link text

Breaking Posts

6/trending/recent

Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

ধর্ম কখনও নৃশংস হয় না, নৃশংসতার ধর্ম হয় না #Udaipur#Jubeir#Teesta

উদয়পুরের ঘটনাটা জানার পর থেকেই শিরশিরে একটা ভয় শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে ক্রমাগত।
নূপুর শর্মার মন্তব্যের পক্ষে কথা বলায় রাজস্থানের উদয়পুরে ধানমণ্ডি এলাকায় পেশায় দর্জি, বছর চল্লিশের কানাইয়ালাল তেলিকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। বেলা দুটো নাগাদ জামার মাপ দেওয়ার ভান করে দোকানে ঢোকে মহম্মদ রিয়াজ আখতার ও মহম্মদ গোশ। কিছুক্ষণ পরেই তারা আক্রমণ করে কানাইকে। কুপিয়ে খুন করে। সেই নৃশংস খুনের ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে খুনিরা। অন্য একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, তারা হাসি মুখে খুনের কথা স্বীকার করছে, অস্ত্র দেখাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের হুমকি দিচ্ছে। দ্রুত দুজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

অদ্ভুত একটা ভয়, একটা বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে। অনেক বন্ধুকে দেখছি, হিংস্র উল্লাসে সেই সব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে যাচ্ছে। ভাবটা এমন, দ্যাখ, মুসলিমরা কেমন নৃশংস হয়!

এখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। টুইটারে দেখছি রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অমিত মালব্য, সীতারাম ইয়েচুরি, আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব...প্রতিবাদের লাইনটা দীর্ঘ হচ্ছে।

তেমনই 'জাগো হিন্দু' স্লোগানও জোরাল হচ্ছে। পাল্টা কয়েকজন দেখছি মনে করাচ্ছে, ২০১৭ সালে এই রাজস্থানেই মালদা থেকে যাওয়া এক মুসলিম শ্রমিককে ঝুলিয়ে খুন করে তার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা। 

যত সময় গড়াচ্ছে ততই মনে হচ্ছে, আমরা যারা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে চাই তারা ক্রমশ যেন সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছি। 

মহাত্মা গান্ধীর কথাটা মনে পড়ছে, 

চোখের বদলে চোখ নিলে একদিন সারা পৃথিবীটাই অন্ধ হয়ে যাবে। 

'অদ্ভুত আঁধার এক' কবিতায় যে সময়ের ছবি এঁকেছিলেন জীবনান্দ দাশ, তার চেয়ে কতটা এগোতে পেরেছি আমরা? 

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,

যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;

যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই

পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি

এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়

মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা

শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

একটা মানুষকে জ্যান্ত কুপিয়ে খুনের পরে আরেক দল চিৎকার করছে পাল্টা হিংস্রতায়।

'১৯৪৬-৪৭' কবিতায় দাঙ্গা বিধ্বস্ত সে সময়ের বাংলার ছবি বিষন্নতার রঙে এঁকেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। আজকের সঙ্গে তার বিশেষ ফারাক আছে?  

'আজকের মন্বন্তর দাঙ্গা দুঃখ নিরক্ষরতায়

অন্ধ শতছিন্ন গ্রাম্য প্রাণীদের চেয়ে

পৃথক আর-এক স্পষ্ট জগতের অধিবাসী ছিলো।...

আজকে অস্পষ্ট সব? ভালো করে কথা ভাবা এখন কঠিন;

অন্ধকারে অর্ধসত্য সকলকে জানিয়ে দেবার

নিয়ম এখন আছে; তারপর একা অন্ধকারে

বাকি সত্য আঁচ করে নেওয়ার রেওয়াজ

রয়ে গেছে; সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখে।...

মানুষ মেরেছি আমি-তার রক্তে আমার শরীর

ভরে গেছে; পৃথিবীর পথে এই নিহত ভ্রাতার

ভাই আমি; আমাকে সে কনিষ্ঠের মতো জেনে তবু

হৃদয়ে কঠিন হ’য়ে বধ ক’রে গেল, আমি রক্তাক্ত নদীর

কল্লোলের কাছে শুয়ে অগ্রজপ্রতিম বিমূঢ়কে

বধ করে ঘুমাতেছি...

