link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

আনিস-মৃত্যু, জয় কিষাণ পোর্টাল এবং মোদী-দিদির সেটিং রাজনীতি #Anish-Khan-brother-attacked

বগটুই গণহত্যা, হাঁসখালি ধর্ষণ, ভোট পরবর্তী হিংসা, দুই কাউন্সিলর খুন ইত্যাদি নানা ঘটনায় রাজ্য তখন উদ্বেল। একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। অতি সক্রিয় আদালত নির্ভর রাজনীতি। তখন আমার উপলব্ধির কথা বলেছিলাম। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে টানা ধর্না আর আনিস খানের মৃত্যু, এই দুটো রাজ্যের রাজনীতিতে গেম চেঞ্জার হতে পারে। তখনও ইডি পার্থ চাটার্জিকে গ্রেফতার করেনি। তখনও আনিসের মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে নানা জনের নানা রকম আন্দোলন চলছে। তখনও মহম্মদ সেলিমের হাত ধরে ডিওয়াইএফআই মঞ্চে এসে হাজির হননি আনিসের বাবা। যেদিন এলেন তারপর থেকে বাকি সবাই সরে যেতে থাকল।
নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে হবু শিক্ষকদের আন্দোলন খেল দেখাচ্ছে। ওঁরা এখনও কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে যাননি। তাই আন্দোলনটা জীবিত আছে।
আনিসের খুড়তুতো ভাই সলমন প্রধান সাক্ষী। মামলার ব্যাপারেও খুব তৎপর। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁকে কোপানো হয়। অভিযুক্ত তৃমমূল পরিচালিক পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের দিকে। সিপিএমের 'আমরাই সব', 'আমরাই শ্রেষ্ঠ' রাজনীতির অনিবার্য ফল, আন্দোলনের প্রসারিত মঞ্চ আর তৈরি আর হয় না। এই একবার নয়, চিটফান্ড প্রতারিতদের মঞ্চ সহ বিভিন্ন ব্যাপারে বারবার এরকম হয়েছে। ভেবে দেখেছেন, একার সংখ্যাতেই সরকার গড়তে পারত, তবু কেন বামফ্রন্ট বানিয়ে সরকার চালিয়েছে সিপিএম? অন্য শরিকদের তাঁবে‌ রেখে দাদাগিরি করার জন্য তো নয়।
নবান্নের ১৪ তলা দখলটাই মহম্মদ সেলিমদের একমাত্র স্বপ্ন। আনিসদের পরিবার সেই স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি। অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের আন্দোলনের মঞ্চ গড়ার প্রথম ধাপে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যৌথ মঞ্চ গড়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে SFI-এর আমি-সর্বস্ব মনোভাবের জন্য। এখন লোক দেখানো ইনসাফ সমাবেশের ডাক, শুধু সেই SFI DYFI. অথচ আনিস তো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। আনিস আইএসএফ-এর। আনিস নকশালপন্থীদের। আনিস মানবাধিকার সংগঠনের। তারা সরে গেছে সেই আন্দোলন থেকে। SFI সম্পর্কে এখনও মনের মধ্যে দুর্বলতা আছে। তাই যন্ত্রণাটা আরও বেশি হয়েছে।
আনিসের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে আন্দোলনে মীনাক্ষি মুখার্জি
