![]() |
| নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যশবন্ত সিনহা |
ঠিক করছেন মোদী। কেন তিনি ক্ষমা চাইবেন? মোদীকে কোণঠাসা করতে ১২ বছরের পুরোনো একটা বিষয়কে টেনে আনা হচ্ছে। দেশের লোক ঘটনাটা পুরো ভুলে গেছেন। কোনও গুরুত্বই নেই আর। ২০০২ সালে গুজরাটে কী হয়েছিল তা নিয়ে কারও এতটুকু মাথাব্যথা নেই। ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার মতো ওটাও লোক ভুলে গেছে।
বক্তা?
যশবন্ত সিনহাকে প্রার্থী ঘোষণা করতে গিয়ে বিরোধী নেতারা বিবৃতিতে লিখেছেন, ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক চরিত্র তুলে ধরতে, সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষায় তিনি সক্ষম হবেন।
কথাটা বলছিলেন আমার এক সহকর্মী,
রাষ্ট্রপতি ভোট প্রার্থী ঠিক করতে হবে বলে মিটিং ডেকে দিলেন মমতা ব্যানার্জি। কেন কারও সঙ্গে কথা না বলেই ডাকলেন, এসব বলে হাওয়া গরমের চেষ্টা করেছিল সিপিএম। সঙ্গে কেউ নেই দেখে চেপে যায়। মিটিংয়ে তাদের প্রতিনিধি থাকবেন জানিয়ে মমতাকে চিঠি দেন সীতারাম ইয়েচুরি। তাও নাকি আবার কেরলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছিলেন কিন্তু বাংলার নেতারা ছিলেন অন্ধকারে।
বিধানসভা ভোটের পর্যালোচনার পর সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছিল, বিজেপি আর তৃণমূলকে এক করে 'বিজেমূল' বলা ভুল হয়েছিল।
মানে আদর্শগত রাজনীতির ভণ্ডামির মুখোশটা খুলে গেল। বিরোধী নেতাদের কাছে রাজনীতি মানে পুরোটাই স্রেফ অঙ্ক।
যদ্দূর মনে পড়ে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়ার (একই সঙ্গে পলিটব্যুরোর সদস্যপদও ছেড়েছিলেন) প্রথম কারণ হিসেবে জরুরি অবস্থার সময় জনসংঘ ও আরএসএস-সঙ্গের কথাটাই তুলেছিলেন পি সুন্দররাইয়া। বিরোধটা ছিল গোড়ার আদর্শগত।
বিজেপি আদর্শগত রাজনীতি করে, রাজনৈতিক হিন্দুত্বের আদর্শ। বরাবর সেই রাস্তায় অবিচল। কৌশল তৈরি করেছে, জোট তৈরি করেছে, সেই আদর্শগত বোঝাপড়াকে প্রাধান্য দিয়েই। রামনাথ কোবিন্দের পর দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করার ভাবনা সেই আদর্শগত বোঝাপড়ার জায়গা থেকেই। মোদীর বিশ্বস্ত কিনা, সেটা গৌণ বিষয়।
যশবন্ত সিনহা।
(১৬ মে, ২০১৪ ভোট গণনার দিন Headlines Today-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।)
২০১৪ সালে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রথম কে তুলেছিলেন?
যশবন্ত সিনহা।
তিনিই এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোদী-বিরোধীদের প্রার্থী।
'রক্ষক' যশবন্ত
![]() |
| রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষণা করছেন বিরোধী নেতারা |
আইএএস চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। তারপর থেকে দেখা যাবে, যেখানে 'মধু' সেখানেই যশবন্ত।
প্রায় ২৫ বছর বিজেপিতে ছিলেন। আরএসএসের সদস্য না হলেও সংঘের খুব কাছাকাছি থেকেছেন বরাবর। নিয়মিত 'গুরুদক্ষিণা' (আরএসএস-এক তহবিল তৈরিতে দান) দিয়ে গেছেন সংঘকে।
লালকৃষ্ণ আদবানি ছিলেন তাঁর মেন্টর। জিন্না বিতর্কে সেই আদবানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন যশবন্ত।
গুজরাট গণহত্যার সময় কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। মনোভাব তো শুরুতেই বলেছি। বিজেপি ছেড়ে আসার কারণটাও আদর্শগত নয়, মোদী-শাহ জমানায় কোণঠাসা হয়ে দল ছাড়েন।
সেই যশবন্ত বিরোধী প্রার্থী!
'ন্যাংটো' বিরোধী
![]() |
| বিরোধী জোটের দুই রূপকার |
বিজেপির বিপদ আদর্শগত, কংগ্রেস আর বাম নেতারা বারবার বলেন শুনি। সেই 'আদর্শগত লড়াই' চালাতে যশবন্ত প্রার্থী!
