৭৮ বছর বয়সী জনপ্রিয় মালয়ালি প্লেব্যাক গায়ক এভাডা বাসির (Evada Basheer) শনিবার রাতে মঞ্চে গাইতে গাইতেই মারা গেলেন। শোকার্ত কেরল তাঁর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কেরল সরকার তাঁকে গান স্যালুটও দেয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার গান স্যালুট দিল দিল্লিতে জন্মানো মালয়ালি ছেলে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ (KK)-কে।
প্রয়াত ওম পুরীর প্রাক্তন স্ত্রী নন্দিতা (Nandita on FB) ফেসবুকে লিখেছেন, 'ছিঃ পশ্চিমবঙ্গ! কলকাতাই কেকে-কে খুন করেছে। আর সেখানকার সরকার শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আয়োজন করে বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছে।'
আর আমরা?
নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানের দর্শক এক ছাত্র একটি ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রশ্ন করেছেন, 'এমন পরিস্থিতি তৈরি করলেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না? কেন তাঁদের হাজতবাস হবে না?'
না ভাই, হবে না। দেখছেন না, কলকাতার সিপি (Kolkata CP) বলে দিয়েছেন, সব ঠিক ছিল। বলেছেন, লোক বেশি ছিল কিন্তু এসি ঠিক ছিল। বলেছেন, লোক বেশি ছিল কিন্তু অব্যবস্থা ছিল না। অনুষ্ঠানের ভিডিও-ও ছেড়ে দিয়েছেন।
![]() |
| কেকে-র মরদেহের মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধার্ঘ। পাশে শিল্পীর স্ত্রী, ছেলে |
চলুন, এবার আমরা উদ্বাহু নৃত্য শুরু করি। পাবলিক যেমন হবে তেমন প্রশাসনই তো সে পাবে। দেশের অন্যতম সেরা শিল্পীকে 'খুন' করে আমরা রূপঙ্করের পিছন মেরে যাচ্ছি। চলুন, রূপঙ্করের পিছনে বাঁশ গুঁজে আত্মরতিতে মেতে উঠি!
আসলে আমাদের সেই দম নেই। কারণ আমাদের আত্মসম্মান বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। লাজলজ্জার বালাই নেই। ক্রমশ নীচের দিকে নামছি। সারা দেশ খিল্লি করছে। আর আমরা এ-ওর পিছনে কাঠি করতে মেতে আছি। মেতে আছি পার্টিবাজি নিয়ে।
এ রাজ্যে সুযোগ নেই। অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে রাজ্যের মেধা, রাজ্যের শ্রমশক্তি।
প্রাক্তন ইনফোসিস কর্তা মোহনদাস পাই (T V Mohandas PAI) ২০১৮ সালে কী বলেছিলেন মনে আছে?
'সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত বাঙালি এখন বাংলা ছাড়া। তাঁরা এখন ভারতের বাকি অংশকে গড়ে তুলছেন। রাজনীতি বাংলাকে টেনে নামাচ্ছে। সেরা ও উজ্জ্বল সন্তানরা রাজ্যছাড়া হচ্ছেন। এক সময়ের সেরা রাজ্য এখন স্রেফ অতীতের ছায়া। কোনও আশা নেই।'
কেন বলছি, কেকে-কে কলকাতা 'খুন' করেছে?
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) মন্ত্রী। তাঁর হাতে থাকা কেএমডিএ-র হাতেই নজরুল মঞ্চের ভার। কেকে-র মৃত্যু সম্পর্কে কী বললেন?