অহঙ্কার ভাবলে ভাবুন, পরিস্থিতি কেমন, এই পরিস্থিতিতে কী রকম রাজনীতি প্রয়োজন, সেটা বুঝতে পারি। ভোটের রাজনীতি নয়, আমি যে রাজনীতিতে ভরসা রাখি, সেই শ্রেণির রাজনীতির কথা বলছি।  কোনও ঘটনা ঘটলে অনেকে বলে, তুমি তো আগে বলেছিলে। আমি জ্যোতিষী নই। রাজনীতি সম্পর্কে এই বোধের ভরসাতেই কথা বলি। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে না পেরে অস্থির লাগে, রাগ হয়, অবসন্ন লাগে। জানি, আমার মতো এরকম আরও অনেকে আছেন। জানি, সিপিএমের অনেকে আমার ওপর খুব ক্রুদ্ধ। আসলে কি জানেন, কারও ওপর রাগ মেটাতে আমি বলি না। আমি ওদের চিনি। জানি ওদের মতলব। তাই বলি। অনেক চেনা মানুষকে দেখে আশ্চর্য লাগে। ভোট ছাড়া আর কোনও চিন্তা নেই। আমার সুরে সুর না মেলালেই তুমি শত্রু। নেতা বলেন, আরএসএসের দুই পার্টি বিজেপি আর তৃণমূল। ওঁরাও নাচেন। এই দেখ, মমতাও আরএসএস সম্পর্কে নরম, সেটা তো প্রকাশ্যেই স্বীকার করল। ভাবটা এমন, পাবলিক তাঁদের সরকার থেকে সরিয়ে মহা অন্যায় করেছে। তাঁদের শাসনে সব কত সুন্দর ছিল! যাক সে কথা।  রাজ্য জুড়ে একটা আশ্চর্য অবসন্ন সময়। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে ১০০% নম্বর, তারপরের বছর হোম সেন্টারে পরীক্ষা, দেদার নম্বর, ক্লাসটাসের বালাই নেই। শুধু ছুটি ছুটি আর ছুটি। পরপর তিনটি প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। ফল ভুগতে হবে ভবিষ্যতে। তার সঙ্গে বিপুল সংখ্যার স্কুলছুট। 
ভাঙড় কলেজে 
কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাল? রায়গঞ্জ কলেজের প্রিন্সিপালের মার খাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক দিবসে 'অনবদ্য' নাচ। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে। কাঠগড়ায় শাসক দল। দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় শাসকের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বিরোধীরা। 'যখন যেমন তখন তেমন' হুজুগে রাজনীতি। স্কুল ছাত্রদের জামায় কেন 'ব' বসবে, তা নিয়ে কী মাথাব্যথা! মিডিয়ার দৌলতে বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজ নামক নপুংসক কিছু জীবের নীরবতা বা চাটুকারিতা। শিক্ষা গোল্লায় যাচ্ছে। প্রবীণ শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন উপাচার্যের কাছে তার চেয়েও জরুরি বিষয় হল, কেন কাগজপত্র ছাড়াই বাড়ির কাছে শিক্ষকতার চাকরি পেলেন অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে। আসলে তাতে যে পার্টির স্বার্থপূরণ হবে। গণপরিবহন ব্যবস্থা লাটে ওঠার জোগাড়। শুনতে হয়, তেল নেই তাই সরকারি বাস অনিয়মিত। ভাঁড়ারে টাকা নেই। তাই তেলের দাম দেওয়া যাচ্ছে না। দিনের পর দিন ক্ষতি করে বেসরকারি বাস কেন চালাবেন মালিকরা?
