_____________________________
সেনাবাহিনীর ডাক্তার ছিলেন। অবসরের পর মেজর ইন্দ্রনীল চৌধুরী অক্লান্ত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে। সঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসের সাম্মানিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছের। আমার সঙ্গে পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে। লেখালেখির শখ বহু বছরের। তাঁর কিছু লেখা পরপর পাবেন 'যাচ্ছেতাই'-এ। মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত।
_________________________________
-ডাক্তারসাব, দুর্যোধন কি জ্ঞানী?
সেই ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতেও ঘামের অনুভব হল ঘাড়ে।
-অবশ্যই।
সব সিনেমার ভিলেনদের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা বরাবর। আর পট্টনায়েকের বই পড়ে তো মহাভারতের নায়কদের ভিলেন বলে মনে হত। দুর্যোধন সৎ। নিজেকে চিনতেন। কৃষ্ণকে বলেছিলেন, বেশি জ্ঞান দিও না। আমি জানি কোনটা ধর্ম। আমি জানি কোনটা অধর্ম। আমি জানি আমি ধর্মের সঙ্গে নেই। তবুও কেন জানি না সরে আসতে পারি না। ইন্দ্রীয় আমার আয়ত্বে নেই। শ্রবন, মনন, রসনা, স্পর্শ সবেতেই আমার চলন। আমি কিছু আটকাতে পারিনি। সূচাগ্ৰ মেদিনী নাহি দিব। সব চাই। চেঁছে মুছে খেয়ে যাব।
চলেও গেলেন ভীমের গদায়। বীর তো বটে রণাঙ্গনে! জানামি ধর্মং, নাচেমে প্রবৃত্তি, জানামি অধর্মং, নাচেমে নিবৃত্তি।
স্বরূপ আর স্বভাব তো এক নয়। স্বরূপ তো আত্ম। কিন্তু চরিত্রে মনের ছোওয়া থাকে। মন হাতছানি দেয় ভালো খারাপের, কাম, লোভের। আমার চাই, এ কামের ভূমিকা জোরদার। তার থেকে সন্তুষ্টি। লোভ। আনন্দ। আরও চাই। না পেলে রাগ। খিদে বাড়তে থাকে। কামায়েশা, ক্রোধোয়েশা, রজগুণো সমদ্ভব।। দূর্যোধন তো রজগুনের উদাহরণ। চাই চাই থেকে অশান্তির সৃষ্টি। শান্তির আবহাওয়াতে তাই অশান্তির তাণ্ডব।
সেই কম্বোডিয়ার যোগীর কথা মনে করিয়ে দেয়। জার্মানিতে যখন বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে গ্রিনপিস আন্দোলন চলছে। কাতারে কাতারে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। উত্তাল জার্মানি। এই কম্বোডিয়ার যোগী সেই দেখে অবাক। এরা শান্তির কথা বলে নিজেরাই এত অশান্ত?
দুর্যোধন কি তবে সম্মোহিত হয়েছিলেন? আর সেটা নিজে বুঝেছিলেন? ক্রোধত্ভবতি সম্মোহন। তার থেকে স্মৃতিবিভ্রম, বুদ্ধিনাশ, স্মৃতি ভ্রংশ। দুর্যোধনের দফারফা। রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেননি। শরীর হাতির শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে তখনই যখন মাহুত ঠিক থাকে। হাতির চোখ তো কলাবাগান খুঁজবে, যদি না মাহুত খোঁচা দেয়। চোখ তাই দেখে যা শরীর দেখতে চায়। কান তাই শোনে যা মন শুনতে চায়। উত্তেজক, মশলাদার, পরনিন্দা, পরচর্চা।
এক অফিসার বলে উঠলেন,
-ডকটরসাব কা সার্ভিস ফাইল মে তো হ্যায় কি আপ মিশনারি স্কুল সে পঢ়াই কিয়া। শাস্ত্র কাহা সে শিখা?
তা বটে। স্কুলে বাইবেল হিস্ট্রি পরে পরীক্ষা দিয়েছি। বললাম,
-ঘরমে দাদু কে সাথ খানাকে টাইম গপসপ হোতা। উসি সে থোরাবহুত...
অংক শেখার যেমন মন থাকে, ইচ্ছে থাকে, গীতা , উপনিষদ পড়ার জন্যও ইচ্ছে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় বোধ হয় না। তাই তা তোলা থাকে অবসরের দু বছর আগে থেকে। আর থাকে জাত্যাভিমান থাকলে। বাঙালি জন্মে, ভারতীয় জন্মে এক ভীষণ উত্তেজনা। অহংকার। বাঙালিয়ানা তুলে ধরার সব চেষ্টা। বাংলাকে ভালবাসি বলার স্পর্ধা।
সিগমন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, মানবতার অপমান হয়েছে তিনবার। প্রথম, যখন কোপারনিকাস বলেছেন সূর্য মহাকাশের প্রাণেশ্বর, মানবজাতি নয়। দ্বিতীয়, ডারউইন সাহেব যখন বলেছেন আমরা ভগবান থেকে নয়, বাঁদর থেকে এসেছি। তৃতীয়, যখন বলা হয় মানুষ বুদ্ধিদীপ্ত জন্তু।
সব ছাড়িয়ে যায় যখন ফ্রয়েড ইগো, সুপার ইগো আর ইড্ এর তত্ত্ব খাড়া করেন।
রণ ফিরে এসেছে। তাই আসর ছেড়ে উঠে এলাম।