'অনুষ্ঠান করতে করতেই কেকে (KK) বুকে ব্যথার কথা বলছিলেন। কিন্তু দর্শকদের অনুরোধে গেয়ে যেতে হয়।'
এক দর্শকের কথায়, 'গায়ককে বলতে শুনেছি, ‘খুব গরম লাগছে। কিছু করতে না পারলে অন্তত পিছনের আলোগুলো বন্ধ করে দিন।’ কিন্তু করা হয়নি।'
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) নেতা সুপ্রিয় চন্দ লিখেছেন, 'দেখছিলাম, কেকে ভীষণ ঘামছিলেন। জলও খাচ্ছিলেন। মুখ-মাথা মুছছিলেন। আমরা কিন্তু এতটা ঘামছিলাম না। ওঁর বাদ্যযন্ত্রীরাও নন। তিন নম্বর গান শেষ করেই কেকে মঞ্চের পিছনের অংশে চলে গেলেন। জল খাওয়ার সেই শুরু। তার পর দরদর করে ঘামতে দেখছিলাম ওঁকে। অবাক লাগছিল! এক জন লিড সিঙ্গার, গান গাইতে গাইতে এত বার জল খাচ্ছেন কেন! অনেকের লাইভ অনুষ্ঠান দেখেছি। কিন্তু এভাবে জল খেতে আগে কাউকে দেখিনি।'
গাইতে গাইতে মিনিট দশেকের জন্য গ্রিন রুমে গিয়ে বিশ্রামও নেন কেকে।
অন্তত বার চারেক শারীরিক অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন।
মানে কেকে বারবার বুঝিয়েছেন, তিনি স্বস্তিতে নেই। বুঝিয়েছেন, তিনি সুস্থ নেই।
কেউ কান দেয়নি। কেউ মানে? অনুষ্ঠান চলার সময় মঞ্চে ভিড় করে থাকা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা টিএমসিপি-র কলেজ ইউনিটের নেতারা।
এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন, অমানবিক, হৃদয়হীন, অ-সংবেদনশীল একদল কমবয়সী, যাঁরা নাকি ভবিষ্যতের নেতা! এটাই বেশ বিপজ্জনক।
ওঁরা কেউ কেকে-র কষ্ট বুঝতে চাননি। হয়তো বুঝতেই পারেননি। বুঝতে পারার বোধটুকুও ওঁদের থাকার কথা নয়। যাঁরা ভিড় সামলাতে অগ্নি নির্বাপক গ্যাস ছড়িয়ে দেন, তাঁদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত। তাঁরা কেউ কেকে-কে অনুষ্ঠান থামাতে বলেননি। অনুষ্ঠান শেষেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেননি।
অনুষ্ঠান শেষ করেই বিধ্বস্ত কেকে সোজা গাড়িতে উঠে যান।
গাড়িতে খুব শীত করছিল বলে এসি বন্ধ করতে বলেছিলেন। তাঁর হাত-পায়ে খিঁচ ধরছিল। শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে গেলে ডিহাইড্রেশনে যা হতে পারে বা অন্য কোনও কারণে। তবু তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হল।
হোটেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুরের হাসপাতালে (CMRI)। যদিও কাছেই অনেক হাসপাতাল ছিল। 'গোল্ডেন আওয়ার' বলে কথাটা জানা ছিল না?
কেকে 'খুন' হয়েছেন। 'খুন' হয়েছে কলকাতার ইজ্জত।
নন্দিতার কথা যেন কলকাতার গালে এক থাপ্পড়।
'আড়াই হাজারের বসার জায়গায় সাত হাজার কী ভাবে ঢুকল? এসি কাজ করছিল না। ঘামছিলেন কেকে। সে সব কেউ লক্ষ করল না? ব্যবস্থাপনা নিয়ে গায়ক ৪ বার অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থাও ছিল না ওখানে। প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করা হয়েছে। শিল্পীদের বুঝি এ ভাবেই আপ্যায়ন করে কলকাতা? এ ভাবেই ‘যত্ন’ নেয়?'