অনেকে বলেন, আপনি কি রাজনীতি চান সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। নিড়ানি দিয়ে কিছু আগাছা উপড়ে দেওয়াটাই আমাদের কাছে রাজনীতি। কিছু হইচই। তারপর ভোটের অঙ্ক। কিন্তু প্রয়োজন নতুন ধরণের রাজনীতি। মানুষের প্রতি সত্যিকারের দায়বদ্ধ রাজনীতি। ধৈর্য ধরে, পরিশ্রম করে মাটি কুপিয়ে কুপিয়ে সেই জমি তৈরি করতে হয়। 
অভীক সাহা। নামটা বললে অনেকেই চিনবেন না। যোগেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষনদের নাম শুনেছি অনেকেই। 'আপ' ছেড়ে 'স্বরাজ ইন্ডিয়া' নামে রাজনৈতিক দল গড়ার কাজে যোগেন্দ্র, প্রশান্তদের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন অভীক সাহা। এখন পার্টির সাধারণ সম্পাদক। জয় কিষান আন্দোলনের সভাপতি। দিল্লির দুর্বার কৃষক আন্দোলনের ভিত তৈরি করা AIKSCC-র জাতীয় সম্পাদক। এসব জেনেছি অনেক পরে।
অভীক সাহা ও যোগেন্দ্র যাদব

অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর সঙ্গে পরিচয় ছিল SFI করার সময় থেকে। ওর সূত্রেই পরিচয় অভীকদার সঙ্গে। তারপর থেকে নিয়মিত ওঁদের কাজকর্মের কথা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। রোজ। ক'দিন আগে একটা খবর দেখে লাফিয়ে উঠলাম। অভীকদাদের জয় কিষান আন্দোলন একটা ওয়েবসাইট চালু করেছে jaikisanweb (https://www.jaikisanweb.in/)। কী থাকবে তাতে? সারা ভারতের কৃষক আন্দোলনের একত্রিত তথ্য। প্রতিদিন। ওঁরা লিখেছেন, এই নিউজ পোর্টালকে তাঁরা ‘জয় কিষাণ আন্দোলন’-এর মুখপত্র বলতে চান না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক, খেতমজুর, মৎস্যজীবী, পশুপালক, মধুসংগ্রহকারী, বনবাসী বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের লড়াইয়ের সব খবর তাঁরা প্রকাশ করতে চান। মানে দেশের সব রাজ্যের সব প্রান্তের কৃষকদের সমস্যা, কৃষক আন্দোলনের খবর এক জায়গায় করার প্রয়াস।
(যে কেউ এরকম কোনও খবর লিখে বা অডিও করে, সঙ্গে ছবি ও ভিডিও দিয়ে পাঠাতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ +91 8336 939393, ইমেল jaikisanweb@gmail.com)
উচ্ছ্বাসের কারণ কী?
প্রথমত, অভীকদাদের এরকম উদার, সমন্বয়কামী মনোভাব। সাধারণ ভাবে চোখের সামনে যে সব রাজনৈতিক শক্তিকে দেখি, তাদের সবার মনোভাব হলো, আমরাই শুধু ঠিক। আমার নেতৃত্ব মেনে চলতে পারলে চলো। নয়তো এসো। দিল্লির কৃষক আন্দোলন দেখিয়েছে, সেটা রাস্তা নয়। সব ক্ষুদ্রতাকে সরিয়ে সবাই মিলে এগোতে না পারলে জেতা সম্ভব না।
দ্বিতীয়ত, কৃষক সমাজ ও কৃষকদের আন্দোলনকে এতো গুরুত্ব দেওয়া। দেশের বেশির ভাগ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় আছে কৃষিক্ষেত্র। দেশের একেক জায়গায় কৃষি ও কৃষকের একেক রকম চেহারা। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সময় অনেককে বলতে শুনেছি, এটা দামী গাড়ি চড়া কৃষকদের আন্দোলন। গরীব কৃষকের কী যায় আসে! অনেকে এমনও বলেছেন, কৃষি আইনগুলো বড়লোক কৃষকদের বিরুদ্ধে হলেও তাতে গরীব কৃষকের লাভ হবে। কিন্তু দিল্লির আন্দোলনে পঞ্জাবের কৃষকদের সঙ্গেই রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের কৃষকরাও ছিলেন। মহারাষ্ট্র এবং মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের বহু কৃষকও ছিলেন। তাঁরাও গরীব কৃষক। তেভাগা নকশালবাড়ির রাজ্যে কার্যত ছিল হিরন্ময় নীরবতা।
