![]() |
| গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্না |
![]() |
| চিটফান্ড দুর্নীতিতে প্রতারিত |
তারপর?
কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত। উদ্যোগে সিপিএম নেতা (বর্তমানে সাংসদ) বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান।
কারা জড়িত? সবাই জানে।
সিবিআই কেন গুরুত্বপূর্ণ নথি পায়নি? সবাই জানে।
ফলাফল? বিলকুল গোল্লা। কেলেঙ্কারির রহস্যভেদ হয়নি।
কোনও নেতার সাজা হয়েছে? না।
সব প্রতারিত টাকা ফেরত পেয়েছেন? না।
![]() |
| সারদাকাণ্ডে ধৃত সাংসদ কুণাল ঘোষ |
প্রতারিতদের দাবি আদায়ে একটা বড় মঞ্চ তৈরি হয়েছিল কাকা অসীম চ্যাটার্জিকে মাথা করে। সেই আন্দোলনের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি কার দাদাগিরিতে? সিপিএম নেতারা বলবেন?
হঠাৎ এখন জনচিত্তে তুমুল তরঙ্গ দেখে সেই সময়ের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল, কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বাংলার মুকুল রায় আর অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে কীভাবে দলে টেনেছিল বিজেপি।
এখনও রাজনীতির বোরে হয়ে এ কোর্ট ও কোর্ট, এ জেল ও জেলে ঘুরে যাচ্ছেন সুদীপ্ত সেন। রাজনীতির প্রয়োজন মেটাতে নানা কথাও বলে যাচ্ছেন।
পুরো ব্যাপারটাই হয়ে যায় রাজনৈতিক। ভোটের অঙ্কের খেলা। তাই অতবড় কেলেঙ্কারিও রাজ্য রাজনীতিতে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি।
এবারও তাই। খেলাটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক।
![]() |
অর্পিতা মুখার্জির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা টাকার ছবি টুইট করেছিল ইডি।
ইডি অর্পিতার বাড়িতে যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে টুইটে জানিয়ে দেয় উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্ক, ২০ কোটি। ইডি তো অনেক জায়গাতেই অভিযান চালিয়ে টাকা উদ্ধার করে। অভিযান চলার সময় এরকম চটজলদি টুইট করে জানিয়ে দেয়? প্রশ্ন উঠল, অতো দ্রুত ২০ কোটি টাকা গোনা হয়ে গেল? তারপর টাকা গোনার যন্ত্র এলো, টাকা গোনার লোক এলো। ইডি সূত্রে খবর পেয়ে মিডিয়া জানাল, সাতটি টাকা গোনার যন্ত্র আনা হয়েছে। তাতে পুরো টাকা গুনতে রাত কাবার হয়ে গেল। যেটা ইডি-র লোকেরা ঘণ্টা দুয়েকে গুনে ফেলেছিলেন। দেখা গেল, টাকা আছে ২১ কোটির কিছু বেশি। মানে ২০ কোটির কাছাকাছি। কাকতালীয়?
![]() |
| অর্পিতার টালিগঞ্জের বাড়িতে টাকার স্তূপ |
তারপর টাকা নিয়ে যেতে ৪০টি ট্রাঙ্ক নিয়ে এলো রিজার্ভ ব্যাংকের ট্রাক। ইডি-র ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ডাঁই করা আছে ৫০০ আর ২০০০ টাকার নোট। ২০০০ টাকার নোটে ২০ কোটি টাকা মানে মাত্র ১০০০ বান্ডিল। আর, ৫০০ টাকার নোটে হলে ৪০০০ বান্ডিল। আধাআধি ছিল ধরে নিলে, মানে ১০ কোটি ছিল ২০০০ টাকার নোটে আর ১০ কোটি ছিল ৫০০ টাকার নোটে, তাহলে তবে মোট বান্ডিল হয় ২৫০০। ২৫০০ বান্ডিল নোট নিয়ে যেতে ৪০টা ট্রাঙ্ক লাগে?