![]() |
| গাইছেন কেকে। মঞ্চের উপর চারপাশে তুমুল ভিড় |
সোমবার ছিল বেহালা ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজের ফেস্ট। সেখানেও আসনসংখ্যার চেয়ে ভিড় ছিল খানিকটা বেশি। সেদিনও এসি যথেষ্ট ঠাণ্ডা করতে পারছিল না। সেদিনও কেকে ঘেমেছেন এবং মাঝেমাঝে জল খেয়েছেন। অনুষ্ঠানের পর তাঁর হাতে এবং ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয় বলে স্ত্রী জ্যোতি কৃষ্ণাকে জানিয়েছিলেন।
পরের দিন নজরুল মঞ্চে ছিল স্যর গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ফেস্ট।
অডিটোরিয়াম ভর্তি। বাইরে তুমুল ভিড়। কেকে ঢোকার সময়ে মেন গেট খোলা হয়। তখনই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়টা হুড়মুড়িয়ে ঢোকে। ধাক্কাধাক্কি-ধস্তাধস্তিতে অনেকে পড়ে যায়। তাদের উপর দিয়েই বাকিরা চলে যায়।
হাজার হাজার লোকের অনুষ্ঠান বহু বহু বছর ধরে করছেন কেকে। সেই তিনিও ভিড় আর ভিড়ের মেজাজ দেখে গাড়ি থেকে নামতে ইতস্তত করছিলেন। কোনও মতে কেকে-কে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রিন রুমে।
বাউন্সার আর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দর্শকদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।
'এক দল বাঁশ নিয়ে তেড়ে যাচ্ছে, অন্য দল ইট ছুড়ছে। কারও মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে, কেউ বন্ধুর মুখে রুমাল চেপে ধরেও রক্ত বন্ধ করতে পারছে না! তার মধ্যেই ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র খুলে নিয়ে স্প্রে করতে শুরু করলেন। সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আশপাশ! তাতে যে দমবন্ধ করা অবস্থা তৈরি হবে সে বোধও তাঁদের নেই। পুলিশ প্রায় দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে।'
তারপর উত্তেজনা আরও বাড়ে।
'আমি তখন আতঙ্কিত। মনে হচ্ছিল, আর বাড়িই ফিরতে পারব না। ওখানেই মরে যাব। মঞ্চের পিছনের তিনটি ছোট গেটে ভাঙচুর শুরু হয়েছে। মাঝের গেটটি ভেঙে ফেলা হয়। গেট ও পাঁচিল টপকে অনেকে ঢুকে গিয়েছে। কেউ সিঁড়ি টপকে ঢুকছে, কেউ রেলিং টপকে। পুলিশকর্মীরা ভিডিও করছিলেন। ইউনিয়নের ছেলেরা সবাইকে ঢুকতে দিলে আমরাও সাড়ে ৬টা নাগাদ অডিটোরিয়ামে ঢুকি। ভিতরে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। এক-একটি চেয়ারে তিন-চার জন দাঁড়িয়ে। এসি চালু না বন্ধ, বোঝা যাচ্ছে না। সকলেই ঘামছি। আমার অসুস্থ লাগছিল, দম বন্ধ হয়ে আসছিল। একটি মেয়ে বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছিল। কষ্ট হচ্ছিল আমাদেরও।'
আসন প্রায় আড়াই হাজার। দর্শক ঢুকেছিল সাত-সাড়ে সাত হাজার।
কলকাতার সিপি বলছেন, সে দিন কেকে-র অনুষ্ঠানে বিশাল ভিড় হলেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সুপ্রিয় চন্দ লিখেছেন, 'অনেকে বলছেন, বাতানুকূল যন্ত্র কাজ করছিল না। আমি ছিলাম মঞ্চের পাশেই। আমার খুব একটা গরম লাগছিল না। কিন্তু নীচে-থাকা অনেকেই বলছিলেন খুব গরম লাগছিল। কিন্তু আমার কখনও মনে হয়নি, এসি বন্ধ। অত লোক থাকলে যেমনটা হয়, ভিতরের আবহাওয়া তেমনই ছিল।'
কী ক্যাসুয়াল! কোনও অনুশোচনা নেই! কোনও অপরাধবোধ নেই! এরাই নাকি সব ছাত্রনেতা! এক যুবনেতা আবার লিখেছেন, হোটেলে একটা ডাক্তার ছিল না?
আরে নজরুল মঞ্চে ডাক্তার তো দূরের কথা একটা অ্যাম্বুল্যান্সও ছিল না।
![]() |
| অনুষ্ঠানের পরের নজরুল মঞ্চ |
ওদের আর দোষ দিই কী করে? ওদের মেয়র নেতাই তো বলেছেন, 'কার হার্ট কখন টুক করে বন্ধ হয়ে যায় কে বলতে পারে।'
দার্শনিক!
কেন প্রায় তিন গুণ লোক ঢুকে গেল?
'বাচ্চা ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বাস। কে কন্ট্রোল করবে? পুলিশ তো লাঠি চালাতে পারে না।'
ঠিক আগের দিন কেকে-র অনুষ্ঠানে বাড়তি লোক ছিল। তা দেখেও পরের দিন বাড়তি পুলিশ রাখা হল না কেন? পুলিশ থাকা মানেই কি লাঠি চালানো?