অনেকের সঙ্গেই রাজনীতি সম্পর্কে কথা হয়। দেখি প্রায় সবাই রাজনীতি মানে ভোটের সমীকরণকেই বোঝেন। ভোটের বাইরের আন্দোলনের কথা বলতে গেলে ঠাট্টা-তামাশাও শুনতে হয়, এমনকী যাঁরা নিজেদের কমিউনিস্ট পার্টির লোক, বামপন্থী বলে দাবি করেন, তাঁদের কাছ থেকেও। মনে হয়, আমি মঙ্গল গ্রহের মানুষের ভাষায় কথা বলছি।
এক সময় দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সিপিএমের সম্পাদক ছিলেন ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্য। যাদবপুরের বিধায়কও ছিলেন কিছু দিন। তাঁর মৃত্যুর পর ছাপানো ব্যাজে লেখা ছিল, 
অহল্যা বাতাসীর কথা/লইয়া দাশু-মতির নাম/ঝরঝরাইয়া কাঁদবে না আর/চাষীর বন্ধু ক্ষুদিরাম। (তেভাগা আন্দোলনের অহল্যা-বাতাসী আর সোনারপুরের কৃষক আন্দোলনের দাশু-মতি)। লাইনগুলো কথার কথা ছিল না, আক্ষরিক অর্থেই সত্যি ছিল। ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্যকে দুবার সামনাসামনি দেখেছি। একবার গাঙ্গুলিবাগানে পার্টির লোকাল কমিটি অফিসে কৃষকদের কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলতে দেখেছিলাম।
তেভাগা। সোমনাথ হোড়ের আঁকা
১৯৪৬ কলকাতা দাঙ্গা, দেশভাগ ইত্যাদির পরেও আমাদের রাজ্যে যে সম্প্রীতির সামাজিক পরিবেশ থেকেছে তার বড় কারণ এই কৃষকদের আন্দোলন। রুটি রুজি অধিকারের লড়াই। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে হারানোর একমাত্র ওষুধ। বাংলার সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের সেই ধারা কংগ্রেস বয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। বয়ে নিয়ে গেছে বামপন্থী রাজনীতির ধারায়। কিন্তু একটা সময়ের পর থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে থাকেন। গুরুত্ব পেতে শুরু করেন ছাত্রযুব আন্দোলনের নেতারা। অথচ শ্রমিক বা কৃষক সমাজের মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছাড়া আর্থিক সামাজিক রাজনৈতিক সংকটের আসল চেহারাটা উপলব্ধি ও অনুভব করা যায় না। যন্ত্রণা অনুভব না করলে কোনও লড়াই হতে পারে? 
আজকের রাজনীতির রাজ্যের কৃষি অর্থনীতি নিয়ে কোনও ভাবনা আছে? কর্মসংস্থান নিয়ে? বেশি মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর করাটা স্বাস্থ্যকর নয়। তাহলে রাস্তা? নেতা বলেছেন, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। ব্যস, সব চলল। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে শিল্পায়নের যা মডেল, বুদ্ধদেবের পশ্চিমবঙ্গেও তাই! কেউ প্রশ্ন করে না। কেন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা শিল্পে পিছিয়ে পড়ল? আলোচনার কী দরকার! রতন টাটা, সজ্জন জিন্দাল আসবেন, শিল্প করবেন, ব্যস সব সমাধান। আজও ভোট প্রচারে গিয়ে সেটাই বলেন নবীন নেতা। পুঁজিবাদের সংকটটা কী? কেন বলা হয় কর্মসংস্থানহীন উন্নয়নের কথা? সেগুলো ভুল?
