁপিয়ে উঠি!
কথাগুলো ভুল নয়। কিন্তু হাঁফিয়ে গেলে, খুব হতাশ হলে ক্রমশ তো অবসাদের গাড্ডায় ঢুকে যেতে হবে। তাই রাজনীতির জোকারদের কাণ্ডকারখানা দেখে হরদম মজা লুটি। নিজেকে তো সুস্থ রাখতে হবে।
অভিষেকের বাড়ি
১১ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ি মালবাজারে চা শ্রমিকদের সমাবেশ ছিল। সেখানে অভিষেক ব্যান্যার্জি বললেন, 'কেউ দলকে ভাঙিয়ে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, ঠকিয়ে, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাজনীতি করে দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। রাজ্য নেতা থেকে বুথ স্তরের নেতা সবাইকে বলছি।' পার্থ চ্যাটার্জি, কেষ্ট মণ্ডলের নামও বললেন। কী কাণ্ড দেখুন! তার আগেই ১৪ অগাস্ট অভিষেকের পিসি বলে দিয়েছেন, 'কেষ্টকে গ্রেফতার করলে কেন?' ২৯ অগাস্ট বললেন, 'কেষ্ট জেল থেকে ছাড়া পেলে ওকে বীরের সম্মান দেবেন।' অভিষেকও বলেছিলেন, ২১ জুলাই সমাবেশ হল। তারপরই পার্থ চ্যাটার্জির বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দিল।' মানে পার্থ-কেষ্ট চক্রান্তের শিকার?
এসব দেখে ভুসভুসে হাসি পাবে না?
মালবাজারে চা শ্রমিকদের সমাবেশে অভিষেক বললেন, 'জীবনমান কমান। বড় গাড়িতে কালো কাচ তুলে ঘুরবেন না। রিসর্টে চলে যাবেন না। এসব চলবে না।' 
বলবেনই তো। তিনি না গরীবের পার্টির নেতা! গরীব পার্টির নেতা!
অভিষেকের গাড়ি
অভিষেক কী ভাবে গেলেন মালবাজার?
২৪ ঘণ্টা কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তায় মোড়া এসকালেটর সহ অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা থাকা বাড়ি থেকে (অনেক বলেন, দাম ১২-১৫ কোটি টাকা) কালো দামী গাড়ি (অনেকে বলেন, দাম নাকি ৬০-৭০ লক্ষ টাকা) চেপে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছলেন অভিষেক। 
১২ সেপ্টেম্বর উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সেখানে দাঁড়িয়েছিল ফরাসি দাঁসো কোম্পানির তৈরি ১৭৬ কোটি টাকা দামের প্রাইভেট জেট ফ্যালকন-২০০০। তাজ এয়ার লিমিটেডের মালিকানায় থাকা ওই বিমানে কলকাতা-বাগডোগরা-কলকাতা ভাড়া ৩১ লক্ষ টাকা। তার সঙ্গে যোগ হবে বিমানকর্মীদের পাঁচ তারা হোটেলে রাখার খরচ। অভিষেক নিজেও ছিলেন পাঁচ তারা হোটেলেই। রতন টাটা ছাড়াও অশোক লেল্যান্ড, জিভিকে, বাজাজ, ভারত ফোর্জ গোষ্ঠীর বড় কর্তারা ওই বিমান ব্যবহার করেন। 
সেই বিমানে চেপেই তো জীবনমান নামাতে হয়!
বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি রথীন্দ্র বোস আবার ছবি-টবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, অভিষেক যে চশমা ব্যবহার করেন তার দাম ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা।
বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী মানব মুখার্জি তাঁর অধ্যাপিকা স্ত্রীর চশমা বানাতে ৩৩ হাজার টাকার বিল জমা দিয়েছিলেন। বাম বিধায়ক দিলীপ মজুমদারের বিল ছিল ১৬ হাজার টাকা। হইহই শুরু হওয়ায়া তাঁরা আর টাকা নেননি। ১৭ মে-৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সময়কালে চশমা আর ওষুধের বিল বাবদ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র পেয়েছিলেন ১,১০,০৭৮। হইচই হতেই ৯৯,৮৮০ টাকা ফিরিয়ে দেন। ওই টাকা নিয়েছিলেন দুটো চশমা কিনতে আর দুটো সারাতে। বাকি ১০,১৯৮ টাকা ওষুধের খরচ। অভিষেক কি সরকারের টাকায় চশমা কিনেছেন?  