পরিস্থিতি দেখেও তাঁরা কেন বাড়তি ফোর্স চাইলেন না? তাঁরা তো ভিডিও করছিলেন! কলকাতার সিপি বলেছেন, নজরুল মঞ্চে সে দিন পুলিশ যথেষ্টই মোতায়েন করা হয়েছিল। এক জন ওসি এবং তিন জন ইন্সপেক্টর ছিলেন।
বাস্তবে তো দেখা গেছে, পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি। অত বড় শিল্পী আসবেন। তুমুল ভিড় হবে। সে তো স্বাভাবিক। মাসখানেক ধরে অনুষ্ঠানের প্রচার চলছে। পুলিশের কী প্রস্তুতি ছিল?
যত সিট তার চেয়ে অনেক বেশি লোক আসছে, খবর পেয়েও কেন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামল না? সিপি জানিয়েছেন, যে কোনও অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের সময় অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হবে। স্থানীয় হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হবে। তা ছাড়া, কত জন দর্শক সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে আসছেন সে দিকে নজর রেখে আসনের বন্দোবস্তও থাকতে হবে।
আমি পড়তাম গড়িয়ার দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজে। বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত রবীন্দ্র সদনে। সেখানে তো অ্যাম্বুল্যান্স থাকত। কাছেই এসএসকেএম। তাই ডাক্তার রাখা হত না। কী কী অনুষ্ঠান হবে, শিল্পী কারা, কত দর্শক আসবে, আগেভাগেি সব জানাতে হত হল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, পুরসভাকে। সব কার্ডের উপর পুরসভার স্ট্যাম্প মারা থাকত। সিপি-র কথা শুনে মনে হচ্ছে, সেই সব এ-বি-সি-ডি-ও মানা হয়নি। মেয়র কিন্তু বলে ফেলেছেন, কেকে আসবেন, তাঁকে ঘিরে তুমুল উন্মাদনা, প্রচুর ভিড় হবে, এসবই তিনি জানতেন। ভিড় সামলাতে পুলিশকে বলতে হয়। অতো বড় তারকার উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়, জানতেন না? পুলিশকে বলা হয়নি?
সিপি-কে দিয়ে বলিয়ে, কোনও এক আচার্য আফিসারকে বদলি করে কাজ হবে? শাক দিয়ো তো মাছ ঢাকা যাচ্ছে না। একদিক ঢাকতে গেলে অন্যদিক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
![]() |
| অনুষ্ঠানের পরের দিন নজরুল মঞ্চ |
আর উদ্যোক্তারা? তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা দেখাচ্ছিলেন! টিএমসিপি-র এক নেতা লিখেছেন, 'এসএফআই কেকে-কে নিয়ে প্রোগ্রাম করার কথা কখনও ভাবতে পেরেছে?'
কী আপদের মতো যুক্তি!
এসএফআই পারেনি। আপনারা পেরেছেন। বেশ তো। কিন্তু পারার মতো করে তো পারতে হবে। এসএফআই যদি পাল্টা জিজ্ঞেস করে, তাঁদের কোনও কলেজের অনুষ্ঠানে এরকম কখনও হয়েছে?
কে এঁদের বোঝাবে, সবই রাজনীতির অঙ্কের খেলা নয়। তার বাইরে জীবনের বিরাট মাঠ আছে। কেকে-র ছেলে নকুল যদি টিএমসিপি নেতাদের প্রশ্ন করেন, আপনার কোনও প্রিয়জনের ক্ষেত্রে এরকম হলে কী করতেন? উত্তর আছে তো?