রাজনীতি ও আদর্শগত ক্ষেত্রে এই ফাঁপা জায়গার সুযোগ নিয়েই উঠে আসেন মমতা ব্যানার্জি। কারা তাঁর সঙ্গী হয়? সেই অংশের মানুষ যাঁরা ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিলেন, বামফ্রন্ট সরকারের নীতিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন, প্রথম দিকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ছিল যাঁদের হাতেই। কেন এই বদল? নেতা বলেছেন, কূটিল ষড়যন্ত্র। নেতা বলছেন, বিজেপি-তৃণমূল-বুদ্ধিজীবী-এসইউসি-পিডিএস-কর্পোরেট পুঁজি এক হয়েছিল বলেই...। আমাদের কোনও দোষ নেই। আর ভাবনা কি? ওই মানুষদের গায়েই ছাপ পড়ল, লুম্পেন। মমতার সময়ে খুল্লামখুল্লা দুর্নীতির মহোৎসব যেমন শুরু হল, তেমনই অনেক আদিবাসী-দলিত-মুসলিম নেতৃত্বের ভূমিকায় এলেন। গ্রামের রাস্তার হাল ফিরল। যাঁরা ভাবছেন দুর্নীতি নিয়ে হইচইয়ে মমতার দুর্গ ভেঙে পড়ছে, বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখুন, ভুল ভাবছেন। তৃণমূল গুটিয়ে গেছে, সত্যি। কিন্তু তৃণমূলের ঘর ভেঙে অন্য ঘরে লোক যাচ্ছে, সেটাও হচ্ছে? শহরে বসে দিব্যি লাগতে পারে। গ্রামের বাস্তবতা অন্য। 
মমতা ব্যানার্জি সিঙ্গুরে কারখানার বিরোধিতা করেছিলেন। বিকাশ ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখার্জিরাও দেউচা পাঁচামির বিরোধিতা করছেন। কেন? আদিবাসীদের উৎখাতের বিরুদ্ধে। তাহলে কয়লা খনি হবে কী করে? সেদিনের মমতা আর আজকের সিপিএমে ফারাক কি? বিধান রায়ের আমলে সাঁওতালডিহি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সময় কী হয়েছিল? কী অবস্থান ছিল জ্যোতি বসুদের?
ব্যক্তিগত ভাবে আমিও দেউচা পাঁচামির প্রকল্পের বিরুদ্ধে। তার মূল কারণ পরিবেশ।
রাজ্যে যাঁরা নিজেদের বামপন্থী পার্টি বলে দাবি করেন তাঁদের নেতা কর্মীদের জন্য আমার কোনও কথা নেই। তাঁরা ভাবনায় 'শ্রেষ্ঠ'। বড় কোনও অপরাধ বা দুর্নীতির কথা আলোচনা করতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বলতে অভ্যস্ত, ভোটের ফল দেখুন। মমতার সেই 'জো জিতা ওহি সিকান্দার' এখন স্বঘোষিত বামপন্থীদেরও দৃষ্টিভঙ্গী। বিজেপির তোলা 'চোর ধরো, জেলে ভরো' তাঁদেরও স্লোগান। 
কলকাতায় মিছিলে আপ
অভীক সাহারা তাদের সামর্থ মতো ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে কাজ করছেন। যেটা হতে পারে বাংলার রাজনীতির গেম চেঞ্জার। আম আদমি পার্টি রাজ্যে তাদের নেতা-কর্মীদের নিজের নিজের কাজের জায়গায় 'আমরা ক্ষমতায় এলে কী করব' মডেল তৈরি করতে বলছেন। স্বরাজ ইন্ডিয়া বা আপ কত ভোট পাবে, কত আসন পাবে, জানি না, কিন্তু ভরসা এটুকুই। ইতিবাচক রাজনীতির বীজ পোঁতার কাজ চলছে। এটাই বিকল্প রাজনীতি। ঘোর সিপিএম সমর্থক এক বন্ধুর সঙ্গে আপ, স্বরাজ ইন্ডিয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। খানিকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই বলল, ওদের লোক কোথায়? সিট কোথায় পাবে? বললাম, সিপিএম একটা রাজ্যে জোট বানিয়ে সরকারে। আপ দুটো রাজ্যে। এরাজ্যে সিপিএমের বিধায়ক শূন্য। রাজস্থান, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, হিমাচল, অসম, ওড়িশাতেও সিপিএমের বিধায়ক আছেন। বিহারে সিপিএমের ২, লিবারেশন ১২ বিধায়ক। স্বরাজ ইন্ডিয়া দেশজুড়ে ভারত জোড়ো কর্মসূচি করছে। আপ ভোটের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা পয়সায় দিচ্ছে। দিল্লির শিক্ষাক্ষেত্রের হাল বদলে দিয়েছে।  