![]() |
| কারগিল যুদ্ধ, ১৯৯৯ |
______________________________________
সেনাবাহিনীর ডাক্তার ছিলেন। অবসরের পর মেজর ইন্দ্রনীল চৌধুরী অক্লান্ত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে। সঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসের সাম্মানিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছের। আমার সঙ্গে পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে। লেখালেখির শখ বহু বছরের। তাঁর কিছু লেখা পরপর পাবেন 'যাচ্ছেতাই'-এ। মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত।
_________________________________
![]() |
| কারগিল স্মারক |
ভুলায়ে নাহি, ভুল সাকতা হ্যয় কোই,
ওহ্ ছোটি সি রাতেঁ, ওহ্ লম্বি কাহানী...
আমি ডাক্তারি পাশ করেছি ২৫ বছর আগে। নিজেকে ডাক্তার বলে মেনেছি আজ থেকে ২২ বছর আগে। দ্রাসে তখন 'অপারেশন বিজয়'। শত্রু হানা দিয়েছে বরফ ঢাকা পাহাড়ের চূড়ায়। দখল নিয়েছে রাস্তার, চুপিসারে। আমরা পৌঁছেছিলাম সেখানে সেনাদের বাঁচাতে। আমি আর্মি মেডিক্যাল কোরে একজন রক্ত টগবগে ক্যাপটেন। আমার কমান্ডিং অফিসারের ডাকে গেলাম দ্রাসে। আমি আর গ্যারী মানে রণ।
রণ আর আমি এক কলেজ থেকে পাশ করে আর্মিতে ঢুকেছি। আমার প্রতিবেশীরা যেটা প্রতিদিন আমাদের মনে করিয়ে দেন, ঠিক তাই, কিছু পয়সার জন্যে। কারণ আমার রাজ্যে তখন ডাক্তারদের পিএসসি হয়নি বছরের পর বছর। আমি আর রণ বাড়ির অর্থনৈতিক চাপে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি নিয়েছি। বাবার পাশে দাঁড়াব বলে।
রণ প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের ডাক্তার। আমি ইনফ্যানট্রির। আমরা এক তাঁবু ভাগ করে নিয়েছিলাম। দুজনার মাঝে ট্রাঙ্ক ছিল আমাদের খাবার টেবিল। যুদ্ধের সময়ে যে যার ছিটকে যেতাম। কখনো ব্যাটেলফিল্ড ডাক্তার, কখনও রেজিমেন্টের চিকিৎসক। রণকে তার প্যারাট্রুপার জওয়ান ও অফিসাররা সবাই ভালবাসতেন।
সারাক্ষণ গোলাগুলি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের। রক্ত, শুধু রক্ত। চাপ চাপ হবার আগেই কমপ্রেশন ব্যান্ডেজ বাঁধতে হবে। সেলাই করতে হবে। কখনও পাথরের পেছনে, কখনও কাঁধে ফেলে তাঁবুতে এনে, রেজিমেন্টাল এইড পোস্টে। চারিদিকে শুধু আগুনের ফুলকি। কারও দু'হাত উড়ে গেছে। কারও এক পা হাঁটু থেকে ঝুলছে। কমপ্রেশন ব্যান্ডেজ দেব নাকি পপ্লিটিয়াল আর্টারিতে সেলাই দেব নাকি আই ভি ফ্লুইড দেব? প্রেশার আমার সেলাইয়ের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে নামছে। কি করি? বিশ্বাস করুন জানতাম না কি করে বাঁচানো যায়। কিন্তু মনে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা ছিল। সব সময় মন বলত সব জওয়ান, সব অফিসার বাঁচুক।
![]() |
মনে শুধু আগুনের পরশমণি। ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়া। ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়ার খণ্ডবিখণ্ড দেহ দেখে আমরা ঠিক থাকতে পারিনি।