ঘুমাতেছে।

যদি ডাকি রক্তের নদীর থেকে কল্লোলিত হ’য়ে

বলে যাবে কাছে এসে, ‘ইয়াসিন আমি,

হানিফ মহম্মদ মকবুল করিম আজিজ-

আর তুমি?’ আমার বুকের ’পরে হাত রেখে মৃত মুখ থেকে

চোখ তুলে শুধাবে সে- রক্তনদী উদ্বেলিত হয়ে

বলে যাবে, ‘গগন, বিপিন, শশী, পাথুরেঘাটার;

মানিকতলার, শ্যামবাজারের, গ্যালিফ স্ট্রিটের, এন্টালির-’

কোথাকার কেবা জানে; জীবনের ইতর শ্রেণির

মানুষ তো এরা সব; ছেঁড়া জুতো পায়ে

বাজারের পোকাকাটা জিনিসের কেনাকাটা করে...

অনেক বিদ্যার দান উত্তরাধিকারে পেয়ে তবু

আমাদের এই শতকের

বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু- বেড়ে যায় শুধু;

তবুও কোথাও তার প্রাণ নেই ব’লে অর্থময়

জ্ঞান নেই আজ এই পৃথিবীতে; জ্ঞানের বিহনে প্রেম নেই।...

এ-যুগে কোথাও কোনো আলো- কোনও কান্তিময় আলো

চোখের সুমুখে নেই যাত্রিকের...'

মাফ করবেন কোনও কাব্যি রোগ ভর করেনি। এটা কাব্য করার সময় নয়। নিজের মনের কথাগুলো এই সব কবিতার ভাষায় উচ্চারিত, তাই...।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সারা কলকাতা স্তব্ধ। গড়িয়ায় কলেজ থেকে টালিগঞ্জের বাড়িতে ফিরছি। এখানে-ওখানে ছোট ছোট জটলা থেকে যে ভয়ংকর হিংস্রতার ভাষা ছিটকে ছিটকে আসছিল তাতে মনে হচ্ছিল নিজের ভাবনা প্রকাশ করলে ওখানেই খুন হয়ে যেতে পারি। অসম্ভব ভয় করছিল।

সেই ভয়টা ফিরে আসছে। আসলে এই হিংস্র বিদ্বেষ আমাদের অনেকেরই মনের গভীরে বাসা বেধে আছে। ধীরে ধীরে জল-হাওয়া পেয়ে ডালপালা মেলতে চাইছে সেই হিংস্র ভাবনাগুলো।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে পদ্মা সেতু তৈরি করল। বাঙালি হিসেবে আমরা অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলাম। শুধু বাঙালি হিসেবেই বা বলি কেন, মানুষ হিসেবেই ভাল লাগা কাজ করল।
ওরে বাপ! সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা লম্বা পোস্ট। ভারত কত কিছু করেছে তারা তালিকা। দেশের ভাল দেখতে পায় না, বিদেশের সাফল্যে লাফায়!
হাসিও পায়, কষ্টও হয়! ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে লড়াইয়ে নামানো হচ্ছে!? 
আরে বাবা, ভারতের কাছে যা স্বাভাবিক বাংলাদেশের কাছে তা নয়। ১৯৮৩ সালে কপিলের ভারত যখন বিশ্বকাপ জিতেছিল তখন সারা দুনিয়া যেমন চমকে উঠেছিল ধোনির ভারতের জয়ের সময় তা হয়েছে? ২২ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ মাত্র ১৬ ম্যাচ জিতেছে। এখন তারা যদি পরপর দুর্ধর্ষ টিমগুলোকে হারাতে শুরু করে তা নিয়ে হইচই হবে না? ভারত করলে তো হবে না। সে তো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশ।
বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় অনেক দুর্বল। তবু ইতিবাচক মন নিয়ে, সাহস নিয়ে নিজের কোমরের জোরে পদ্মা সেতু বানিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তার সুফল ভারতের মতো অনেক দেশই পাবে। তাই সাবাস জানানো। আর ওরা বাঙালি, তাই বাঙালি হিসেবে বাড়তি আনন্দ। আমার এক বন্ধু থাকেন জার্মানিতে। তিনি তত্ত্ব দিলেন, বাংলাদেশীরা আর বাঙালি বলে না নিজেদের, বলে বাংলাদেশী। 
আসলে এই ভাবনার পিছনে যত না দেশভক্তি আছে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে মুসলিম বিদ্বেষ। বাংলাদেশ মানে তো মুসলিমদের দেশ। ওদের সাফল্যে আনন্দ করতে হবে? কিন্তু ধরুন, আমেরিকা শুনলেই আমরা কেমন গদগদ হয়ে পড়ি! কিন্তু আমেরিকার সাফল্যের পিছনে কত ভারতীয়ের মেধা আছে বলুন তো! ছিঃ, ওসব প্রশ্ন তুলতে হয়? আমেরিকা কি মোল্লাদের দেশ? আমেরিকা ইজ আমেরিকা।
আমার এক বন্ধু আছে, নিজেকে বামপন্থী বলে দাবি করে। পদ্মা সেতুর সাফল্যে উচ্ছ্বাসের কারণবলায় সে বলল, ভালই অ্যাঙ্গেল ডট কম দিতে পার। বাম বলে ভাবা মানুষের মনের গভীরেও রয়েছে গভীর সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। হয়তো নেতৃত্ব স্থানীয় অনেকের মনেও আছে।
সাম্প্রদায়িক ভাবনা কতটা কুয়োর ব্যাং বানিয়ে দেয় পদ্মা সেতুর ঘটনাই তার প্রমাণ। কথায় কথায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তুলনা টানাও এই মনোভাবেরই প্রমাণ। ওখানে কিছু হলে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, ওখানে ওরা করলে দোষ না, এখানে আমরা করলেই দোষ? পাকিস্তান আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ভাবে অনেক পিছিয়ে। পাকিস্তান আমাদের মডেল হতে পারে? আমরা যদি পিছনের দিকে এগোতে চাই, তাহলে নিশ্চয়ই পাকিস্তান মডেল হবে। ভারত হবে 'হিন্দু পাকিস্তান'। সেই চেষ্টাই চলছে। মিনিবাসের কন্ডাক্টরের মতো ক্রমাগত বলা হচ্ছে, পিছন দিকে এগিয়ে যান। নতুন কিছু আবিষ্কারের বদলে মন কোনও মসজিদের নিচে মন্দিরের চিহ্ন আছে কিনা।

