link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

নরেন্দ্র মোদীর প্লাস্টিক সার্জারি Independent-India-under-Modi-raj

১৯৮৪ সালের ২ এপ্রিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সুয়াজ টি-১১-এর অংশ হিসেবে মহাকাশে যান প্রথম ভারতীয় রাকেশ শর্মা। 
মহাকাশে রাকেশ শর্মা
সেসময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
-ভারতকে মহাকাশ থেকে কেমন লাগছে?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মহাকাশ থেকে কথা রাকেশের
-সারে জাঁহা সে আচ্ছা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নে মহাকাশ থেকে এসেছিল রাকেশ শর্মার জবাব।
মহাকাশে ৭ দিন ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট কাটিয়ে ফিরেছিলেন রাকেশ।
'সারে জাঁহা সে আচ্ছা' লিখেছিলেন ইকবাল। একজন মুসলিম।

৩৮ বছর পর।
হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠায় বাবরি মসজিদ ভেঙে তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী, একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
হিন্দু রাষ্ট্রের সংবিধানের খসড়া
৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের দিন পাঁচেক আগে জানা গেল, তৈরি হচ্ছে 'হিন্দু রাষ্ট্র' ভারতের ‘সংবিধান’। দিল্লি নয়, রাজধানী হবে বারাণসী (সেখানকার বর্তমান সাংসদ নরেন্দ্র মোদী)। সেখানে থাকবে শুধু ধর্ম সংসদ। সে দেশে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের ভোটাধিকার থাকবে না। সব চলবে বর্ণাশ্রম প্রথায়। ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের ভিত্তিতে বিচার চলবে। শিক্ষা হবে গুরুকুল প্রথায়। প্রত্যেক নাগরিকের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ।
সরকারের তরফে কোনও বিবৃতি নেই। কোনও আপত্তি নেই। থাকার কথাও নয়।
বিতর্কিত হরিদ্বার ধর্ম সংসদ
গত বছরের ডিসেম্বরে হরিদ্বারের ধর্মসংসদে চলেছে ঘৃণা ভাষণের ফুলঝুড়ি। 
এক সময় অঙ্কের অধ্যাপিক পূজা শকুন পাণ্ডে (ওরফে সাধ্বী অন্নপূর্ণা ওরফে লেডি গডসে) এখন সারা ভারত হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদিকা। তার কথা, 'ওদের মুছে ফেলতে ওদের খুন করে জেলে যেতে তৈরি থাকুন। আমরা ১০০ জনও একজোট হয়ে ওদের ২০ লাখকে খুন করতে পারলেই আমরা জয়ী। তারপর জেলে যেতেও তৈরি।'
প্রবোধানন্দের ফেসবুক কভার 
হিন্দু রক্ষা সেনার আহ্বায়ক প্রবধানন্দ গিরি বলে, 'মায়ানমারের মতো আমাদের সেনা, আমাদের পুলিশ, আমাদের রাজনীতিবিদ এবং প্রত্যেক হিন্দুর উচিত হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে সাফাই অভিযান (মুসলিম গণহত্যা) চালানো। আর কোনও রাস্তা নেই।'
'২০১৭ সালে যখন সারা দুনিয়ায় কেউ হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার কেউ ছিল না, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তখনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, হিন্দুত্বের জন্য যুদ্ধ লড়তে তিনি সরকারে যোগ দেবেন।'
সেই ধর্ম সংসদ সম্পর্কে প্রশ্ন করায় সাক্ষাৎকার দিতে দিতে উঠে যান উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। তাঁর কথা ছিল, 'ধর্মীয় গুরুরা তাঁদের মতামত জানাতেই পারেন।'
পূজা পাণ্ডের কীর্তিকলাপ
'২০২০ সালে পূজা নাথুরাম গডসের জন্মদিন পালন করে। ২০১৯ সালে বিডি সাভারকারের জন্মদিন পালনে পূজা ও তার সঙ্গীরা ছোট ছোট মেয়েদের হাতে ছোট ছোট ছুরি তুলে দেয়। আর জানুয়ারিতে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুদিন উদযাপন করেন তাঁর ছবিতে খেলনা বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে। পূজার সোজা কথা, 'গডসে গান্ধীকে খুন না করলে আমি করতাম।'
লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীজী-নেতাজি-নেহরু-আম্বেদকরের সঙ্গে উচ্চারণ করেন বিডি সাভারকারের নাম। ইতিহাস বদলে দেওয়ার সচেতন চেষ্টা। গান্ধীজী ও তাঁর খুনের ছক কষা লোক, দুজনই শ্রদ্ধেয়? সাভারকারের হিন্দু মহাসভা, নরেন্দ্র মোদীদের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত তো ছিলই না, বরং ছিল ইংরেজদের পাশে।পূজার কাজ ও কথা দেখুন। কেন একসঙ্গে গান্ধী আর সাভারকারের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী ধাপ্পা দিচ্ছেন সেটা স্পষ্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি
প্রধানমন্ত্রী বলছেন আম্বেদকরের নাম। প্রধানমন্ত্রী এক আদিবাসীকে রাষ্ট্রপতি করেছেন বলে জয়ধ্বনি উঠছে। এই প্রধানমন্ত্রীর জমানায় মুসলিম, দলিত, আদিবাসীদের উপর আক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, শুধু ২০২০ সালেই দেশে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ৮২৭২টি অপরাধ হয়েছে। রেকর্ডে নেই, সে সংখ্যাটা আরও অনেক গুণ বেশি।
শিক্ষকের জলের গ্লাস ছুঁয়ে ফেলায় ৯ বছরের দলিত শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল রাজস্থানে। ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসের দুদিন আগে সেই বাচ্চাটি মারা যায়।
আর দেশপ্রেমের বান ডাকাতে প্রধানমন্ত্রী হর ঘর তেরঙা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি তেরঙা করাচ্ছেন।
নির্লজ্জ ভণ্ডামি চলছে।
স্বাধীনতা মানে তো হাজার হাজার, লম্বা লম্বা পতাকা ওড়ানো নয়। ৮০-৮৫-৯০-৯৫-১০০ ডেসিবেলে বাজানো গান নয়, স্বাধীনতা একটি অনুভূতি।
দেশ মানে তো স্রেফ একটা জমির টুকরো নয়। দেশ মানে একটা ধারণা। দেশ মানে তো দেশের মানুষ। অক্সফামের ‘ইনইকুয়ালিটি ভাইরাস’ রিপোর্ট বলছে, শুধু লকডাউনের সময় দেশের ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে ৩৫%, টাকার অঙ্কে প্রায় ১৩ লক্ষ কোটি টাকা। আর লকডাউনের জেরে বেকার হয়েছেন ১২.২ কোটি মানুষ।
লকডাউনের সময় শুধু মুকেশ আম্বানির যা সম্পদ বেড়েছে তা দিয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত ৪০ কোটি মানুষকে অন্তত ৫ মাস দারিদ্রহীন জীবন উপহার দেওয়া সম্ভব।
২০২১ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে  ১১৬ দেশের মধ্যে ভারত ১০১ নম্বরে। ২০২০ সালে ১০৭ দেশের মধ্যে ভারত ছিল ৯৪ নম্বরে। ২০০০ সালে ভারতের খিদের সূচক পয়েন্ট ছিল ৩৮.৮। ২০১২-২১ সালের মধ্যে তা কমে ২৭.৫-২৮.৮ পয়েন্টের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
যাঁর হাত ধরে দেশ ক্রমশ নিচের দিকে নামছে, পেছন দিকে এগোচ্ছে, তিনি স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় বললেন, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশ হতে হবে।'
ভদ্রলোক ভাষণ খুব ভাল দেন। ভদ্রলোককে ঘিরে রাখে আধুনিক, পরিকল্পিত প্রচারের নেটওয়ার্ক। 
৭৫ বছরের স্বাধীনতা। কত কিছু অর্জন করেছি আমরা! কত কিছু করতে পারতাম কিন্তু এখনও অধরা! আর এখন তো এক গ্লানিময় সময়। পেছন দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে বরাবর বিশ্বাসঘাতকতা করা শক্তির হাতেই এখন দেশ। তারাই উচ্চস্বরে বাজাচ্ছে দেশপ্রেমের বাজনা। নানা ভাবে বদলে দেওয়া হচ্ছে আমাদের ইতিহাস। পাল্টে দেওয়া হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য।
ওঁরা ঘনঘন বলেন, সনাতন ভারত, প্রাচীন ভারতের কথা। 
গর্বের উত্তরাধিকার
প্রাচীন ভারত? মানে আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, চড়ক, সুশ্রুত, ভাস্করাচার্য, বরাহমিহির, পতঞ্জলি, কনাদ, নাগার্জুন, মহাবীরাচার্য? বিজ্ঞানে দুনিয়ার অন্যতম সেরা দেশের সেরা প্রতিভা।

সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বিকার চিত্তে বলে দেন, প্রাচীন ভারতের নিশ্চয়ই কোনও প্লাস্টিক সার্জন ছিলেন যিনি মানুষের ধরে হাতির মাথা বসিয়ে গণেশ তৈরি করেছিলেন।
সে দেশের শিক্ষামন্ত্রী অনায়াসে বলে দেন, জ্যোতিষ শাস্ত্র সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান। তার চর্চা বাড়াতে হবে। ১ লক্ষ বছর আগে হিন্দু সাধুরা পরমাণু শক্তির পরীক্ষা করেছিলেন।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলে দেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদ মিথ্যা। মানুষ চিরকালই মানুষ। আমাদের কোনও পূর্বপুরুষ তো বাঁদরের কথা বলেননি।
বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী দিব্যি বলে দেন, স্টিফেন হকিং জানিয়েছেন আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের মতই তত্বের কথা আছে বেদে। 
এক মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল বলেই সঞ্জয় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে।
এক সাংসদ বলছেন, গরুর দুধ গোবর আর গোমূত্রের মিশ্রণ তাঁর স্তন ক্যান্সার সারিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলে দেন, মহাভারতের যুগে স্টেম সেল ও টেস্ট টিউব প্রযুক্তি ছিল। তাই এক মায়ের থেকে ১০০ কৌরবের জন্ম হয়েছিল।
ওই উপাচার্যই বলেন, বিষ্ণু চক্র আসলে নিয়ন্ত্রিত মিসাইল। রাবণের হাতে ২৪ রকম বিমান ছিল, একাধিক বিমানবন্দরও ছিল।
বিজ্ঞান কংগ্রেস পেশ করা রিসার্চ পেপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, ডায়নোসর আবিষ্কার করেছেন ব্রহ্মা। 
কাদের হাতে দেশের স্টিয়ারিং!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ
SUJOY বলেছেন…
বাহ, পশ্চিমবঙ্গ এর তাহলে কি হবে ?!!! বিজেপি যদি এই কাজ করে তাহলে বাংলা ১০০ তম বছরের আগেই পৃথিবীতে একটা নতুন দেশ তৈরি হবে । চিল্লায় কন ঠিক কিনা ?
নামহীন বলেছেন…
সনাতন ধর্মের ধ্বজাধারী দের রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়তে এবং অনুসরণ করতে বাধ্য করা হোক। একই সঙ্গে রুশদি কে কোপানোর বিরুদ্ধে মুসলিম দের একজোট করা হোক। দুটোই অবিশ্বাস্য কিন্তু অসম্ভব নয়।
sujoy...কথার অর্থ কিছুই বোধগম্য হল না
SUJOY বলেছেন…
বিজেপি যদি দেশে এই ধরনের আইন আনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌলবাদী রা কি বসে বসে দেখে যাবে ,? নুপুর শর্মা র একটা কমেন্ট এ বাংলা প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে । বাংলা থেকে বাংলাদেশ, হুঙ্কার এর পর হুঙ্কার । এরপর ও কি মনে হয় India তে সামনের 25 বছর পর বাংলা আর রাজ্য থাকবে ? আলাদা রাষ্ট্রের দাবী উঠবে না ? বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ যদি ভাষা আন্দোলন হয় , ধর্ম বাংলায় হবে না কেনো ? কাশ্মীর এ পন্ডিত দের হত্যা করা শুরু হয়েছে । কেরালার বাম MLA কাশ্মীর সম্পর্কে কি মন্তব্য করেছেন, নুপুর শর্মা কে খুন করার জন্য Plot তৈরি করা হয়েছে, ধরাও পরে গেছে NIA এর কাছে , AIMIM নেতাদের মুখে যেইসব কথা শোনা যাচ্ছে, PFI এর জোর যেভাবে বাড়ছে, কাশ্মীর ফাইল দেখানোর সময় হল এ অশান্তি হয়েছে , Secularism কোথায় দেশে ? দেশ ভাগ হবেনা এরকম আশঙ্কা কি থেকে যায়না ?

Top Post Ad