link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

'বাম'-শূন্য বাংলা? কিছু এলোমেলো ভাবনা / ১ left-movement-in-bengal-1

গত বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে কোনও 'বাম' দল একটি আসনও পায়নি। স্বাধীনতার পরে প্রথমবার। সমাজবিজ্ঞান বলে, যে কোনও সুস্থ সমাজে বামপন্থার উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। তার উপর পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই বামপন্থার শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সেখানে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে মারাত্মক চিন্তার, শুধু বামপন্থীদের কাছে নয়, যে কোনও সুস্থ মানুষের কাছেই। সে কারণ খোঁজার চেষ্টাই করেছি এই লেখায়। পর্ব ১

শিল্পী: সোমনাথ হোড়

শুরুতেই একটা কথা বলে নেওয়া ভাল, খুব বেশি বইপত্র আমার পড়া নেই। ফলে জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। খালি চোখে দেখে যেটুকু বুঝেছি, সেটাই বলার চেষ্টা করছি মাত্র। চেষ্টা করেছি, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে পাশে রেখে যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে আমার কথা বলার। নিজের ভাবনা প্রকাশে দু-একজন বিখ্যাতের মন্তব্য রাখলাম। আমার কথা না মানলেও তাঁদের কথা মানতে পারেন, এই আশায়! 

আরও একটা কথা। কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে আঘাত করার কোনও মতলব আমার নেই। লেখাটা দীর্ঘ হওয়ায় ১৫ পর্বে প্রকাশ করছি। ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটি পড়ে মতামত দিলে খুশি হব। কড়া কড়া সমালোচনা, অবশ্যই গঠনমূলক, পেলে খুব ভাল লাগবে। 

(লেখায় উল্লিখিত বেশ কিছু বিষয়ে আলাদা আলাদা করে বড়সড় গবেষণার দাবি রাখে। অনেক গবেষণা হয়েছে ও হচ্ছে)  

ছবি: উজ্জ্বল রায়

'আমরা ২৩৫, ওরা ৩০' থেকে 'আমরা ০...' হতে সময় লেগেছে মাত্র ১০ বছর। অনেক দলই তো ভোটে হারে কিন্তু এভাবে উবে যায় না। কিন্তু এরাজ্যে সেটাই হয়েছে। 

অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের কথায়, 

'বামপন্থীরা এমন একটা মার খেলেন-স্বাধীনতার পর থেকে কখনও এমন হয়নি যে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী দলের এক জনও এমএলএ নেই-এটা কী করে সম্ভব হল? আমরা এমন একটা জায়গায় থাকি, যেখানে একশো বছর ধরে নানা দিক দিয়ে বাম চিন্তা এসেছে, সেখানে এই পরিণতির পিছনে কতটা ভুল আছে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার খুব বড় কারণ আছে।'

কোন সময় এই বিপর্যয়? অধ্যাপক প্রণব বর্ধনের কথায় স্পষ্ট পরিস্থিতির গভীরতা, সময়ের বিপন্নতা। 

'সমস্ত ভারতবর্ষে যা ঘটছে, এই দক্ষিণপন্থী ও মৌলবাদীদের রমরমা, তাতে একটা প্রতিরোধের দরকার...। সেই জন্যে বাম সংগঠনের পুনরুজ্জীবনের ভীষণ প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে তো বিশেষ করে।'


সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিপন্ন জীবন

কোনও রাজনৈতিক দলের ভাল-খারাপ মূলত নির্ভর করে তার আদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর। কিছু সাংগঠনিক সমস্যার কথা বলে তা আড়াল করা অপরাধ। মতাদর্শ ও রাজনীতির ভুলেই সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও বড়সড় সমস্যা তৈরি হয়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে গোলমেলে নানা অভ্যাস গড়ে ওঠে। সময়ের ধারাকে বিশ্লেষণ করে সময়ে সময়ে আদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থান বদলাতেও হয়। সে সব না করে চুলের রং বদলালেই হবে?  

বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সিপিএম-সহ বামপন্থী বলে পরিচিত সংসদীয় ধারার দলগুলোর নেতারা নিজেদের দিকে তাকানোর বদলে, 'আমাদের সব ঠিক, ভুল করেছে পাবলিক', 'আমাদের কিছু ভুল ছিল, কিন্তু আমরা তৃণমূলের চেয়ে ভাল', 'আমরা সৎ তাই ভোট পাই না'-এরকম মনোভাব নিয়েই চলতে চান এবং চলছেন। ভিন্ন মত শুনলে ভেবে দেখার বদলে রে রে করে তেড়ে যান, এর-ওর-তার 'দালাল' দেগে দেন। (এই সংস্কৃতিটা সরকারে থাকার সময়ও ছিল। এটা কি মার্কসবাদীদের সাধারণ সমস্যা?)
  