রকশিল্পী রূপম ইসলাম বলছেন, 'নজরুল মঞ্চ ওভারক্রাউডেড হয়ে গেলে কী হয়, সে অভিজ্ঞতা আছে। এসি বন্ধ হয়ে যায়। মঞ্চেও সার বেঁধে দর্শক দাঁড়িয়ে থাকলে দম নেওয়ার ফাঁকটুকুও থাকে না।'
কেকে-র ঘাড়ের কাছে মঞ্চের উপর ভিড় করেছিলেন ওঁরা। ওঁরা সব 'ভাইপো'র চ্যালা।
'ভাইপো'। ইডি তাঁকে দুবার ডেকেছে। তাই বদলা নিতে দুটো বিজেপি এমপি-কে ভাঙিয়ে এনেছেন।
বুঝুন তাঁর স্ট্যান্ডার্ড! তাঁর নৈতিকতা বোধ! তাঁর চ্যালারা কী হবেন বোঝাই যাচ্ছে। তাঁরাই নাকি ভবিষ্যত রাজনীতির মুখ! ভদ্দরলোকের পোশাক পরা চরম উচ্ছৃঙ্খল, কাণ্ডজ্ঞানহীন, অসংবেদনশীল, অপরাধী মানসিকতা নিয়ে চলা একটা বাহিনী।
এত বড় কাণ্ড! তৃণমূলের কমবয়সী নেতাদের কোনও অনুতাপ বোধ আছে? নেই। উল্টে এমন ভাব করছেন, তেমন কিছুই তো হয়নি। আমাদের ফালতু দোষ দেওয়া হচ্ছে। ভাবটা এরকম, যা করেছি বেশ করেছি।
মাথার উপর ছাতারা আছেন আড়াল করতে। মানুষেক চোখে ধুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। পুরুলিয়ার অনুষ্ঠান কাঁটছাঁট করে মুখ্যমন্ত্রী উড়ে এলেন। 'ভাই'-কে গান স্যালুট দিলেন। যাকে-তাকে যখন তখন গান স্যালুট দেওয়া যায় নাকি? বলিউডের অন্যতম মাইলস্টোন বাপ্পি লাহিড়িকে দেওয়া হয়েছিল? না। রাষ্ট্রীয় সম্মান ইচ্ছেখুশি মতো দেওয়া যায় না। দেওয়া হল। কেন?
আমাদের দম নেই। তাই আমরা প্রশ্ন করি না। কিন্তু মুম্বইয়ের নন্দিতার মতো অনেকেই তো বলছেন, 'কলকাতাই কেকে-কে খুন করেছে। আর সেখানকার সরকার শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আয়োজন করে বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছে।'
ছাড়ুন তো, নন্দিতাদের কথা। আমাদের তো রূপঙ্কর আছে, রূপঙ্করের পিছন আছে।
আচ্ছা বলুন তো, রূপঙ্কর কি সব কথা ভুল বলেছেন? হ্যাঁ, আবেগে কিছু বাড়াবাড়ি মন্তব্য করে ফেলেছেন। সেটাকেই বিরাট করে দেখিয়ে অবিরাম হুমকি চলছে, ট্রোলিং চলছে। সত্যি বলুন তো বাংলার শিল্পীদের জন্য কি করছে বাংলা? আলগা একটা মন্তব্য করায় রূপঙ্করকে খুনের হুমকি পেতে হচ্ছে। লম্বা বিবৃতি দিতে হচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলন করার কিছু অভিজ্ঞতা আমার আছে। তখন এসএফআই-এর মধ্যে একটা বিতর্ক ছিল। একদলের মত ছিল, ছাত্রছাত্রীদের মন মাতাতে কলেজ সোশ্যালে প্রতিষ্ঠিত-জনপ্রিয় শিল্পীদের আনা হোক। আরেকটা মত ছিল, প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা এমনিতেই অনেক অনুষ্ঠান পান। বরং ছাত্র সংসদের টাকায় অন্য শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হোক।
সে সব বিতর্কে অনেক দিন আগেই দাঁড়ি পরে গেছে। এখন শুধু নেশা ধরাও। টাকা তোল, টাকা লোটো, টাকা ঢালো, নেশায় মাতিয়ে রাখ।
কেকে-র মৃত্যু নিয়ে আমরা চুপ। রাজনীতির লোকেরা তাঁদের অংকে কথা বলছেন। আমরা, পাবলিক বিলকুল চুপ। কলকাতার সম্মান গেছে কি না গেছে তাতে আমাদের কি, বলুন? আমাদের বেশি উৎসাহ রূপঙ্করের পিছন নিয়ে।
একটা কলেজের ফেস্টের বাজেট ২৫ লক্ষ টাকা (কেউ বলছেন ৩৫ লক্ষ)! কোত্থেকে টাকা আসছে? কোনও প্রশ্ন নয়। এখানে কবি চেয়ার মুছে দেন। এখানে চিত্রশিল্পী গ্যালন গ্যালন তেল ঢালতে ঢালতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ থাকলে তিনি নিজে এসে হাম্বা-কবিকে পুরস্কার দিয়ে যেতেন। এখানে ওয়েব সিরিজের ঠাকুরপোর বৌদি বা টেলিভিশন চ্যানেলের এক জনপ্রিয় মুখ (সোশ্যাল মিডিয়াতেও কাটতি ভাল) বাংলাকে জানিয়ে দিলেন, তাঁদের চিন্তা শুধু রূপঙ্করের পিছন নিয়ে। এমন চরিত্র আরও অনেক আছে।
ওই দু-চার পিস শ্রীলেখা মিত্র আছেন। ওঁদের নিয়ে পারা যায় না, বলুন?