কমিউনিটি স্বাস্থ্যের ধারণা কার্যকর করছে। বিজেপির ৫০০ নেতা নেমেছেন। তবু ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় ৬২ আসন জিতেছে। রোজ রোজ রোজ বিজেপির চাপ সামলে সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। 
এরপর আর কথা এগোয়নি। 
নবান্নের চোদ্দ তলাই রাজনীতির একমাত্র টার্গেট হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়। তার মানে কি ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না? অবশ্যই করি। বন্দুকের নল নির্ভর বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা রোম্যান্টিক হতে পারে, কিন্তু বাস্তবসম্মত নয় বলেই মনে করি। এটাও মনে করি, ইতিবাচক রাজনীতি কখনও ভোটসর্বস্ব হতে পারে না। আন্দোলনের মাঠেই মানুষ বন্ধু চেনেন। তার পাশে দাঁড়ান। জ্যোতি বসুকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এত বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন সেটা ভেবেছিলেন? নির্লিপ্ত গলায় বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হব সেটাই তো কখনও ভাবিনি। 
ভোটের রাজনীতি আর ভোটসর্বস্ব রাজনীতি এক জিনিস নয়, এটা উপলব্ধি করা খুব দরকার। বিশেষত আজকের সময়ে, বিজেপির মতো রাজনৈতিক শক্তির দাপটের সময়ে। এগনোর শক্তি যদি সে কাজ করতে না পারে তাহলে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি সেই জমির দখল নেবে। কোনও কাজ করার আগে হিসেব করব ভোটের অঙ্ক। নাহ্, সে রাজনীতি টিকতে পারে না।  
'কংগ্রেসমুক্ত ভারত' চায় বিজেপি। অনেকেই মনে করতে পারেন, এর মানে হচ্ছে ভোটের লড়াইয়ে কংগ্রেসকে হারিয়ে দেওয়া। বাস্তবে এ হল কংগ্রেসের ভাবধারাকে মুছে ফেলা। কংগ্রেসের ভাবধারা মানে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা, ব্যক্তি স্বাধীনতার ধারণা, পরিকল্পিত অর্থনীতির ধারণা। ভোট সেখানে অত্যন্ত অকিঞ্চিৎকর বিষয়। 

রাজনীতি তো আসলে ভাবধারার লড়াই। কংগ্রেসের ভাবধারাকে মুছে ফেলা না গেলে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। দিন কয়েক আগে একটা স্লোগান দেখছিলাম, রাম স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারেন, তিনি আমার আদর্শ নন। আমার আদর্শ সতীদাহ প্রথা ঠেকানো রামমোহন রায়। তাতে উন্মাদনা থাকতে পারে, কিন্তু বিপদও আছে বিস্তর। বিপদ বোঝাপড়ার। রাজনৈতিক হিন্দুত্বের ধারণায় রাম-কৃষ্ণ-কালী, কোনও দেবদেবীর কোনও ভূমিকা নেই, আরএসএস বা হিন্দু মহাসভার আদর্শগত বই-পুস্তিকা পড়লেই সেটা দেখা যাবে। বলতে পারেন, তাহলে রামমন্দির তৈরি হচ্ছে কেন? ওটা প্রতীকী। হিন্দু জাত্যাভিমানকে উস্কে দেওয়া। আরএসএস-এর লক্ষ্য হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করা, রামরাজ্য নয়। 