সেই ভয়টাই ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে। বেপরোয়া রাষ্ট্র, বেপরোয়া হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা।
সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ,গুজরাট পুলিশের প্রাক্তন ডিজি (আদালতের রায়ে অবসর গ্রহণের দিন ডিজি হয়েছিলেন) আরবি শ্রীকুমার গ্রেফতার হলেন। ওই মামলাতেই অভিযুক্ত গুজরাটের সাসপেন্ড হওয়া আইপিএস (এখন জেলে) সঞ্জীব ভাট (ইনি কাশ্মীরি পণ্ডিত)।
কেন?
২০০২ সালে দাঙ্গার সময় আহমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে খুন হন প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরি সহ অন্তত ৩৫ জন। ওই ঘটনায় সিট তদন্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন এহসানের স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। তাঁর অভিযোগ ছিল গুজরাটের তৎকলীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে।
এখানে একটা জিনিস লক্ষ্য করার আছে। রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএম খানউইলকর, বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি সিটি রবি কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, মামলা দায়েরের পেছনে অসৎ, ঘৃণ্য চক্রান্ত কাজ করেছিল। পদ্ধতির অপব্যবহারের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এই মন্তব্যও করা হয়, জাকিয়া জাফরির আবেদনের পেছনে অন্য কারও নির্দেশ ছিল।
ইদানিং একটা প্রবণতা দেখি। গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভ ছেড়ে, রাস্তার আন্দোলন ছেড়ে, আদালতের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা। 
আদালত কোনও অভিযোগ খারিজ করতেই পারে। করেও। কিন্তু কখনও শুনেছেন, অভিযোগকারীরা চক্রান্ত করেছে, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, আদালত এমন নির্দেশ দিচ্ছে?
শুনিনি। প্রথম বার শুনলাম।