'রূপঙ্করদার সমালোচনা না করে বরং এটা জিজ্ঞেস করুন যে, কেন আমরা কেকে-কে হারালাম? রূপঙ্করদাকে শিখণ্ডী খাড়া না করে ভাবুন, অনুষ্ঠান চলাকালীন কেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেন কীভাবে?'
ন্যাকাশশী! শরীরে খাঁজ দেখিয়ে বেড়ায়, সে কী না জ্ঞান ঝাড়ছে!
সফট টার্গেট ছেড়ে কিনা ঝাড়ের বাঁশ গাঁ.. টেনে আনার কথা বলছে!
নজরুল মঞ্চে আঁটে আড়াই হাজার মতো। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, সেদিন ছিল সাত-সাড়ে সাত হাজার। কত পাস বাজারে ছাড়া হয়েছিল? হিসেব নেই।
পাস ব্ল্যাকে বিক্রি হয়েছে। চার-পাঁচ হাজারও দর উঠেছে।
কারা আয়োজক ছিল অনুষ্ঠানের? কার্ডে লেখা ছাত্র সংসদ আর টিএমসিপি ইউনিট।
গত পাঁচ বছর রাজ্যের কোনও কলেজে ছাত্র সংসদের ভোট হয় না। কাজেই কোথাও কোনও ছাত্র সংসদ নেই। তাহলে গুরুদাস কলেজের ছাত্র সংসদ এল কোত্থেকে?
কোনও কলেজের টিএমসিপি ইউনিট কি ছাত্র সংসদের সঙ্গে যৌথ ভাবে ফেস্ট করতে পারে? উত্তর হল, না। কারণ, ছাত্র সংসদ হল ছাত্রছাত্রীদের ভোটে নির্বাচিত কলেজের সংবিধান সম্মত একটি সংস্থা। কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র সংসদ তহবিলে টাকা দেন। সেই টাকায় সারা বছর ছাত্র সংসদের নানা কাজকর্ম চলে। কিন্তু টিএমসিপি-এসএফআই-সিপি-ডিএসও-এবিভিপি, এগুলো হল ছাত্র সংগঠন। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র সংসদ তহবিলের জন্য যে টাকা দেন তা খরচের কোনও অধিকার তাদের নেই। তবু গুরুদাস কলেজের টিএমসিপি ইউনিটই ছাত্র সংসদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফেস্টের উদ্যোক্তা ছিল। পাসে তো সে রকমই ছাপা।
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি একবার বলছেন, উদ্যোক্তা ছিল কলেজ। যখন প্রশ্ন করা হল পাসে তাহলে টিএমসিপি ইউনিটের নাম ছাপা হল কেন? নির্বিকার ভাবে বলে দিলেন, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। অথচ টাকা জমে আছে। কলেজে তো অন্য কোনও সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। তাই টিএমসিপি ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই নির্লজ্জগুলো নেতা? এখন ছাত্রদের, ভবিষ্যতে রাজ্যের নেতা? ওঁদের যাঁরা নেতা বানিয়েছেন তাঁরা কি?
মূল পাণ্ডার নাম সামনে আসছে। পংকজ ঘোষ। কেকে-র অনুষ্ঠানের পাসে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে শুধু তাঁর নাম। তিনি কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের সভাপতি। পাশ করে গেছেন আট বছর আগে। এখন কলেজের শিক্ষাকর্মী।
ছাত্র সংসদ উদ্যোক্তা হলে তার সাধারণ সম্পাদকের নাম তো থাকবে। নেই। শেষবার নির্বাচিত ছাত্র সংসদের জিএস বলছেন, তাঁকে ডাকেইনি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতির তৈরি করে দেওয়া টিএমসিপি-র ইউনিট। তিনি অনুষ্ঠানেও যাননি।
মানে সব নিয়ম-কানুনের ১০৮!