সবরমতি আশ্রমে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী চরকা কাটছেন, গান্ধীজির চশমা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রতীক করা, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ইয়া উঁচু মূর্তি বসানো, ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানো...এসবের টার্গেট এক। কংগ্রেসমুক্ত ভারত। স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস ভাবধারার প্রতীক জওহরলাল নেহরুকে মুছে দিয়ে গান্ধী পরিবারকেন্দ্রীক রাজনীতির বিরোধিতা, নেহরু ছাড়া অন্য নেতাদের মাথায় তোলা। সুভাষের বদলে বি আর আম্বেদকরের মূর্তি বসানো হল না কেন? কারণ তাঁকে নেহেরুর পাল্টা হিসেবে তুলে ধরা যেত না। সুভাষ ও নেহরু কংগ্রেসের মধ্যে সমাজতন্ত্রী, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রবক্তা ছিলেন। কিন্তু দেখানোর চেষ্টা হয় দুজন শত্রু ছিলেন। সেই ধারণাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। 

এখন মোদী বলছেন, নেতাজির পথে তিনি দেশ শাসন করছেন। ২০০২ সালে রক্তাক্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সুভাষচন্দ্রের পথে চলার কথা।
রাজনৈতিক হিন্দুত্বের জনক বিনায়ক দামোদর সাভারকার ১৯৩৭ সালে রাজনীতিতে ফেরার অনুমতি পেতেই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। জেলমুক্তির পর তিনি তখন ছিলেন দেরাদুনে। সত্যি তো সাভারকার অত্যন্ত সাহসী মানুষ ছিলেন। লন্ডনে বসে চরমপন্থী ধারার স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁকে গ্রেফতার করে জাহাজে ভারতে আনার সময় সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পালাতে চেয়েছেন। সাভারকারের নামের আগে তখন 'বীর' শব্দটা বসত না।
সত্যি তো সেই সাভারকার সুভাষ, ভগৎ সিংদের অনুপ্রেরণা ছিলেন। সুভাষচন্দ্র তখনও জানতেন না সাভারকারের ভাবনা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। তিনি হলেন হিন্দু মহাসভার সভাপতি। আর কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময় সুভাষচন্দ্র হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগের সদস্যদের কংগ্রেসে থাকা নিষিদ্ধ করলেন। শ্যামাপ্রসাদের মিটিং ভেস্তে দিয়েছিল সুভাষের বাহিনী। বিরোধিতা ছিল আদর্শগত। সেই সুভাষকে তাঁর আদর্শ বলছেন নরেন্দ্র মোদী, যাঁর জমানায় ভারত লাভ জিহাদ, গোরক্ষার নামে মানুষ খুন, এনকাউন্টারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে।
দিল্লির 'রাজপথ'-এর নাম বদলে দেওয়া, ইন্ডিয়া গেট থেকে 'অমর জওয়ান জ্যোতি' সরিয়ে সেখানে নেতাজির মূর্তি বসানো, সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে দিল্লির প্রশাসনিক কেন্দ্রের ভোলবদলে দেওয়া, এসব অত্যন্ত প্রতীকি। নেহরুর ভারতের ধারণাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে জন্ম নিচ্ছে মোদীর ভারতের ধারণা। স্পর্ধিত উচ্চারণ। এটা একটা ভাবাদর্শ। এর বিরুদ্ধের লড়াইটাও ভাবাদর্শগত। আমাদের রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে সেই ভাবাদর্শগত লড়াই করা সম্ভব নয়। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভোটের লড়াই করেছে সাধ্যমত। সেজন্য রাম নবমীর পাল্টা রামনবমী করেছে। তাতে বিজেপির লাভ হচ্ছে বুঝতে পেরে সরে এসেছে। বিজেপি বাংলা বিরোধী, বাঙালি বিরোধী বলে হাওয়া তুলে ভোটে জিতেছে। কিন্তু আর সেটা সম্ভব নয়। 