মোদীর বিমান ও গাড়ি
ওদিকে ‘ফকির আদমি’ চড়েন ১২ কোটি টাকা দামের মার্সিডিজ-বেঞ্জ মেব্যাক এস৬৫০ গাড়িতে। তাঁর বিমান সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি দামের এয়ার ইন্ডিয়া-১। ২০১৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি পরেছিলেন ১০ লক্ষ টাকা দামের স্যুট। তাতে সেলাই করে লেখা ছিল নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
২০১৯ সালে সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য মোদী ব্যবহার করেছিলেন মেব্যাক আইওয়্যারের সানগ্লাস (মডেল Maybach Artist III)। তাতে খোদাই করা, আর্টিস্ট ভি। ফ্রেমটি টাইটানিয়াম আর কাঠ বা পশুর শিং দিয়ে তৈরি। দাম ১৯৯৫ মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকারও বেশি। আমদানি শুল্ক ধরলে অঙ্কটা ২ লক্ষ টাকার বেশি হয়ে যাবে।
২০২১ সালে আকাশপথে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার সময় প্রধানমন্ত্রীর কানে ছিল Bose QuietComfort 35 wireless headphones II মডেলের নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডফোন। দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

নরেন্দ্র মোদী সাধারণত ‘মঁ ব্লাঁ’ কলম ব্যবহার করেন। একেকটির দাম ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। তাঁর সংগ্রহে এই কলম বেশ কয়েকটি পেন আছে। তাঁর হাতে থাকে সুইস ব্র্যান্ড Movado-র ঘড়ি, দাম ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকার মধ্যে (অবশ্যই মডেল পাল্টে যায়। দামও পাল্টে যায়)।

মোদী ও তাঁর কলম
এসব হলেই নানা ঝোলা থেকে নানা বেড়াল লাফিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। কেউ বলছেন, 'ভারত জোড়ো' যাত্রায় রাহুল গান্ধী বারবেরি ব্র্যান্ডের ৪১ হাজার টাকা দামের টি-শার্ট পরেছেন। কেউ মনে করাচ্ছেন, আগে ৭৯ হাজার টাকা দামের জ্যাকেট পরেছিলেন সোনিয়াপুত্র।
রাহুলের সেই টি শার্ট ও জ্যাকেট
কেউ বলছেন, মনে নেই, কাঁচা বেগুনে কামড় দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার লোকসভায় যখন বলছিলেন, 'রান্নার গ্যাসের দাম যা বেড়েছে তাতে এবার থেকে কাঁচা সবজিই কামড়ে কামড়ে খেতে হবে', ঠিক তখনই তাঁর পাশে বসা আরেক তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁর লুই ভিতোঁ ব্র্যান্ডের দেড় থেকে ২ লাখ টাকা দামী ব্যাগটা নিচে নামিয়ে রাখছিলেন (কেউ আবার বলেন, লুকিয়ে ফেলছিলেন)?

এসব দেখেও যদিও আপনার পেটে হাসির গুড়গুড় না তৈরি হয়, তাহলে আপনি নির্ঘাত রামগরুড়ের ছানা।  


মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
২০১৮ সালে সমাজকর্মী অনিল গলগলির RTI-এর জবাবে সরকার জানিয়েছিল, মোদী সরকার প্রথম ৪ বছরে বিজ্ঞাপন দিতে খরচ করেছে ৪,৩৪৩ কোটি টাকা। পরে লোকসভায় প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানান, ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ হয়েছে আরও প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা। 
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তৃণমূল সাংসদরা
যদ্দূর জানা যায়, রাজ্য সরকারও বিজ্ঞাপন বাবদ বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে।
'সন্ন্যাসী' হতে চাওয়া ‘চাওয়ালা’ তো আসলে ‘ফকির আদমি’।
অভিষেক তো গরীব লোকের পার্টির নেতা।
রাজনীতি করেন বলে একটু দামি জিনিস কেনার শখও মেটাতে পারবেন না? নিজের ঢাক পেটাতে একটু পাবলিকের টাকায় বিজ্ঞাপনও দিতে পারবেন না? ওই যারা বলে, জীবনযাপনের ধরণ কেমন তার উপর বোঝা যায় কোনও রাজনীতিকের মুখের কথা আর মনের কথা এক কিনা, তাদের মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে দিতে হয়!
বিজেপির নবান্ন 'অভিযান'। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
অভিষেক ব্যানার্জি বারবার বলছেন, 'আগামীদিনে পঞ্চায়েতেও দেখবেন শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন হবে।'
বিজেপি-র নবান্ন অভিযানেই ট্রেলার দেখা গেল। কর্মীদের আনার জন্য ট্রেন ভাড়া করেছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের স্টেশনে ঢুকতেই দিচ্ছিল না পুলিশ। তাঁদের তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। এমনকী স্টেশনে ঢুকে ঢুকেও। অনেক জায়গায় রেলের আর রেল পুলিশের অফিসাররা গিয়ে রাজ্য পুলিশকে স্টেশন থেকে বের করে দিলেন। তাঁরা তো বিনা টিকিটে আসছিলেন না। তাই তাঁদের বাঁচানো তো রেলের দায়িত্ব। কয়েক দিন আগে বর্ধমানে সিপিএমের আইন অমান্যেও এক কাণ্ড। 
আরে মশাই, অভিষেকের শান্তিপূর্ণ অবাধ ভোটের আশ্বাস আর করলার ক্যাশমেমো তো একই জিনিস!

মনে আছে, সিঙ্গুরে ঢুকতে বাধা পেয়ে মমতা কেমন ছুটে এসেছিলেন বিধানসভায়। সংবিধান হাতে নিয়ে চিৎকার। তারপর অধিবেশন ছেড়ে বেড়িয়ে এসে পার্থ চ্যাটার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কদের বেপরোয়া ভাঙচুর। সেটা ছিল ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর। সেটাও তো আন্দোলন ছিল!