অত টাকা এলো কোত্থেকে?
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি বলছেন, কোভিডের জন্য দু বছরের টাকা জমে ছিল। সব একসঙ্গে খরচ করা হচ্ছে।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, কলেজের ফেস্টগুলোতে নামীদামী শিল্পীর ভিড়। টাকা জোগাচ্ছে 'গৌরী সেন'।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কলেজের প্রিন্সিপালরা কেন টিএমসিপি ইউনিটের হাতে ছাত্র সংসদের টাকা দিচ্ছেন? কেন? বোঝেন না? সেই রায়গঞ্জ কলেজের প্রিন্সিপালের কথা মনে নেই?
এই যে এত হইচই প্রিন্সিপাল কিছু বলেছেন দেখেছেন? মানসম্মান রাখতে শেষে প্রাণটা যাক আর কী!
তবে ভুলেও এসব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবেন না। রূপঙ্কর বা তাঁর মতো অন্য কারও পিছনটা খুঁজে নিন। কাঠি বাঙালির বড্ড প্রিয় শব্দ। কাঠি না দিয়ে বাঁশ, আছোলা বাঁশ হলে তো আরও চমৎকার! দেখুন না, গণরোষে কেমন রূপঙ্করের গান না বাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল মিও আমোরে।
আসুন, আমরা উল্লাস করি। আমাদের প্রতিবাদের ফল মিলেছে। রূপঙ্করের পেটেও লাথি পড়েছে। ভবিষ্যতেও অনুষ্ঠান করতে না দিয়ে ওঁর পেটে আরও লাথি মারা যাবে।
আসুন আমাদের নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে থেকে প্রশাসন তদন্তের নামে, ব্যবস্থা নেওয়ার নামে চোখে ধুলো দেওয়ার কাজটা করে যাক।
মেয়র যা-ই বলুন, সেদিনের দর্শকরা যাই বলুুন, কলকাতার সিপি বলে দিয়েছেন,
'ভিড় ছিল তবে তা মাত্রাতিরিক্ত নয়। সবাই ভিতরে-বাইরে যাতায়াত করছিল। সিটের ওপরে কেউ দাঁড়ায়নি। সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনগুণ ভিড় হয়েছিল বলে যা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।'
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, অসুস্থ বোধ করার পরেও কেন অনুষ্ঠান থামিয়ে দিলেন না কেকে নিজে?
কেকে গান থামালে কি হত সেটা জানি না আমরা?
গায়িকা ইমন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘রোদে পুড়ে, দমবন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যেও অনেক সময়েই অনুষ্ঠান করতে হয় আমাদের। কিন্তু সব সময়ে শিল্পীর পক্ষে দমবন্ধ অবস্থাতেও গান থামিয়ে নেমে যাওয়া সম্ভব হয় না। অতীতে এমন করতে গিয়ে দেখেছি, তার পরে কী পরিস্থিতি হয়!’
ভাঙচুর হয়েছে। কেকে গান থামিয়ে দিলে আগুন জ্বলত। কেকে-কে থামাতে পারতেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তাঁরা কী করলেন? ফিরহাদ হাকিমের কথাটা মনে করাই আবার।
'অনুষ্ঠান করতে করতেই কেকে বুকে ব্যথার কথা বলছিলেন। কিন্তু দর্শকদের অনুরোধে গেয়ে যেতে হয়।'
অসুস্থতার কথা জেনেও যাঁরা শিল্পীকে গান গেয়ে যেতে বাধ্য করছিলেন, কেকে গান থামিয়ে দিলে তাঁরা কী করতেন?
একবার শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট তারকা অর্জুন রনতুঙ্গা বলেছিলেন, আমরা ক্রীতদাসের মতো। টাকা পাই, তাই বললে ঠাঠা গরমে সাহারা মরুভূমিতেও খেলতে হবে।'
যে কোনও পারফর্মারই তো তাই। সে কেকে হোন বা রূপঙ্কর। মান্না দে-র বিখ্যাত 'সে আমার ছোট বোন' গানটা মনে আছে তো?
-একদিন শহরের সেরা জলসা/সেদিন গলায় তার দারুন জ্বালা/তবুও শ্রোতারা তাকে দিল না ছুটি/শেষ গান গাইল সে পরে শেষ মালা/শিল্পের জন্য শিল্পী শুধু/এছাড়া নেই যে তার অন্য জীবন...।
অনেকে বলবেন, কেকে-র হার্টে নানা রকম সমস্যা ছিল। সেটা জানতেন না। তাই এই কাণ্ড। কলকাতার কী দোষ?