রাষ্ট্রপতি ভোটটা বিজেপি বিরোধী রাজনীতির আদর্শহীন চেহারাটা বেআব্রু করে দিল।
কাদের নাম এলো? শরদ পাওয়ার, ফারুক আবদুল্লাহ (যাঁদের 'সততা' নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল।) তারপর গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। মহাত্মা গান্ধীর নাতি, এটা ছাড়া আর কী পরিচয় আছে? দেশজুড়ে অস্থিরতার মধ্যে তাঁর কোনও কথা, কোনও কাজ চোখে পড়েছে? ওই তিনজনই না বললেন কেন? ভোটে হার নিশ্চিত বলে? তারপর? যশবন্ত সিনহা! ধান্দাবাজির রাজনীতির উৎকট নিদর্শন।
কোনও একটা নাম ঠিক করলেই হল! সবাই মিলে তাঁর হয়ে ঢাক বাজিয়ে বলা, দেখ আমরা কেমন একজোট!
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই দেখালো বিরোধী শিবির রাজনৈতিক ভাবে কতটা দেউলিয়া, কতটা আদর্শহীন রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাদের কাছে আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আদর্শগত ভাবে বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য কোনও মুখ নেই!
'ন্যাকা' বাম
![]() |
| লোকসভা ভোটের আগে বাম দলগুলোর সমাবেশে |
আর যায় কোথায়? মহম্মদ সেলিমরা তো ক্ষেপে লাল। এটা কি হচ্ছে? আমাদের তো এখানে রাজনীতি করতে হবে।
![]() |
| বিধানসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে সংযুক্ত মোর্চার সমাবেশ |
ধুর অতো আদর্শের কথা বললে হয়, তা-ও আবার সেলিমের সিপিএমে। এন্টালির এমএলএ থাকার সময় তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ তুলে রাজ্য আর জেলা কমিটিকে চিঠি দিয়েছিল সিপিএমেরই একটি জোনাল কমিটি। রায়গঞ্জে সরাসরি ইমামদের নামিয়ে ভোট করানোর অভিযোগও আছে।
কেস আরও ঘেঁটে গেল বুধবার। শরদ পওয়ার মিটিং ডেকেছেন, মমতাও নেই। ভাল ব্যাপার। কিন্তু পওয়ার, ফারুক, গোপালকৃষ্ণ দাঁড়াতে নারাজ হতেই উঠল যশোবন্তের নাম। তৃণমূলের নেতা প্রার্থী হলে মানসম্মান থাকে! সিপিআইয়ের ডি রাজা গেলেন পওয়ারের বাড়ি। সমস্যাটা বলতেই সলিউশন। টুইট করলেন যশবন্ত। তৃণমূল ছেড়ে দিলেন। ব্যস। আর কী! এখন তো আর তৃণমূল নেতা নন। 'নিরপেক্ষ প্রার্থী'। কোনও অসুবিধা নেই।
হাস্যকর।
সিপিএম, লিবারেশন সহ বাম দলগুলো না পারছে গিলতে, না পারছে ওগড়াতে। যশবন্ত বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল। মহম্মদ সেলিমের ব্যাখ্যা মানলে বলতে হয়, নাগপুরের পরামর্শেই মমতার পদক্ষেপ। বাবুল সুপ্রিয়র বিরোধিতা করা লিবারেশনই বা কী বলে!
![]() |
| সীতারাম ইয়েচুরি |
চান্স নেই, তবু তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, যশবন্ত জিতে গেলেন। মানে সেই তো বিজেপির বোঝাপড়াই জিতল। তাই না? বেঙ্কাইয়া নাইডু উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দেশের শীর্ষ চার পদেই (রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার) আরএসএসের লোক, স্বাধীন ভারতে প্রথমবার। যশবন্ত জিতলে তাঁর মেন্টররা বলতে পারেন, রাষ্ট্রপতি তো আর আরএসএসের কেউ থাকল না! বলে একে অন্যের পিঠ বিস্তর চুলকোতে চুলকোতে দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারেন। কিন্তু ন্যাঙটো গায়ে কি আর কাপড় উঠবে?
আরএসএস-বিজেপির সঙ্গে লড়াইটা প্রতি ইঞ্চিতে আদর্শগত। কে লড়বে সেই লড়াই? তাই মমতা ব্যানার্জি ক্ষির খেয়ে যাওয়ার সুযোগটা পেয়ে যান বারবার।
![]() |
| পি সুন্দরাইয়া ও তাঁর পদত্যাগপত্র |
যশবন্ত সিনহা বিজেমূল কিনা, সেটা ভোট অঙ্কের কৌশলগত প্রশ্ন। তার চেয়েও জরুরি অতি দক্ষিণপন্থা বিরোধিতার আদর্শগত রাজনীতির প্রশ্নটা। বাস্তবতার কৌশল বলে এড়িয়ে যাওয়া জাস্ট আত্মহত্যা। এই অপরাধ অতীতে বহুবার হয়েছে। কোনও একটা জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো দরকার।
![]() |
| নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্রৌপদী মুর্মু |
বিরোধীরা আদর্শ ছেড়ে ভোটের অঙ্কেই মন দিয়েছে। তাতে লাভ সংঘ রাজনীতিরই।
![]() |
| রাম মন্দিরের ভূমি পুজো |