ঠিক তারপর দিন সংবাদসংস্থা এএনআই-কে ডেকে সাক্ষাৎকার দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বললেন, ‘দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে রোজ কষ্ট পেতে দেখেছি মোদীজিকে। ভগবান শিবের মতো বিষ পান করে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সোনার মতই উজ্জ্বল সত্য সামনে এসেছে।...সুপ্রিম কোর্টের রায় আমি একঝলক পড়েছি। সেখানে স্পষ্টভাবে তিস্তা শেতলওয়াড়ের নাম রয়েছে। তাঁর একটি এনজিও ছিল। সেটি সমস্ত থানায় বিজেপি কর্মীদের নাম জড়িয়ে অভিযোগ জমা করেছিল। কিছু সংবাদমাধ্যমও এমন ভাবে তা প্রচার করেছিল, সবাই সত্যি বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট বলছে, জাকিয়া জাফরি অন্য কারও নির্দেশে কাজ করেছেন। এনজিও অনেক ভুক্তভোগীর হলফনামায় স্বাক্ষর করেছে এবং তাঁদের অনেকেই জানতেনও না যে কিসে স্বাক্ষর করছেন। সবাই জানে তিস্তা শেতলবাদের এনজিও এই কাজটি করছিল। ইউপিএ সরকারও সেই এনজিওকে সাহায্য করেছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতে যাঁরা মিথ্যা প্রচার চালিয়েছিল, তাঁদের উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।'
তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুম্বই থেকে তিস্তাকে গ্রেফতার করে গুজরাট এটিএস। আগে থেকে ছকা না থাকলে সেটা সম্ভব না। 

তারপর গ্রেফতার হলেন অল্ট নিউজের সহ প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবের। তাঁর গ্রেফতারি সেই বাঘের ছাগল খাওয়ার গল্পকে মনে করাল। কারণ একটা বের করলেই হল। জুবেরের টার্গেট হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তাঁর সংস্থা বিভিন্ন মিথ্যা প্রচার ফাঁস করে দিত। বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার মন্তব্যের সব ফুটেজ সরিয়ে ফেলা হলেও জুবেরের কাছে রেকর্ড ছিল এবং তিনি তা টুইট করে দেন।১৯৮৩ সালে তৈরি হৃষিকেশ মুখার্জি একটি কমিক ছবি তৈরি করেছিলেন, 'কিসি সে না কহেনা'। ২০১৮ সালে জুবের ওই সিনেমার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন '২০১৪-র আগে ছিল হনিমুন হোটেল, ২০১৪-র পরে হনুমান হোটেল।'
গত ১৯ জুন 'হনুমান ভক্ত' ৪ বছর আগের ওই টুইটে দিল্লি পুলিশকে যুক্ত করে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ করেন। @balajikijaiin নামে ওই টুইটার হ্যান্ডেল কবে তৈরি? ২০২১ সালের অক্টোবরে। এর আগে কোনও পোস্ট করা হয়নি।  প্রথম পোস্ট ওই ১৯ জুনই। 

তিস্তা, শ্রীকুমার, জুবেরদের দ্রুত গ্রেফতার করা গেলেও নূপুর শর্মা ভ্যানিস। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার হাত ধুয়ে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। কেন এই বৈষম্য?
বিপদটা হল, যুক্তি এখন অচল। বিপদ খানিকটা তৈরি হয়ে আছে, খানিকটা তৈরি করা হচ্ছে রোজ। সে কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়া এবং বেশ কিছু সাংবাদিক।
নূপুরের মন্তব্যের প্রতিবাদে আচমকা হিংসাত্মক আন্দোলনে নেমে গেলেন বেশ কিছু মুসলিম। তাদের সমর্থনে অনেকে জুটে গেল।
আবার প্রয়াগরাজে হিংসায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যোগী সরকারের বুলডোজার-দাওয়াইয়ের পক্ষেও অনেকে জুটে গেলেন। 
অগ্নিবীর-ইস্যুতে হিংসাত্মক আন্দোলন হল। তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কিন্তু বুলডোজার-দাওয়াই ব্যবহার হল না। 
সেই বৈষম্য। 
ধর্ম দেখে গ্রেফতার। ধর্ম দেখে বুলডোজার-দাওয়াই। সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পোশাক দেখেই বোঝা যায়...। স্পষ্টই সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিত।
অতীতের অভিজ্ঞতা হল, তিস্তা-জুবেরের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে মিছিল হলেও উদয়পুরের নৃশংসতার বিরুদ্ধে হয় না। তাতে ভোটের অংকে কতটা লাভ হয় জানি না, দেশের মঙ্গল হয় না। এখন রাত সওয়া ১১টা। না, এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি মমতা ব্যানার্জি।
বিশেষত মুসলিম বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, 

'ভিতর থেকে নড়ুন, 

চাপ সৃষ্টি করুন।'

রাজনীতি আর ধর্মগুরুদের মৌলবাদী, ধান্দাবাজ চেহারাটা স্পষ্ট করে চিনুন। ভিতর থেকে প্রতিবাদ উঠুক।  

 

কবিতার লাইনটা মনে আছে তো? 