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

অধ্যাপক প্রণব বর্ধনের কথায়, 'চিন্তা করার কথা বললেই বামপন্থী নেতারা দুটো জিনিস বলেন। একটা হল, আমাদের কিছু কিছু কৌশলগত অ্যালায়ান্স করতে হবে, দেখতে হবে কার সঙ্গে জোটা যায় ইত্যাদি। আর বলেন, তৃণমূলের সন্ত্রাস। আর হ্যাঁ, মাঝে মাঝেই বলেন, আমাদের কিছু ভুল হয়েছিল। কিন্তু জনসাধারণের কাছে পরিষ্কার নয়, ভুলটা ঠিক কী। জনসমক্ষে বলা উচিত, এই এই ভুল হয়েছিল। এটা বলেও লাভ নেই যে, সেই সব ভুল নিয়ে পার্টির ভেতর আলোচনা হচ্ছে। ও সব ছেঁদো কথা আর কেউ শুনতে চায় না। সব কিছু খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে, বিচার করতে হবে। বামপন্থী নেতাদের ওই 'ভুল হয়েছিল' শুনলে আমার 'সোনার কেল্লা'-র সেই বাচ্চাটার কথা মনে পড়ে, দুষ্টু লোকেরা যাকে ভুল করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের কাহিনি শোনাতে গিয়ে সে বলেছিল, 'মিসটেক, মিসটেক'! মাঝে মাঝে মনে হয়, এঁরাও যেন মাথা নেড়ে বলছেন, 'মিসটেক, মিসটেক'।'

সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড সমাবেশে অধীর চৌধুরী,
আব্বাস সিদ্দিকি, মহম্মদ সেলিম, বিমান বসু।

রাজ্যের 'বাম' নেতাদের ভাবগতিক দেখে 'জলসাঘর' সিনেমার বিশ্বম্ভর রায়ের কথা মনে পড়ে। জমিদারি ডুবে গেছে কিন্তু বিশ্বম্ভরদের জমিদারি গুমর যায়নি। তেমনই পশ্চিমবঙ্গের 'বাম' নেতাদের রাজত্ব গেলেও ঔদ্ধত্য যায়নি। সর্বজ্ঞ ভাবটাও যায়নি।  

সত্যজিৎ রায়ের 'জলসাঘর' ছবিতে
বিশ্বম্ভর রায়ের চরিত্রে ছবি বিশ্বাস

ডিরোজিও-রেনেসাঁ-রবীন্দ্রনাথ-স্বাধীনতা আন্দোলন, নানা ঘটনার প্রভাবে বাংলার মন ক্রমশ বামপন্থী হয়েছে। রম্যলেখক হিসেবে পরিচিত শিবরাম চক্রবর্তীর 'মস্কো থেকে পণ্ডীচেরী' বইটি পড়লে টের পাওয়া যাবে সেই উনিশশো কুড়ির দশকেও বাংলার মন কতটা বামপন্থী ছিল। পরবর্তীতে তেভাগা আন্দোলন-খাদ্য আন্দোলন-জমির আন্দোলন-উদ্বাস্তু আন্দোলন তাকে আরও পোক্ত করেছে। নকশালপন্থী আন্দোলন তো সারা দুনিয়ার নজর টেনেছিল। 

চারু মজুমদার

গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা ও বহুমাত্রিকতার উপর গড়ে ওঠা বাঙালি-বামপন্থার মাঠটা কিন্তু পার্টিতান্ত্রিক বামপন্থার চেয়ে অনেকটাই বড়। কোনও রাজনৈতিক দলের হাত ধরে এই বামপন্থার মাঠ তৈরি হয়নি। বরঞ্চ ওই মাঠ চষে ফসল তুলেছে কিছু রাজনৈতিক দল। 'আমরা, শুধুমাত্র আমরাই সঠিক ও সেরা'-এই দলতান্ত্রিক বামপন্থার চশমা পড়ে বাঙালি-বামপন্থার চরিত্র বোঝা অসম্ভব।  (চলবে) 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
নামহীন বলেছেন…
খোলা খুলি আলোচনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক শোভন লাল দত্তগুপ্ত সাহেব পি ডি এসের ৭তম রাজ্যে সম্মেলনে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন।

Top Post Ad