লাল টি-শার্ট, গাঢ় নীল রঙের শর্টস, কালো জুতো পরা বাচ্চাটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল সৈকতের ভেজা বালিতে। নিথর মরদেহের ছবিটা তুলেছিলেন তুরস্কের ২৯ বছর বয়সী সাংবাদিক নিলুফার দেমির। জানা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে আসা একদল শরণার্থী তুরস্ক হয়ে গ্রিসের কস দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নৌকাডুবিতে ১২ জন মারা যান।এই লেখাটার সঙ্গে আয়লানের মৃত্যুর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তবু তার মৃত্যুর পরে বিভিন্ন জনের আঁকা প্রতিবাদ-চিত্রই যুক্ত করলাম। বেখাপ্পা মনে হবে না নিশ্চয়ই।৫ বছর বয়সী আয়লান কুর্দিও ছিল সেই দলে। শরনার্থীদের সমস্যার ছবিটা সারা দুনিয়াকে নতুন করে জানিয়ে দেয় ওই ছবি।
You may say I'm a dreamer, but I'm not the only one
-John Lenon
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
সভ্যতার।
মানুষের।
মনুষ্যত্বের।
বাতাসে ধূলিকণা বাড়ে। গ্রিনহাউস এফেক্ট। মরুদেশে বরফের চাঁই গলে। বিশ্ব উষ্ণায়ন। সমুদ্রে বেড়ে চলে জলতল। গ্যাসচেম্বারে থাকে আট থেকে আশি।

এপিটাফ
লেখা হয়
কনকনে রাতে।
এপিটাফ
লেখা হয়
গনগনে তাপে।
দায় ঝেড়ে ফেলা রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রনেতাই তবু বিশল্যকরণী। গুণগানে মাতে সুইমিং পুলে বাঁচা বিলাসী জীবন। পপুলেশন না কমলে কিস্যু হবে না, ছকে দেয় বিজ্ঞ সমাধান।
এপিটাফ
লেখা হয়
স্পেস সেন্টারে।
এপিটাফ
লেখা হয়
খনির গভীরে।
অষ্টপ্রহর চলে মুক্ত বাণিজ্যের উদ্বাহু নাম সংকীর্তন। ভিসা বাতিল। বাণিজ্যে প্রাচীর। মলদ্বীপে রিফ্রেশিং ভ্যাকেশন ট্রিপ। দেনার পাহাড় কাঁধে বিষপাত্রে মুক্তি খোঁজে কৃষকের দল। রোজ গড়ে তেত্রিশ কৃষকের লাশ বয় দেশ।

এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
কৃষির।
কৃষকের।
ভাতের।
ধনী আর গরিবের ফাঁক বাড়ে মিনিটে মিনিটে। দুনিয়ার ধনীদের তালিকায় কটা নাম ভারতীয়, খুঁজে ফেরে উৎসুক চোখ। দশের হাতে আশি আর ষাটের হাতে পাঁচ ভাগ সম্পদের দখল। দুনিয়ার ছবিটাও ভিন্ন নয় কিছু।

এপিটাফ
লেখা হয়
মিঠি নদীর পারে।
এপিটাফ
লেখা হয়
আফ্রিকার ঘরে।
পাতে ভাত নেই। হাতে কাজ নেই। ধর্ম তো আছে। ভিন ধর্মীও মজুত। মাতো তবে ধর্মযুদ্ধে। রক্তে রক্তে দেশে দেশে লেখা চলে জীবনের এপিটাফ।
এপিটাফ
লেখা হয়
ক্রুশবিদ্ধ যীশুর।
এপিটাফ
লেখা হয়
শ্রীকৃষ্ণের, মহম্মদের।
ঘৃণা পোঁতা হয় ঘরে ঘরে মাইনের মত। বিদ্বেষের বিষ ছড়ায় মগজে মগজে। হিন্দু-মুসলমান, সাদা-কালো, পূর্ব-পশ্চিম, খ্রিস্টান-ইসলাম। টুইন টাওয়ারও মাটিতে গড়ায় বাবরি মসজিদ বা বামিয়ান বুদ্ধের মতো।

এপিটাফ
লেখা হয়
সিরিয়া, ইরাকে।
এপিটাফ
লেখা হয়
করাচি-অযোধ্যায়।

হঠাৎ
করোনা আসে।
দেশ-দুনিয়া
কাঁপল ত্রাসে।
লকডাউন।
শুরু লকডাইন।
দেশে দেশে
লকডাউন।
ব্রহ্মাণ্ড ঢুঁড়ে ফেলা মানুষের দল ছোট এক ভাইরাসে কত নাজেহাল! করোনার কেরামতি ফাঁস করে দেয় কেরামতি করা এই মানুষের দল কত অসহায় মৃত্যুর কাছে।
এপিটাফ
লেখা চলে
রোজ রাত্তিরে।
এপিটাফ
লেখা চলে
পাখি ডাকা ভোরে।


চোখের সামনে
বিবস্ত্র সভ্যতা।
মুখ ঢাকা
রং-সাজে।
শরীরের
খাঁজে ভাঁজে
দগদগে ঘা।
লকডাউন
আলো ফেলে
বলে যায়,
আয় দেখে যা।
ছেলে কাঁধে হেঁটে যাওয়া ঘরের পথে। সঙ্গীনির কোলেও সন্তান। বহু পথ হেঁটে এসে ঘরের গোড়ায় মরে বছর ছয়ের মেয়ে। ঘর কদ্দূর? কত মাইল? একশো? দুশো? নাকি হাজার? প্রশ্ন আছে। উত্তরে পাহাড়।

সভ্যতার
এপিটাফ হয়ে
থেকে যায়
পাহাড়ের সারি।
বাড়িতে ছেলে-বউ। ভাত নেই পাতে। দূর কোনও শহরে মধ্যরাতে বাবা আত্মঘাতী ঘোর অনুতাপে।
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
শ্রমের।
শ্রমিকের।
কারও কি চোখ নেই? মন নেই কারও? সরকার ননসেন্স! নেতারা ব্যস্ত শুধু ঘুষের হিসেবে! সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ঝড় ওঠে!
ঝড় থামে সেলেবের হাতার দাপটে! হাতা ঠিক ক'বার ঘোরালে হবে জব্বর খাবার! ঠিক ওদের মতন! পোষ্যের গায়ে কোন হাত আগে রাখে দেখি! কী সার দেয় ওরা ফুলভরা গাছের গোড়ায়? সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সেলেবের পোস্টেই মেতে থাকা ভাল।

এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
নৈতিকতার।
বিশ্বাসের।
সত্যের।
লকডাউন উঠে যায়। ট্রেন চলে। বাস চলে। উড়ছে বিমান। দোকানে কেনাকাটা। রাতে খাটে উদ্দাম সঙ্গম। চলতেই থাকে। চলতেই থাকে। মগজের লকডাউন শুধু ওঠে না।
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
প্রেমের।
প্রেমিকের।
স্বপ্নের।
মাস্কে মুখ ঢাকা সভ্যতার।

মুশকিল একটাই, স্বপ্ন মার খেয়ে পড়ে যায়। মরে না। দেশে দেশে গেয়ে ফেরে লালনের মতো। নাপাম বোমায় ঝলসানো মেয়েটা মাদ্রিদের রাস্তায় কিংবা মণিপুরে চিত্কার করে জীবনের গান গায়।




.jpeg)