'হিন্দু না ওরা মুসলিম?

ওই জিজ্ঞাসে কোন জন। 

কাণ্ডারী, বলো ডুবিছে মানুষ

সন্তান মোর মা-র।'

মনে রাখবেন কবিতাটা এক মুসলিমের লেখা। হিন্দু বন্ধুরাও মনে রাখবেন, কবির নাম কাজি নজরুল ইসলাম।

ন্যায়-নীতি-যুক্তি-সত্য-মিথ্যার বালাই নেই। অদ্ভুত একটা হিস্টিরিয়া। হিন্দু-মুসলিম দুই সাম্প্রদায়িক শক্তি পাল্লা দিয়ে চলছে। প্রতিরোধের চেষ্টা কোথায়? শাসক-বিরোধী কারও উপরেই ভরসা করার কারণ দেখি না। ভোটের অঙ্ক নির্ভর রাজনীতিতেই মন। 

হিটলারের জার্মানিতে প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থার তেড়ে সমালোচনা করলেন। অথচ আজ দেশজুড়ে কী চলছে? জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তখন পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এখন ধর্মীয় বোধও যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন-সেনা, কেউই সেই মনোভাবের বাইরে নয়। 

অসম্ভব বিপন্ন লাগে মাঝেমধ্যে। তবু ভরসা থাক জীবনানন্দেই...

'তবুও মানুষ অন্ধ দুর্দশার থেকে স্নিগ্ধ আঁধারের দিকে

অন্ধকার হতে তার নবীন নগরী গ্রাম উৎসবের পানে

যে অনবনমনে চলেছে আজও- তার হৃদয়ের

ভুলের পাপের উৎস অতিক্রম করে চেতনার

বলয়ের নিজ গুণ রয়ে গেছে বলে মনে হয়।'   

গুজরাট দাঙ্গার সময় হিংস্রতার প্রতীক হয়ে ওঠা অশোক পারমার আর বিপন্নতার প্রতীক হয়ে ওঠা কুতুবউদ্দিন আনসারি, এখন পরস্পরের বন্ধু।
এটাই ভারত। এটাই ভরসা।
নূপুর শর্মাদের মতো উদয়পুরের খুনিদের জন্যও সেই ভারতের বরাদ্দ শুধু একরাশ ঘৃণা। উদয়পুরের খুনিদের মতো নূপুর শর্মাকেও গ্রেফতার করতে হবে। শাস্তি দিতে হবে। 

হাতে হাত ধরি ধরি, গোল বড় করি করি খেলা অনেক হল। এবার চাই সত্যিকারের মনের মিল ঘটানোর পালা। সে জন্য কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের তোলা সহজ কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার,

বলতে পারো বড় মানুষ মোটর কেন চড়বে?

গরিব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে?

বড় মানুষ ভোজের পাতে ফেলে লুচি মিষ্টি!

গরিবরা পায় খোলাম কুচি একি অনাসৃষ্টি?

বলতে পারো ধনীর বাড়ি তৈরি যারা করছে,

কুঁড়েঘরেই তারা কেন মাছির মতো মরছে?

ধনীর মেয়ের দামী পুতুল হরেক রকম বায়না,

গরিব মেয়ে পায় না আদর, সবার কাছে ফেলনা।

বলতে পারো ধনীর মুখে যারা জোগায় খাদ্য,

ধনীর পায়ের তলায় তারা থাকতে কেন বাধ্য?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
নামহীন বলেছেন…
সাম্প্রদায়িকতার আগুন খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে দেশজুড়ে।
Keya Ghosh বলেছেন…
শুধু টুইটারে বিরোধিতা করলে হয়না। শুভ চেতনা শুভ বুদ্ধি এবং দেশের মানুষ এইসব শব্দ গুলো ভুলিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছে এখন দ্রুত সেটা বেড়ে চলেছে।কে থামাবে? কিভাবে?

Top Post Ad