![]() |
| অর্পিতার বেলঘরিয়ার বাড়িতে উদ্ধার টাকা |
ট্রাঙ্কের উপর কোনওটায় লেখা ছিল ২০০০ টাকা, কোনওটায় ৫০০ টাকা, কোনওটায় ১০০ টাকা এবং ২০ টাকা। চুরির টাকা ২০ টাকার নোটেও!
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চ্যাটার্জির নাম জড়িয়েছে অনেকদিন। ১৮ মে সিবিআই দফতরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তারপরও অর্পিতা তাঁর টালিগঞ্জ, বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে কোটি কোটি টাকা রেখে দিয়েছিলেন? বলতে পারেন, বোকার সাহস বেশি।
ইডি-র ছবিতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষা দফতরের বড় খামের মধ্যেও টাকা ভরা। তার মানে হল, এতো হট্টগোলের পরেও অর্পিতা তাঁর বাড়িতে শুধু টাকাই রাখলেন না, শিক্ষা দফতরের খামও সরালেন না!
পার্থর বাড়ি থেকে ইডি কী কী আটক করেছে? তার মধ্যে আছে, ২০১৬ সালের গ্রুপ ডি নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত বহু নথি, উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তালিকা, প্রাথমিক টেট-এ নিয়োগ সংক্রান্ত নথি, সুপারিশ পত্র ইত্যাদি।
![]() |
| পার্থর অ্যারেস্ট মেমো |
সিবিআই বা ইডি তল্লাশিতে এলে যাতে অসুবিধায় না পরে সে জন্য বোধহয় নাকতলার বাড়িতে সাজিয়ে রেখেছিলেন পার্থবাবু!
দুর্নীতির অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করা আর কোটি কোটি টাকার স্তূপ দেখানো এক ব্যাপার নয়। টাকার ছবি দেখালে, ইডি-র অভিযান লাইভ দেখালে মানুষের মনে অভিঘাতটা বেশি হয়।
এরকম কাণ্ড আগেও হয়েছে। আগেও অনেক তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। তবে এবার ছোট্ট দুটো টুইস্ট আছে। এক, টাকার পাহাড়ের ছবি সামনে আনা হয়েছে। দুই, গ্রেফতারের আগে পার্থ চ্যাটার্জি ফোন করেছিলেন (জানি না, করেছিলেন নাকি করানো হয়েছিল) 'পরমাত্মীয়' মমতা ব্যানার্জিকে। অ্যারেস্ট মেমোয় সেটা লিখে দিয়েছে ইডি। সেই অ্যারেস্ট মেমোও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কী মিষ্টি ব্যাপার, বলুন!
পার্থ পর্ব নিয়ে চলছে নির্বোধ, রগরগে খিল্লি। অর্পিতা, মোনালিসা...পার্থ চ্যাটার্জির বান্ধবী কত, তাতেই যেন বেশি আগ্রহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে মহিলাদের প্রতি সম্মান বোধের অসাধারণ সব নজির তৈরি করছেন নারীর সম্মান রক্ষায় 'অতন্দ্র সেনাদল(!)', সে কাজে নারীরাও বাদ যাচ্ছেন না! অনেক দিন পর বেশ একটা খাদ্য জুটেছে! ছাড়া যায়, বলুন?