কেরলে সিপিএমের উদ্যোগে জন্মাষ্টমী

সিপিএমওয়ালারা তৃণমূলকে খিস্তি করতে গিয়ে খুব বাইনারি, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা  ইত্যাদি শব্দ বলে যান। কেরলে সেই সিপিএম কখনও জন্মাষ্টমী, কখনও জন্মাষ্টমী সপ্তাহ, রামায়ণ মাস পালন করে। বাচ্চারা কৃষ্ণের সাজে, পেছনে মার্কস, চে গেভারা, হরকিষেন সিং সুরজিতের ছবি। আর পশ্চিমবঙ্গে মহম্মদ সেলিমরা শোনান আরএসএসের দুটো পার্টি বিজেপি আর তৃণমূল, এই ভয়ঙ্কর তত্ত্ব। নিজস্ব স্বার্থে কিছু বোঝাপড়া আর এক আদর্শগত অবস্থান নিয়ে চলা, দুটোর ভেতর ফারাক আছে। জানেন নিশ্চয়ই, জরুরি অবস্থার সময় গোপনে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন জ্যোতি বসু। তার অর্থ আদর্শগত ভাবে এক উৎস থেকে চলেছে কংগ্রেস আর সিপিএম? আমাদের রাজ্যে মানুষের জন্য রাজনীতির পক্ষে থাকা মানুষদের অনেকেই সিপিএমের সঙ্গে আছে। তাই তাদের কিছু নেতার শয়তানি রাজনীতি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে হল।
সংঘ পরিবারের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও চালাকির জায়গা নেই, কোনও শর্টকাট রাস্তা নেই, ভোটসর্বস্ব রাজনীতিতে সেই রাস্তার খোঁজ নেই। মানতে হবে সেই গোড়ার শর্ত,
একবার মাটির দিকে তাকাও। একবার মানুষের দিকে।
যদি তুমি ফসল ফলাতে না জানো, যদি তুমি বৃষ্টি আনার মন্ত্র ভুলে যাও, 
তোমার স্বদেশ তাহলে মরুভূমি। যে মানুষ গান গাইতে জানে না যখন প্রলয় আসে, 
সে বোবা ও অন্ধ হয়ে যায়। 
তুমি মাটির দিকে তাকাও, সে প্রতীক্ষা করছে, 
তুমি মানুষের হাত ধরো, সে কিছু বলতে চায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
Keya Ghosh বলেছেন…
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা কোট করেছেন বলে ধন্যবাদ। কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনে কলকাতার বাবু বিপ্লবীরা মেট্রো চ্যানেলে হাতে রুমাল নিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন দেখেছি। শুধু বাঙালি নয় ভারতবর্ষের মানুষকে অনেক মূল্য দিতে হবে একটা প্রো - পিপল গভর্ণমেন্ট পাওয়ার জন্য। তবে DYFI যে ছেলে মেয়েগুলো রাস্তায় মার খায় তাদের মাথায় সরকারের ছাতা নেই। সরকারী ছাতার তলায় বিপ্লবী বাণী বিতরন আর শাসকের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা এক কথা নয়। আনিস খানকে খুন করা হয়েছে।
SUJOY বলেছেন…
সব পড়ি, লাভ কি ? আমাদের বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন তাঁরা দুজনেই জিতেছেন । দুজন ই বর্তমানে মন্ত্রী । আর বাকি রইল বাম । আগে ঠিক করুক প্রতিপক্ষ কে । Domestic politics আমি East Bengal এর আর National Politics এ আমি British দের হারানো মোহন বাগান , এই ধরনের খেলা আমি বুঝিনা । আমি দেশের জন্য ফ্ল্যাগ ধরবো স্টেডিয়ামে, কিন্তু মোহন বাগান কে যেখানেই পাবো East Bengal সেখানেই হারাবে সেটাই স্বাভাবিক ভাবে আনন্দের কারণ । আমি জানি AKT কে সঙ্গে নিয়ে মোহন বাগান জিতলে AFC Cup এ জিতলে বাংলার নাম হবে, কিন্তু তাতে East Bengal এর ঘরে লুকিয়ে চোখের জল ফেলতেই হবে । বুঝলাম না , এই ধরনের প্রশ্ন এলে আমি সেটার কোনো উত্তর দেবনা ।

Top Post Ad