হাওড়ায় রাস্তা কেটে বসানো ব্যারিকেড
বিজেপিকে আটকাতে রাস্তায় গর্ত খুঁড়ে ব্যারিকেড বসিয়েছিল পুলিশ। মনে আছে, কৃষকদের দিল্লি ঢোকা ঠেকাতে এরকম করা হয়েছিল। সেখানে অবশ্য কংক্রিটের ঢালাই করা ব্যারিকেড বানানো হয়েছিল। রাস্তায় বসিয়ে দেওয়া হয় কাচের টুকরো, পেরেক।
বিজেপিও দিয়েছে পুলিশ পিটিয়ে আর পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে। 
বিজেপির নবান্ন অভিযানের কথাই যখন উঠল তো বলি তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়া হিসেবের কথা। নবান্ন অভিযানে নাকি খরচ হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।
বিজেপি-ও কম যায়? সোমবার সরকারি খরচে নেতাজি ইন্ডোরে চাকরি বিলির সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি বলছে, ভলভো বাসে কলকাতা লাগোয়া ছয় জেলা থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসা হয়েছিল। আর নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল নাকি বকলমে অভিষেকের একটি কোম্পানি। ২ ঘণ্টার অনুষ্ঠানের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ৪০ লক্ষ টাকা। বাস্তবে নাকি খরচ হয়েছে ৭০ লক্ষ টাকা।
হিসেব ঠিক কী না সেটা সরকার বলবে। কিন্তু ব্যাপারটা বেশ মজার হয়েছে। কেউ কখনও দেখেনি। বলা হয়েছিল, ১১ হাজার জনকে চাকরি দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলতে ওঠার পর বোঝা গেল, একটা চাকরিও সরকারি নয়। আইটিআই-পলিটেকনিক- ভোকেশনাল কোর্সের যে সব সরকারি সংস্থা আছে সেখান থেকে পাশ করে ওঁরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাচ্ছেন। বছরের পর বছর এভাবেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি পান। তা নিয়ে এই কাণ্ড হয় না। এতে রাজ্য সরকারের সাফল্য কি? তা-ও আবার দেখা গেল, কেউ চাকরির নিয়োগপত্রই হাতে পাননি। পরে আবার জানা গেল, ছেলেমেয়েদের নাকি ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এরকম আরও তিনটে চাকরি বিলির সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও কয়েক লক্ষ টাকার ঢপবাজি।
রাজ্যে সরকারি দফতরে শূন্যপদ কত? নিয়োগ বন্ধ। আর কোটি কোটি খরচ করে চাকরি বিলি! 
মন তাজা হয়ে যায়!
রাম মন্দিরের ভূমি পুজা
সংবিধানকে কাঁচ কলা দেখিয়ে রাম মন্দিরের ভূমিপুজো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মন্দির তৈরির জন্য তৈরি শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মকর সংক্রান্তিতে গর্ভগৃহে বসবে রামলালার মূর্তি। খরচ ধরা হয়েছে ১৮০০ কোটি টাকা। তবে তা বাড়তেও পারে। আর ৪৪ দিনে মন্দির তৈরির জন্য ট্রাস্ট পেয়েছে ২১০০ কোটি টাকা। লোকসভা ভোটের আগেই উদ্বোধন হয়ে যাবে রাম মন্দির। 
এর চেয়ে সুখের কথা আর কী হতে পারে! 
১৯৯২ সালে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার পর থেকে একটা স্লোগান ওঠে, ‘ইয়ে তো সির্ফ এক ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়’। দেখেশুনে মনে হচ্ছে লোকসভা ভোটের আগেই কাশী-মথুরারও একটা হিল্লে হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী এখন ব্যস্ত দেশকে গোলামীর চিহ্নমুক্ত করার কাজে।
ব্রিটিশ শাসনের স্মৃতিবাহী সেন্ট জর্জ ক্রস মুছে গেল ভারতীয় নৌবাহিনীর পতাকা থেকে। সেখানে এলো ছত্রপতি শিবাজির ‘রাজমুদ্রা’। সেই নয়া পতাকার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘এ বার গোলামির চিহ্ন থেকে মুক্তি পেল নৌসেনার পতাকা।’ তাতে শিবাজীর রাজমুদ্রা কেন জোড়া হল সে প্রশ্ন অবশ্য কেউ তোলেনি।
দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে বসল একটি গ্রানাইট পাথর কেটে তৈরি ২৮০ মেট্রিক টন ওজনের ২৮ ফুট উঁচু নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তি। প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'স্বাধীনতার পর নেতাজির নাম মানুষের মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। নেতাজি ছিলেন অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আদর্শ মেনে চললে আমাদের দেশ আরও উন্নত হত। আমরা ক্ষমতায় আসার পর নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নেতাজি স্বপ্ন দেখেছিলেন, লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা তোলার। আমি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে লালকেল্লায় তেরঙা পতাকা তোলার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।'
সুভাষচন্দ্র বলতেন, 
'হিন্দু ও মুসলিম দু তরফেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তৃতীয় পক্ষ, যারা চায় দুই সম্প্রদায় লড়াই করুক, তাতে জাতীয়তাবাদী শক্তি দুর্বল হোক, তারা এই সুযোগ নিচ্ছে।'
'একজন মুসলমান কৃষক এবং একজন মুসলমান জমিদারের মধ্যে যতটা মিল তার চেয়ে ঢের বেশি মিল একজন মুসলমান কৃষক এবং একজন হিন্দু কৃষকের মধ্যে। তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ কোথায় নিহিত আছে জনসাধারণকে শুধু সেই শিক্ষা দিতে হবে এবং একবার এই কথাটা বুঝতে পারলে তারা আর সাম্প্রদায়িক বিবাদে নিজেদের খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হবে না।'
সেই সুভাষচন্দ্রের দেখানো পথেই হাঁটছেন নরেন্দ্র মোদী! আরএসএস স্বয়ংসেবক নরেন্দ্র মোদী! হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি আরএসএস-এর ঘোষিত লক্ষ্য। 'নেতাজির রাস্তায় চলায়' মোদীর রাজত্বে ধর্মের নামে খুন -হিংসা-বিদ্বেষ বাড়ছে, গোরক্ষার নামে মানুষ খুন হচ্ছে, লাভ জিহাদের নামে হামলাও বাড়ছে।  
বিনা পয়সায় এমন বিনোদন পাবেন? সত্যি করে বলুন।