![]() |
| সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় |
সুশোভনবাবু ছিলেন কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিবিদ। ১৯৮৪ সালে বোলপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রথম সভাপতি। তাঁর পর জেলা সভাপতি হন সুশোভনবাবুর শিষ্য অনুব্রত মণ্ডল। ২৬ জুলাই চলে গেলেন 'এক টাকার ডাক্তার'।
![]() |
| গৌরাঙ্গ গোস্বামী |
রাজনীতির মানুষ ছিলেন কালনার গৌরাঙ্গ গোস্বামী৷ সেই ১৯৭২ সাল থেকে রোজ দুশোরও বেশি রোগী দেখতেন। ভিজিট ৫ টাকা। কেউ সেটুকুও দিতে না পারলেও কুছ পরোয়া নেই। প্রয়োজনে নিজের পকেটের টাকায় ওষুধও কিনে দিতেন৷ সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গবাবু দীর্ঘদিন কালনার পুরপ্রধান ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১।
সুশোভনবাবু, গৌরাঙ্গবাবুদের মতো মানুষেরাও রাজনীতির লোক ছিলেন। মানে রাজনীতিবিদ মানেই ধান্দাবাজ নন।
এরকম অনেক মানুষ এখনও রাজনীতিতে আছেন, বিশেষত বামবাদী রাজনৈতিক দলগুলোতে।
![]() |
| বঙ্গসম্মান অনুষ্ঠান |
আবার ফেরা যাক পুরোনো কোথায়।
বঙ্গসম্মাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জি কী বললেন? বললেন, এই এতো বড় কাণ্ডের কথা তিনি বিলকুল কিছু জানতেন না! ভাবুন কাণ্ড! কাচা মিথ্যে কথা বলেছেন বললে আবার পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারে। তবে হরহামেশাই সেটা করেন। যিনি জাল ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দীর্ঘদিন চলেছেন, একজন মহিলা হয়ে আরেক জন মহিলাকে দিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন, তাঁর কাছে এটাই প্রত্যাশিত।
লাজলজ্জা ছেড়ে ক্ষমতার পায়ে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া গত এক দশক ধরে রাজ্যের শিল্পী সাহিত্যিকদের বড় অংশ অভ্যাস করে ফেলেছেন। সম্মানও পেলেন তেমনই কয়েকজন। বলতেই পারেন, পুরস্কার তো সরকার দিচ্ছে, তৃণমূল নয়। তাহলে অসুবিধা কি? বেশ সেটা মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু মমতা তো পার্টির ভাষণ দিলেন। কাচা মিথ্যে বললেন। তিনি নাকি কিছু জানতেনই না! তিনি নাকি অর্পিতাকে চিনতেনই না! তারপরও হাততালি পড়ল! তারপরও 'বিশিষ্ট'দের কেউ প্রতিবাদ করলেন? আসলে 'তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়'। লাইনটা যাঁর লেখা, কী আশ্চর্য তিনিও ভিড় করেছিলেন সম্মান নিতে। সে তো গেল, ব্যক্তিদের কথা। কিন্তু ময়দানের তিন ক্লাব? অসংখ্য সমর্থকের আবেগ অস্বীকারের অধিকার কর্তাদের কে দিল?
![]() |
| গান্ধী মূর্তিতে ধর্না |
ঠিক এখানেই লুকিয়ে আছে, একটা প্রশ্নের উত্তর। কেন মমতা ব্যানার্জির মতো মানুষ পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন এবং তিন তিন বার হলেন। তৃণমূলের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত নেতারা দুর্নীতিতে ডুবে। দলনেত্রী জানেন না, তা অসম্ভব। তবু কেন এখনও রাজ্যের অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন মমতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন?
এখানেই আরও একটা প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে, কেন এই রাজ্যে কোনও আন্দোলন রাজনৈতিক দলের ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলতে চায়। কোনও রাজনৈতিক দলের ছোঁয়া লাগলে কেন তা দুর্বল হয়।
রাজনীতিকে এড়িয়ে চলার এই প্রবণতা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। এ হল একনায়কত্বের (আমাদের দেশে যা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার চেহারায় আছে) রাজনীতি বেড়ে ওঠার উর্বর পরিবেশ।
সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতিদিনের লড়াইয়ে যদি কোনও রাজনৈতিক দলের ওপর ভরসা করতে না পারেন, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্যা।
আজ যে দুর্নীতিসর্বস্ব, নীতিহীন রাজনীতির অবাধ দাপট তা কি গত ১১ বছরে তৈরি? দুর্নীতি কোনও ব্যক্তি বা দলের উপর নির্ভর করে নাকি ব্যবস্থার উপর? ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
২০১০ সালে খাদ্য দফতরে ৬১৪ জন গ্রুপ ডি কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। মামলা হয় ২০১২ সালে। ২০১৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, একদিনে ৮০০ জনের ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। শেষমেষ কয়েক মাস আগে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগে ৬১৪ জনকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)।
![]() |
| গান্ধী মূর্তিতে ধর্না |
তার মানে কি বামফ্রন্ট সরকার বা তার আগেও দুর্নীতি এরকম চেহারাতেই ছিল? একদমই না। গাছ তো রাতারাতি ঝাকরা হয়ে যায় না।
আমাদের দেশে দুর্নীতি কোনও রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে না। তার মানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই থাকবে না, তা নয়। কিন্তু দুর্নীতি রোগ, রোগের কারণ নয়। সেটা না বুঝে চোর ধরো চোর ধরো করলে অনেকটা বাসে পকেটমার ধরার পরার পর হাতের সুখ করে নিজেকে সত্ সত্ ভাবার মতো ব্যাপার হয়ে যাবে।
এত এত নেতা কিছু করতে পারছেন না, কিন্তু অচেনা-অজানা সাধারণ চেহারার কয়েকজন কী ভাবে স্ফুলিঙ্গটা তৈরি করলেন? গান্ধী মূর্তির সামনে চলতে থাকা আন্দোলনের কথা বলছি। ৫০০ দিন ধরে ধর্না চলছে। কারণ তা অধিকারের লড়াই। কারণ ওঁরা লড়াইয়ে জান কবুল। তাই ওঁরা মিডিয়ার জন্য লোলুপ নন। হইচই বাঁধিয়ে মিডিয়ার খাদ্য হতেও চাননি। বারবার বিভিন্ন আন্দোলন এই সত্যটা সামনে নিয়ে আসছে। তবু রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভাবনায় অনড়। বাস্তবতার সঙ্গে তাই তাদের দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
![]() |
| গান্ধী মূর্তিতে ধর্না |
আমি তখন এসএফআই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সম্পাদক। সম্পাদকমণ্ডলীর মিটিংয়ে আমরা জেলার শিক্ষাগত উন্নতিতে কিছু দাবি নির্দিষ্ট করলাম। ঠিক করলাম, জেলার ৫ জায়গায় সমাবেশ করব। পার্টি নেতারা বলেছিলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল নয়, সমাবেশ তেমন জমবে না। জেলায় এসএফআই খুব শক্তিশালী ছিল না। আমরাও ভেবেছিলাম সব মিলিয়ে হাজার দশেকের সমাবেশ হলেই যথেষ্ট। প্রথম সমাবেশের আগের দিন ডায়মন্ড হারবারে নন্দর দোকানে বসে আমি আর আমাদের জেলা সভাপতি মিতেন্দু ভুঁইয়া হিসেব করছিলাম। দেখলাম হাজার সাতাশের জমায়েত হবে। হলো প্রায় ৩৭ হাজার। আরও হাজার পাঁচেক ছাত্রছাত্রী গাড়ি না পেয়ে ফিরে যায়। কেন? আমার কৃতিত্বে? একেবারেই নয়। সমাবেশ শুরুর দিন সাতেক আগে থেকে কিছু ফোনাফুনি করা ছাড়া আমার বিশেষ কাজই ছিল না। সফল হয়েছিল কারণ, সবস্তরের কর্মীরা ভোটের কোনও অঙ্ক মাথায় না রেখে জেলার শিক্ষা মানচিত্র বদলে দেওয়ার আন্তরিক আকাঙ্খা নিয়ে নেমেছিলেন। সেটা ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছিল। তাঁরাও দাবিগুলিকে নিজেদের দাবি বলে মনে করেছিলেন। তাই এমনকি বেশ কিছু তৃণমূল নেতা, যাঁরা স্কুলের শিক্ষক, তাঁরাও ছাত্রদের নিয়ে সমাবেশে এসেছিলেন।
![]() |
| গান্ধী মূর্তিতে ধর্না |