কোনও সন্দেহ নেই কেকে-র ম্যানেজার যথেষ্ট দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে, দমবন্ধ করা পরিবেশে আমরা ওঁকে গাইতে বাধ্য করেছি। সময়মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করিনি। তবু আমরা দায়ি নই?
ছাড়ুন তো ওসব। রূপঙ্করে বোর হয়ে গেলে প্রিয় টপিক তো আছেই। পার্টি-পলিটিক্স। এই পার্টির লোক হয়ে কেউ গাল পাড়ুন, কেউ ও পার্টির লোক হয়ে গাল পাড়ুন। এটায় তো আমরা ভারতসেরা। অন্য রাজ্যের লোকেরা পারে না। তাই আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। ওদের কথায় কান দেবেন না, চোখ দেবেন না। ভুলে যাবেন না গোখলের সেই বাণী, WHAT BENGAL THINKS TODAY, INDIA WILL THINK TOMORROW.
![]() |
| কেকে-র কফিনের সামনে স্ত্রী |
কেকে, বিশ্বাস করুন, শাসকের রক্তচোখের সামনে নতজানু কলকাতার মধ্যে কিন্তু আরেকটা কলকাতা আছে। প্রয়াত কবি, সেই কলকাতাকে দেখতে শিখিয়ে গেছেন।কেকে, আপনার মৃত্যু সেই কলকাতাকে অপরাধী করে দেয়। বিষণ্ণ করে। যন্ত্রণায় নীল করে।সেই কলকাতা লজ্জিত।সেই কলকাতা ক্ষমাপ্রার্থী।সেদিনের অনুষ্ঠানে কোন কুড়িটি গান গাইবেন, তার তালিকা বানিয়ে এনেছিলেন আপনি। পরের দিন নজরুল মঞ্চের মেঝেতে পড়ে থাকা সেই তালিকার পাশে নিঃশব্দে ফুলের তোড়া রেখে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে সেই কলকাতা।
কেকে, শুনুন সেই অন্য কলকাতার মনের কথাটা। ফেসবুকে সেই কথাটা লিখেছেন প্রখ্যাত ডাক্তার কুণাল সরকার।
'An Evening of pain and SHAME.যতটা দুঃখ। ততটাই লজ্জা।বেসামাল ভিড়।AC (এসি) বেহাল-ভীষণ গরম।মুখের উপর ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্প্রে করা।২ ঘণ্টার ওপর সময় নষ্ট করে তারপর শেষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।আমাদের ক্ষমা কর।'
আসুন না, এই অপরাধের পর আমরা একটু ভেতর থেকে নড়ে বসি। কোনও পার্টির লোক না হয়ে বাঙালি হই। কলকাতার মানুষ হই। পশ্চিমবাংলার নাগরিক হই। আয়নায় নিজেদের মুখটা দেখি। অসহিষ্ণু, অসংবেদনশীল, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পাকদণ্ডী বেয়ে আর কতটা নামার পরে আমাদের হুঁশ ফিরবে?
আসুন সবাই স্যালুট করি শিল্পী রূপঙ্কর বাগচির দুঃসাহসকে। তিনি ক্ষমা চাননি। নিজের করা একটি ভুল মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু 'এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ...এত ঘৃণা, এত আক্রোশ, এত বিরুদ্ধতা'-র মধ্যে দাঁড়িয়েও তিনি বলেছেন,
'বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানিং আরও বেশি করে বারবার মনে হয় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারত যে ভাবে তার শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্থ। শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফরমার যেন কঠিন খাদের ধারে এক অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একার কথা বলতে চাইনি। একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম।'
রূপঙ্কর তো সময়ের সবচেয়ে জরুরি কথাটা বলেছেন। এই কথাটাই তো সব বাঙালির কথা হওয়া উচিত। যে জাতি আত্মরক্ষা করতে চায় না তার বেঁচে থাকার অধিকারই তো নেই। পূর্বপুরুষ রক্তে অনুপস্থিত থাকলে কোনও জাতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।

