নেতাজির মূর্তি উন্মোচনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বিস্তৃত 'রাজপথ'-এর নাম বদলে হল 'কর্তব্য পথ'। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, 'গোলামির প্রতীক 'রাজপথ' ইতিহাস থেকে মুছে গেল। রাজপথ আজ ইতিহাস। 'কর্তব্য পথ'-এর নামে আজ দেশে এক নতুন ইতিহাস তৈরি হয়ে গেল। শুধু উপরের সাজসজ্জা নয়, তার আত্মাও বদলে গেল।'
কেমন এই আত্মার বদল? রবিবার সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ছিল। প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। 
যারা ১৯০ বছর আমাদের গোলাম বানিয়ে রেখেছিল, সেই দেশের রানীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক!
কেন করবে না? 
আরএসএস–এর দ্বিতীয় প্রধান এম এস গোলওয়ালকর বলেছিলেন, ‘ব্রিটিশ বিরোধিতাকে ভাবা হচ্ছে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমার্থক৷ এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলন, তার নেতৃবর্গ ও সাধারণ মানুষের উপর বিনাশকারী প্রভাব ফেলেছিল’ (Bunch of Thoughts, Part 1, Page: 125) 
যাঁদের কাছে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল একটি ‘প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন’, তাদের স্বয়ংসেবকরা মন্ত্রী হিসেবে ব্রিটিশ প্রভুদের জন্য এটুকু করবেন না! তাঁদের শরীরে কোনও রাগ নেই। তাই কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, কোহিনূর মোটেই চুরি করেনি ব্রিটিশরা। ওটা দান করা হয়েছিল। দান করা জিনিস আর ফেরত চাওয়া যায় বলুন? 
রেগে যাচ্ছেন নাকি? ছি ছি, আপনি তো বেশ দেশদ্রোহী আছেন! নতুন কিছু হজম করতে পারেন না! 
মুকুটে কোহিনূর। রান দ্বিতীয় এলিজাবেথ
এরকম দামী দামী বাড়ি-গাড়ি-বিমান-পেন-সানগ্লাস-হেডফোন-টি শার্ট-ব্যাগ-অভিযান-চাকরি বিলি সভা-মন্দির-মুকুটের কথা পড়তে পড়তে এবং হাসতে হাসতে পেটে ব্যথা হয়ে গেছে? চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে গেছে? 
তাহলে শেষ পাতে...
২০২১ সালে শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই কৃষি ও কৃষি সম্পর্কযুক্ত ক্ষেত্রে ১২২ জন আত্মহত্যা করেছেন। 
তাহলে রাজ্য সরকার যে বারবার বলে, এ রাজ্যে গত কয়েক বছরে কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেননি। বিধানসভাতেও সেকথা জানিয়েছে সরকারপক্ষ। রাজ্য সরকারের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয় ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) রিপোর্ট। ২৯ অগাস্ট প্রকাশিত NCRB রিপোর্টে আরও কয়েকটি রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত ক্ষেত্রে আত্মহত্যা দেখানো হয়েছে শূন্য (০)।
সমাজ ও আইন গবেষক এবং RTI কর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামীর করা RTI-এর জবাবে 'দ্য স্টেট পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার এন্ড ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (D এন্ড T), পশ্চিম মেদিনীপুর কিন্তু জানিয়েছেন, শুধু ২০২১ সালে ওই জেলার ২৩টি থানা এলাকায় কৃষি ও কৃষি সম্পর্কযুক্ত ক্ষেত্রে ১২২ জন আত্মহত্যা করেছেন। ঘাটাল থানা এলাকায় সংখ্যাটা ৬৩, গোয়ালতোড়ে ১৪।
আশা করি, আর বদহজম হবে না। সিওর না? তাহলে আরেকটা তথ্য জানাই।
অন্য রাজ্য যা পেত তাই পাবে। কিন্তু বাংলার জন্য কেরোসিনের (Kerosene) বরাদ্দ অর্ধেক করে দিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলায় যা কেরোসিন পাঠাবে কেন্দ্র তা আগের তুলনায় পুরোপুরি অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। আগে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন (Kerosene) দেওয়া হত। এই হিসেবে মাসিক বরাদ্দ ছিল ৫৮ হাজার ৬৬৮ কিলোলিটার। অক্টোবর থেকে প্রতি তিন মাসের বরাদ্দ কমে হচ্ছে ৮৮ হাজার ৩৩২ কিলোলিটার। ফলে মাসিক বরাদ্দ দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৪৪৪ কিলোলিটার।
জোরসে বলুন, 'চোর ধরো, জেল ভরো', নয়তো 'কপালে গুলি'।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
নামহীন বলেছেন…
যাকে ভোট দিতে হয় তাকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন থাকতেই হবে।
নামহীন বলেছেন…
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ' বীরপুরুষ ' পড়ে নেবেন please.
কেউ একটু বিষ দিতে পারেন!
সেঁকো!🤣

Top Post Ad