![]() |
একদিন ৭৫ জন আহত। তার মধ্যে দুজন যুদ্ধবন্দি। সবাই চায় সৌরভের মত আত্মোৎসর্গের সুযোগ পেতে। কী সাংঘাতিক টর্চার সহ্য করতে হয়েছে ওই বাচ্চা অফিসারকে! কী নির্মম! আমিও ফুটছি। রাগে গনগনে। কিন্তু মন বলল, ঠিক নয় পকাই। তুমি ডাক্তার সেটা কখনও ভুলে যেয়ো না। সেই তো। আমি সবার আগে ডাক্তার। আমি তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হিপোক্রিটাসের কাছে। আমি তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমার গুরুদের কাছে।
যে মানুষটি আজ আমার সামনে ভূলুন্ঠিত, পরাজিত, যন্ত্রনায়, ব্যথায়, গোঙানির আওয়াজ, তাকে ওরা স্নাইপার দিয়ে....না। অসম্ভব। পরাজিত মানুষের, আত্মসমর্পিত মানুষের, ডাক্তার ছাড়া কে আছে? না যে আত্মসমর্পন করেছে, রোগে, মৃত্যু শয্যায়, তাঁকে খুঁচিয়ে মারা আমার শিক্ষার পরিপন্থী। ওদের চিকিৎসা দিয়ে রাতের অন্ধকারে ছেড়ে দিয়ে এলাম।
আমি তো কখনও ভাবিনি আমি যুদ্ধ করব। আমি তো কখনও ভাবিনি আমি গুলি খুঁচিয়ে বার করব। তবু আর এক মিনিট সাহস রাখো, আর এক মিনিট ভাবো। তোমার ঐশ্বর্য, বীর্য, পারিশ্রমিকের চেয়ে বেশি টানে তোমার মাতৃভূমি। তোমার মা গো, মা।
![]() |
প্রতিদিন জঘন্য। প্রতিদিন বারুদের গন্ধ। প্রতিদিন একজন করে মায়ের কোলে ঢোলে পরছে। ক্যাপ্টেন
বিক্রম বাত্রা। এই তো। এইমাত্র ওয়াররুমে বলে যুদ্ধে গেছে...ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর...ফিরে এলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা। নিঃশব্দ। এই তো ওই জওয়ান যে কিছু দিন আগে বিয়ে করল। তাকে কত বললাম, এডমে থেকে যেতে। শুনল না। বলেছিল, ডাক্তারসাব, যুদ্ধে যাওয়া আমার শেষদিনের ধর্ম। শত্রু আমায় বিনাশ করতেই হবে। ফিরে এল সে। দুঘন্টা বাদে। নিথর দেহ। কপালে স্নাইপার গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। ভেঙে পড়েছিলাম।
![]() |
ওঁদের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে চপারে চড়িয়ে যখন ফিরে আসতাম শেষ রাতে, ওই চূড়ায় উঠে ক্যাপ্টেন কালিয়া বা লেফটেন্যান্ট কণাদ ভট্টাচার্যের স্নাইপার রাইফেল হাতে অথবা একে ৪৭ রাইফেলে বুলেটমালা লাগিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিতে মন চাইত। ওঁদের মতো পারলাম কই?
যেদিন ডাঃ বিজয় কুমার, ডাঃ রাজেশ অধাও, ডাঃ ভি ভি শর্মা সেনামেডেল পেলেন, সেই দিন টিভির সামনে দাঁড়িয়ে পেশী টানটান স্যালুট দিয়েছিলাম। আর কিছু তো ছিল না দেওয়ার মত।
![]() |
না দুনিয়া কি গম থা, না রিস্তে কি বন্ধন
বড়ি খুবসুরত থি ও জিন্দেগানি।
ইয়ে দৌলত ভি লে লো
ইয়ে সহরত্ ভি লে লো
ভালে ছিনলো মুজসে মেরি জওয়ানি
মাগর মুঝকো লৌটা দো বচপন কা শাওন।
ওহ্ কাগজ কি কষ্ঠী, ওহ্ বারিষ কা পানি...



.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)