রাজনীতি যতক্ষণ পর্যন্ত না সামাজিক-আর্থিক সমীকরণে প্রভাব ফেলে ততক্ষণ কোনও ফল হয় না। সেটা হতে পারে একমাত্র অধিকারের লড়াই ঘিরেই।
২০০৬ সালে প্রবল প্রতাপে ক্ষমতায় এসেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের স্বপ্ন। কিন্তু হাওয়া ঘুরে গেল দুবছরেই। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের অনেকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তাঁদের কথা ছিল, শিল্প হলে তাঁদের এলাকা কী ভাবে বদলে যাবে সেটা তারাই ভালই বোঝেন। কিন্তু তাঁদের জিজ্ঞেস না করে সরকার কেন তাঁদের জমি নেবে? সেই অধিকারের প্রশ্ন। সরকারের একগুঁয়েমিতে জটিলতা বাড়ল। নেতৃত্বহীন সেই আন্দোলনে ঢুকে পড়লেন মমতা। রতন টাটা কারখানা না করার কথা ঘোষণা করতেই বার্তা গেল, বামফ্রন্টের হ্যাঁ-কে না করানো যায়। আসলে সেদিনই বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটল। ন্যানো কারখানার বিনিময়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বের স্বপ্ন সত্যি হল মমতার।
কেন নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদ করছি? সরকার বদলের জন্য নাকি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য? শুধু সরকার বদলের জন্য আন্দোলন হলে তার সুফল ঘরে তুলবে বিজেপি। আর হবু শিক্ষকদের চাকরির অধিকার আদায় করা গেলে তা রাজ্য রাজনীতিতে ইতিবাচক মোড় বদল ঘটাবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর কোনও শর্টকাট রাস্তা নেই।
![]() |
| আমি ও কাকিমা (রমা দাস) |
একজন মানুষের কথা বলি এবার।
রমা দাস। আমি ডাকি কাকিমা। আমাকে ডাকে বড় ছেলে। আমার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক নেই, তবে যেটা আছে সেটা আরও অনেক বেশি কিছু।
বেশ বড়লোক বাড়ির মেয়ে। কিন্তু বিয়ে করতে বাপের বাড়ি ছেড়ে আসতে হয়েছিল। বেশ সুখী পরিবারই ছিল। হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে। কাকু মারা যায়। এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে কাকিমা বাপের বাড়ি ফিরে যায়নি। সংসার চালাতে সেলস পার্সনের কাজ শুরু করে। কত আর আয়? কিন্তু সংসার চালানোর খরচ তো অনেক। মুখে রক্ত তুলে খেটেছে। বাইরে কাজ, ঘরে কাজ। কিন্তু কখনও মাথা নোয়াননি। মুখের হাসি মোছেনি। আমাদের মতো কত অচেনা-অজানা ছেলেমেয়েকে বুকে টেনে নিয়েছে অনায়াসে।
ছোট এক টুকরো ঘর। একটা তক্তপোষ। সেখানেই রান্নাবান্না। কখনও সোনালি পার্ক, কখনও বাঘাযতীন, কখনও পাটুলি উপনগরীতে আস্তানা। তারমধ্যেই একমাত্র মেয়ের মৃত্যু। বুকে জমাট কষ্ট নিয়েও কাকিমা ভেঙে পরেনি। ছেলে আছে যে! ছেলের লেখাপড়া আছে। ছেলের রাজনীতি আছে। ছেলের স্বপ্ন আছে। ছেলের কবিতা আছে। বেড়ার দেওয়ালে লটকে থাকা চে গেভারা আছে।
কাকিমার লড়াই থামেনি। কাকিমার নানা রকম বই পড়ার নেশাও যায়নি। কাকিমা হারেনি। আজকালকার অনেক নেতার মতো কাকিমা তাঁর 'গরীব জীবন' বিক্রি করেনি।
কাকিমার কথা ঠিকঠাক বলতে পারার মতো ভাষা আমার জানা নেই। এখন যাদবপুর সন্তোষপুরে একটা দু-কামরার ফ্ল্যাটে ছেলে, ছেলের বউ আর নাতির সঙ্গে থাকে আমার কাকিমা। সেই তক্তপোষটা এখনও ছাড়েনি। ওটাই প্রমাণ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়।
কাকিমা যেভাবে চোয়ালকষা লড়াই চালিয়ে পরিবারকে রক্ষা করেছেন, আন্দোলনেরও তেমন অনেক কাকিমা দরকার।
আসলে এরকম অনেক টুকরো টুকরো ঘটনা, টুকরো টুকরো মানুষ থেকেই আমার রাজনীতির শিক্ষা। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ রাজনীতির উপরই ভরসা হারিয়ে ফেলছেন। সেটা এক ভয়ংকর বিপদ।
পড়ুন:



.jpg)




.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)
